খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫
কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে চামড়ায় সাড়ে আট শ’ কোটি টাকারও বেশি লেনদেন হচ্ছে। যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় দেড় শ’ কোটি টাকা কম। অথচ গত বারের তুলনায় এবার চামড়ার সরবরাহ বেশি, কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় কমেছে টাকার পরিমাণ।
চামড়া সংশ্লিষ্ট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য মিলেছে। গতবারের তুলনায় এবার লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাত লাখ পিস বেশি চামড়ার। কিন্তু বাড়তি চামড়ার পরিমাণ তিন থেকে চার লাখ হতে পারে বলে ধারণা করছেন চামড়া খাত সংশ্লিষ্টরা।
ঈদের আগে চামড়ার ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ৫৫ লাখ গরুর চামড়া এবং ২০ লাখ ছাগলের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার কথা জানানো হয়েছিল।
গরুর চামড়ার ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার সবটুকু পূরণ হবে না বলে জানিয়েছেন একজন ব্যবসায়ী নেতা। তবে ছাগলের চামড়ার ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে মনে করছেন।
গত বছর কোরবানির ঈদে গরুর চামড়া সংগ্রহ হয়েছিল ৪৮ লাখ। এবার সেটা ৫০ লাখের কিছু বেশি আসবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, প্রতি বছরই চামড়ার পরিমাণ বাড়ছে। এবার আমরা যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলাম তার সবটুকু পাব না। তবে ৫০ লাখের বেশি চামড়া আসবে বলে আমরা মনে করছি।
হাজারীবাগের নিশাদ ট্যানারির মালিক মফিজুল্লাহ নসু জানান, চলতি মৌসুমে গরুর চামড়া চার-পাঁচ শ’ থেকে শুরু করে আড়াই হাজারের উপরে পর্যন্ত দাম গেছে। সেই হিসাবে গড়ে প্রতিটি চামড়ার দাম ধরতে পারেন ১৬ শ’ টাকা। এ ছাড়া ছাগলের চামড়ার দাম পড়ে গেছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা।
মফিজুল্লার দেওয়া হিসেবে অনুযায়ী, ১৬ শ’ টাকা দরে আনুমানিক ৫২ লাখ গরুর চামড়া এবং ১৪০ টাকা দরে ২০ লাখ ছাগলের চামড়ার দাম আসে যথাক্রমে ৮৩২ কোটি এবং ২৮ কোটি টাকা।
ঈদুল আজহায় তিন দিন পর্যন্ত কোরবানি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি ঈদের প্রথম দিনেই হয়। দুই দিনের চামড়ার কেনা-বেচার চিত্র অনুমান করে এই ধারণার কথা জানিয়েছেন শাখাওয়াত হোসেন।
ঈদের সময় ভালো চামড়া পাওয়া যায়। তাই ট্যানারি মালিকরা সারা বছর এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করেন। কিন্তু এবার চিত্র উল্টো। ইউরোপসহ অন্যান্য চামড়ার চাহিদা থাকা দেশগুলোতে গত কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ থেকে চামড়া রফতানি আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। গুদামে পড়ে রয়েছে আগের চামড়া। কোরবানির ঈদ আসলেও গুদামে চামড়া পড়ে থাকায় ব্যবসায়ীদের আকর্ষণ কম।
সাধারণত ইউরোপের দেশগুলোতে প্রথম গ্রেডের চামড়া রফতানি হয়। দ্বিতীয় গ্রেড বেশি টানে চীনে। এই দেশগুলোতে গত বছরের তুলনায় অর্ধেকের বেশি রফতানি করতে পারেননি বলে দাবি ব্যবসায়ীদের।
হাজারীবাগের কালাম-ভুলুয়া গলিতে ওই এলাকার প্রায় অর্ধেকের মতো চামড়া রফতানি হওয়া প্রতিষ্ঠানের অবস্থান। গলির মুখে থাকা মোড়টির নাম সিটিএল ট্যানারি মোড়। এখানে চামড়ার কেমিকেলের ব্যবসা করেন আলতাব হোসেন কামাল।
তিনি দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রতিদিন কয়েক ট্রাক এক্সপোর্ট চামড়ার ট্রাক এই গলি থেকে বের হতো। গত ছয় মাসে তার অর্ধেক ট্রাকেরও দেখা মেলেনি।
হাজারীবাগের বিভিন্ন ট্যানারিতে সারা বছর চামড়া সরবরাহকারী মোহাম্মদ মিলন বলেন, ‘বছরে এই মৌসুমটির (কোরবানির ঈদ) জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু এইবার বেশি সুবিধা করতে পারি নাই। লাভ যাবে সব ট্যানারি মালিকদের পকেটে। তারা গোডাউনে মাল ফেলে রেখে পরে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে। আমাদের তো প্রতিদিনের মাল দিয়ে দিতে হয়।’