খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ আদায়ে এজেন্ট নিয়োগে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ’ এ নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে।
সচিবালয়ে রবিবার অনুষ্ঠিত ‘ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ আদায় ও অবলোপন’ সংক্রান্ত এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের বিষয়ে ড. এম আসলাম আলম বলেন, ‘দেশের ব্যাংকিং খাতে বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ অনেক বেড়ে গেছে এবং এটা বাড়ছেই। এর বিপরীতে খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিমাণ খুবই কম ও এটা সন্তোষজনক নয়।’
‘বিদ্যমান পদ্ধতিতে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলো ব্যর্থ হচ্ছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে খেলাপি ঋণ আদায়ের যে পদ্ধতি রয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে— গ্রাহকের সঙ্গে যোগাযোগ করা ও তাগিদ দেওয়া, অর্থ ঋণ আদালতে মামলা করা, বন্ধকী সম্পদ বিক্রি ইত্যাদি। নানা কারণে প্রচলিত এ পদ্ধতির মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।’
ব্যাংক সচিব বলেন, ‘এ কারণে বিকল্প ব্যবস্থায় বা এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য একটি আইনি কাঠামো বা নীতিমালা তৈরি করা হবে। আমরা উদ্যোগ নিলেও বাংলাদেশ ব্যাংকই এটা করবে।’
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘এজেন্টের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্যোগটি আগে একবার নেওয়া হলেও সেটা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু উদ্যোগটি কেন ব্যর্থ হয়েছিল বৈঠকে আমরা সেটা পর্যালোচনা করেছি। কিছু কেস হিস্ট্রিও পর্যালোচনা করা হয়েছে।’
ব্যাংক সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক সেই সময় ব্যাংকগুলোকে শুধু জানিয়ে দিয়েছিল যে, খেলাপি ঋণ আদায়ে এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া যাবে। কিন্তু এ সংক্রান্ত কোনো গাইডলাইন বা নীতিমালা তখন ছিল না। ব্যাংকগুলো নিজেরাই নিজেদের মতো করে একটি নীতিমালা তৈরি করে নিয়েছিল। ফলে এতে কিছু ঘাটতি ছিল। যে কারণে সেটা ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু এবার একটা নীতিমালা তৈরি করে দেওয়া হবে।’ ‘এ বিষয়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করা হবে’ বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৪ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে চার রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক (সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী) ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ হচ্ছে ২২ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা; ৩৯টি বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ২২ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা; ৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকের ৭ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা এবং ১১টি বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ হচ্ছে ১ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা।
অন্যদিকে একই সময় (মার্চ ২০১৫) পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট কু-ঋণ (আদায়যোগ্য নয়) অবলোপন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ২৫২ কোটি টাকা।