Thu. Jun 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫
12মিনায় পদ পিস্ট হয়ে কতজন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন? এ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। সৌদি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল ৩ বাংলাদেশী নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে। অথচ বিভিন্ন জেলা থেকে যে খবর আসছে তাতে নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি। এছাড়া মিনা দুর্ঘটনার পর ৯৮ বাংলাদেশী নিখোঁজ রয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্র বলে আসছিল। দুর্ঘটনার পর তারা তাদের তাঁবুতে ফিরে আসেননি। গতকাল সৌদি কর্তৃপক্ষ নিহত ৭৬৯ হাজীর মধ্যে ৬৫০ জনের ছবি প্রকাশ করে। এর মধ্যে বাংলাদেশী রয়েছেন ৩ জন। জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ কথা জানায়। নিহত ৩ বাংলাদেশীর মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- খুলনার মো. শহীদুল ইসলাম আর ঢাকার সাভারের আমিনুর রহমান। অন্য আরেকজন হাজীকে বাংলাদেশী বলে শনাক্ত করা হলেও তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সাভারের আমিনুরকে নিয়েও দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে যাকে সাভারের আমিনুর বলে উল্লেখ করা হয়েছে- তিনি আসলে সাভারের আমিনুর নন। তার বাড়ি সাভার কিনা তাও নিশ্চিত নয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হলেও পরে সৌদি আরবের বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিস জানিয়েছে, যার নাম আমিনুর বলে জানানো হয়েছিল তার পরিচয় সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কনস্যুলেট জেনারেল অফিস বলেছে, সাভার থেকে হজ করতে আসা আমিনুর রহমানের এক আত্মীয় ছবি দেখে নিশ্চিত করেছেন নিহত ব্যক্তি আমিনুর রহমান নন। অন্যদিকে আরেক হাজী জামালপুরের ফিরোজা খানমের পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু তার কোন ছবি প্রকাশ করা হয়নি। অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশা করছে, সৌদি কর্তৃপক্ষ শিগগিরই অন্য হাজীদের ছবি প্রকাশ করতে পারে। এখন পর্যন্ত যে তথ্য মিলেছে তাতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন জামালপুর ও সুনামগঞ্জের দুজন নারী। ফেনীর দুই ভাই। দিনাজপুরের একজন।
শরীয়তপুরের এক ব্যক্তি ও এক দম্পতি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একজন। এর মধ্যে ফিরোজা খানমের বাড়ি জামালপুর। সুনামগঞ্জের জুলিয়া হুদা। ফেনীর তাহেরা বেগম ও তার ভাই নূরনবী। শুক্রবার দিনাজপুর জেলার সেতাবগঞ্জ উপজেলার কামাল হোসেন বলেছেন, তার পিতা কুরমাত আলী (৭০) মিনায় মারা গেছেন। পরিবারের অনুমতি নিয়ে তার পিতাকে সৌদি আরবেই দাফন করা হয়েছে। শরীয়তপুরের নিহত দম্পতি হলেন আবদুর রাজ্জাক আকন্দ (৬৫) ও তার স্ত্রী হাসিনা আকতার। এর মধ্যে রাজ্জাক আকন্দ সাবেক জেল সুপারিনটেন্ডেন্ট। তার পরিবারের বসবাস ঢাকার ধানমন্ডিতে। শরীয়তপুরের নিহত অন্যজন হলেন গোসাইরহাট উপজেলার আহমেদ আলী মৃধা (৬৫)। গতকাল পর্যন্ত নিহত বা আহত বাংলাদেশীর আনুষ্ঠানিক কোন সংখ্যা জানাতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে মিনার ঘটনায় গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুসন্ধান কাজ শুরু করেছে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস। তারা অনুসন্ধান করে দেখবে প“লিত হয়ে নিহত ৭৬৯ হাজীর মধ্যে কতজন বাংলাদেশী রয়েছেন।
ফিরোজা খানমের লাশ পাচ্ছে না পরিবার
জামালপুরের হাজী ফিরোজা খানম (৬০)। তিনি বৃহস্পতিবারই মারা যান। ওইদিনই তার ছেলে মোজাহারুল ইসলাম জানান তিনি নিহত হয়েছেন। তার মৃতদেহ নিয়ে গেছে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ। কিন্তু গতকাল পরিবার জানিয়েছে, তারা এখন নিহত ফিরোজাকে খুঁজে পাচ্ছে না। সাকুরা হজ এজেন্সির মাধ্যমে গত ২১শে সেপ্টেম্বর জামালপুরের হাটচন্দ্রা এলাকার অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা ফিরোজা খান, তার বড় ছেলে মোজাহারুল ইসলাম ও তার ভাগনে শফিউল ইসলাম সৌদি আরবে যান হজ করতে। বৃহস্পতিবার তিনি মিনায় প“লিত হয়ে মারাত্মক আহত হন। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সৌদি আরবের একটি হাসপাতালে। সেখানে কর্তব্যরত এক চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত হন তার ছেলে ও ভাগনে। নিহত ফিরোজার ছোট ছেলে খন্দকার ফরিদুল ইসলাম বলেছেন, মায়ের লাশ সৌদি পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর আর তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। হজ এজেন্সিরও কোন সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। তারা এখন সব স্থানে মায়ের লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। নিহতের বড় ছেলে মোজাহারুল এ ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
৬৫০ জনের ছবি প্রকাশ, বাংলাদেশী ৩
মিনায় প“লিত হয়ে মারা যাওয়া ৭৬৯ হাজির মধ্যে ৬৫০ জনের ছবি প্রকাশ করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে তিনজন বাংলাদেশী রয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে। জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিহত বাংলাদেশী তিনজনের মধ্যে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন খুলনার মো. শহীদুল ইসলাম আর ঢাকার সাভারের আমিনুর রহমান। যদিও পরে আমিনুরের ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেয়া হয়। অন্য আরেকজন পুরুষ হাজীকে বাংলাদেশী বলে শনাক্ত করা হলেও তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মিনায় প“লনের শিকার হয়ে থাকতে পারেন এমন বাংলাদেশী হাজীদের ছবি মক্কায় বাংলাদেশ হজ মিশনে টানিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে হজ এজেন্ট, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনরা তাদের শনাক্ত করতে পারেন। মেডিক্যাল দলগুলো মক্কার বিভিন্ন হাসপাতালে কাজ করছে ও নিখোঁজ হাজীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে। রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাস ও জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল হজ মিশনের সঙ্গে মিলে কাজ করে যাচ্ছে। নিখোঁজ হাজীদের বিষয়ে রিপোর্ট করতে অন্য হাজী, তাদের সঙ্গী, আত্মীয়স্বজন, হজ গাইড ও এজেন্টদের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে।
আমাদের ফেনী প্রতিনিধি জানান, সোনাগাজী উপজেলার বগাদানা ইউনিয়নের নদনা গ্রামের কামাল উদ্দিন মুন্সী বাড়ির শামছুল হুদার ছেলে নুর নবী মিন্টু ও তার মেয়ে তাহেরা বেগম নিহত হয়েছেন। তাহেরার ছেলে সাইফুদ্দিন সুমন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, মা ও মামাকে এক সঙ্গে হারিয়ে পুরো পরিবার শোকাহত। সৌদি আরব থেকে হজ পালন করা অবস্থায় তাহেরার মেজ ছেলে ইমাম উদ্দিন মা ও মামার মৃত্যুর খবরটি পরিবারকে নিশ্চিত করেন বলে সুমন জানান। ইমাম উদ্দিনের পরিচালিত হজ এজেন্সি ‘দি পদ্মা ইন্টারন্যাশনাল হজ কাফেলা’ থেকে গত ১লা সেপ্টেম্বর তিনি, মা তাহেরা বেগম, মামা নুর নবী মিন্টুসহ একাধিক স্বজন হজ করতে সৌদি আরব গিয়েছিলো। তাহেরা ও মিন্টুর মতো এ উপজেলার সুজাপুর গ্রামের আবদুর রব, নতুন বাড়ির বেলায়েত হোসেনের স্ত্রী নুরজাহানও প“লিত হয়ে মারা যান। এছাড়াও এ উপজেলার চরগণেশ গ্রামের এজহারুল হকের স্ত্রী ফাতেমা আক্তারসহ ০৯৯ নম্বর মোয়ালেম্মের ১৪ জন হাজী নিখোঁজ রয়েছে বলে দাবি করেছে নিখোঁজ পরিবারের স্বজনরা। এছাড়া, দাগনভূঞা উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের আবুল কাশেম (ফেনী গার্লস স্কুলের শিক্ষক), পরশুরামের চিথলিয়া গ্রামের খালেদা বেগম, সদর উপজেলার লেমুয়া ইউনিয়নের ওবায়দুল হকের ছেলে জসিম উদ্দিন নিখোঁজ রয়েছেন।
শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, শরীয়তপুর জেলার ৩ হাজীর মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন- জাজিরা উপজেলার জব্বার আকনকান্দি গ্রামের এমএ রাজ্জাক আকন্দ (৬৫), তার স্ত্রী হাসিনা আকতার (৫৫) ও গোসাইরহাট উপজেলার চরধিপুর গ্রামের আহম্মেদ আলী মৃধা (৬৫)। এমএ রাজ্জাক আকন্দ ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেল সুপার। চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি কাশিমপুর কারাগার থেকে গত বছর অবসরে যান। এরপর থেকে তিনি পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একজন পরামর্শক হিসেবে কাজে যোগদান করেন। তিনি ঢাকার ধানমন্ডি এলাকায় বসবাস করতেন। সেখান থেকে দুই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি হজ করতে গিয়েছিলেন। বর্তমানে ছোট স্ত্রী আফসানা আকতার বেঁচে আছেন এবং তিনি মক্কাতে রয়েছেন। জাজিরা আকনকান্দি গ্রামের নিহত রাজ্জাক আকন্দ ও হাসিনা আক্তারের ছেলে ডাক্তার রুবায়েত আদনান তাদের বাবা-মায়ের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তাদের বাড়িতে চলছে আহাজারি। আত্মীয়স্বজনরা খবর পেয়ে বাড়িতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ে। এলাকার শত শত মানুষ খবর পেয়ে বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছে। এদিকে আহম্মেদ আলী মৃধার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন গোসাইরহাট উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেওয়ান। আহম্মেদ আলী মৃধা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। হাজীর মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সেখানেও এলাকার শত শত লোক খবর পেয়ে বাড়িতে ভিড় জমিয়েছে। তার বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
গোসাইরহাট উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেওয়ান বলেন, আমাদের এলাকার আহম্মেদ আলী মৃধা গত বৃহস্পতিবার মক্কার মিনায় প“লিত হয়ে মারা গেছে। এ সংবাদে আমাদের পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, সৌদি আরবের মিনায় প“লিত হয়ে মুন্সীগঞ্জের ১ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সৌদি আরব থেকে স্বজনদের কাছে এ মৃত্যুর খবর আসে। নিহত হাজী হলেন- মুন্সীগঞ্জ শহরের মাঠপাড়া গ্রামের গৃহবধূ আরজু (৫৫)। নিহত আরজুর স্বামী শহরের মাঠপাড়া গ্রামের মমতাজ কাশেম খান দুলাল ইসলামিয়া কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এমডি। তিনি প“লিত হয়ে আহত হয়েছেন।
মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জেলা যুবদলের সভাপতি মাঠপাড়া গ্রামের তারিক কাশেম খান মুকুল জানান, গত ১৬ই আগস্ট তার ভাই মমতাজ কাশেম খান দুলাল ভাবী আরজুকে নিয়ে হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরব যান। বুধবার মিনায় প“লিত হয়ে ভাবী মারা যান এবং ভাই আহত হন। বৃহস্পতিবার দুপুরে বড় বোন স্বপ্নার মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঢাকা ও মুন্সীগঞ্জের বাড়ির আত্মীয়স্বজনদের ভাবীর মৃত্যুর খবর জানানো হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে জানান, মিনায় ময়মনসিংহের গৌরীপুরের আবুল হাশিম মাস্টার (৬০) নামে এক হাজীর মৃত্যু হয়েছে। সৌদি আরবের মিনায় ‘শয়তান স্তম্ভে’ পাথর ছোড়া শেষে ফেরার পথে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টার দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। তিনি উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি পরিবার পরিজন নিয়ে গৌরীপুর পৌর শহরের কালিপুর মধ্যতরফ (ছয়গণ্ডা) এলাকায় নিজ বাসায় বসবাস করছিলেন। তিনি রামকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক ছিলেন। নিহত আবুল হাশিম মাস্টারের ছেলে মো. ফারুক হোসেন তার বাবার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তাদের বাড়িতে চলছে এখন শোকের মাতম। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্বজনদের আহাজারিতে স্তব্ধ হয়ে গেছে পুরো এলাকা। আত্মীয়স্বজনরা খবর পেয়ে বাড়িতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত হাজী আবুল হাশিমের হাজী শনাক্তকরণ নম্বর-১৩৪০২৮০। আর পাসপোর্ট নম্বর বই ০২৭৪৯৪১। তিনি তিন ছেলে ও চার মেয়ের জনক। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়স্বজনসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। রামকৃষ্ণপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে বিলীন ঈদের আনন্দ। গোটা পরিবেশ থমথমে। উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগের চাদরে ঘিরে রেখেছে গোটা মহল্লার পরিবেশ। কান্না আর আহাজারিতে সৃষ্টি হয়েছে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। নিহত হাজী আবুল হাশিম মাস্টারের হজসঙ্গী প্রতিবেশী এডভোকেট নূর মোহাম্মদ ফকির প্রথমে ফোনে তার মৃত্যুর খবরটি পরিবারের সদস্যসহ অন্যদের জানান। তিনি বলেন, এতবড় দুর্ঘটনার পর মিনায় বিরাজ করছে চরম ভীতিকর পরিবেশ। মসজিদুল হারামে মরহুমের জানাজা শেষে মক্কায় জান্নাতুল মোয়াল্লায় তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। পৌরসভার কাউন্সিলর প্রতিবেশী মো. সাদেকুর রহমান বলেন, আমাদের স্মৃতিতে চির অম্লান হয়ে থাকবেন বিদায়ী মানুষটি। নিহত হাজী আবুল হাশিম খুব ভাল লোক ছিলেন।
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, সৌদি আরবের মিনায় স্ত্রীকে বাঁচাতে গিয়েই প“লিত হন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার বাদৈর ইউনিয়নের মান্দারপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়ার গোলাম মোস্তফা খালেক (৫৫)। রেলওয়ের টেলিকম বিভাগের এই কর্মচারী চাকরি জীবন থেকে অবসরে আসার প্রায় ১৩ মাস পর স্ত্রী রওশন আরা মৃধা (৪৫)কে নিয়ে হজ করতে যান। বনানীর সাকের ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস-এর মাধ্যমে গত ২১শে আগস্ট তারা হজ পালনে যান। গোলাম মোস্তফার ছেলে ইয়াছিন জানান, গত ২৪শে সেপ্টেম্বর বিকালে মোয়াল্লেম সাইফুল ইসলামের মাধ্যমে তার পিতা মারা গেছেন বলে খবর পান। তিনি বলেন, আম্মাকে সেইভ করতে গিয়েই আব্বা মারা গেছেন। আব্বা পড়ে যাওয়ার পরই আম্মা আব্বাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। তখন তিনি পায়ে ব্যথা পান। গোলাম মোস্তফার পরিবার ঢাকার আশকোনায় বসবাস করেন। গ্রামে তাদের আত্মীয়স্বজনরা রয়েছেন। ইয়াছিন জানান, তাদের মায়ের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই পরিবারের সবাই কান্নাকাটিতে ভেঙে পড়েন। খবর পেয়ে আত্মীয়স্বজনরা আসছেন সান্ত্বনা দিতে। ঢাকার বাসায় দোয়া, কোরআন খতম আদায় করা হচ্ছে। গ্রামের বাড়িতেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গোলাম মোস্তফার ২ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে।
কুলাউড়া প্রতিনিধি জানান, কুলাউড়া পৌরসভার উত্তরবাজারের বাসিন্দা মহিব উদ্দিন আহমদ, তার স্ত্রী ও পুত্রসহ পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরব যান। মিনা ট্র্যাজেডির দিন থেকে তারা সপরিবারে নিখোঁজ রয়েছেন। শহরের উত্তরবাজার জামে মসজিদে ঈদের জামাতে তাদের জন্য বিশেষ মোনাজাতও করা হয়। এদিকে গত শনিবার অসুস্থতাজনিত কারণে আরেক হাজীর মৃত্যু হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানান, শহরের উত্তরবাজারের বাসিন্দা মহিব উদ্দিন আহমদ (৭০), তার স্ত্রী রাবিয়া বেগম (৬৫) ও তাদের পুত্র জালাল উদ্দিন আহমদ মনি (৩৮) পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরব যান। মিনা ট্র্যাজেডির দিন থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছেন। তারা সৌদি আরব থেকে যে টেলিফোন নম্বরে তাদের আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলতেন তা বন্ধ রয়েছে। এখনও পর্যন্ত তাদের কোন আত্মীয়স্বজন কিংবা স্থানীয় লোকজন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। এদিকে ঈদের দিন নিখোঁজ এই পরিবারের জন্য উত্তরবাজারস্থ ঈদের জামাতে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে পাসপোর্ট নাম্বার ও ছবিসহ সৌদি আরবস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করা হয়েছে। দূতাবাস থেকে পরিবারকে কোন কিছু জানানো হয়নি বলে নিখোঁজদের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে। এদিকে গত ২৬শে সেপ্টেম্বর শনিবার হজ পালন শেষে সোনা মিয়া (৭০) নামে এক হাজী সৌদি আরবে হজ মহল্লায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তার বাড়ি কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের চকের গ্রামে। ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ ও ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ছয়ফুল মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করেছেন।
স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, সৌদি আরবের মিনায় বৃহস্পতিবার প“লিত হয়ে সাভার পৌর কাউন্সিলর আমিনুর রহমান (৪৭) ও তার সহধর্মিণী আলেমা বেগম (৪৩) নিখোঁজ হন। গতকাল পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আমিনুর রহমান মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে আমিনুর রহমানের ছোট ছেলে আতিকুর রহমান আসিফ বলেন, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বাবা মারা যাওয়ার খবর প্রচার করায় আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। কাতলাপুরের বাড়িতে লোকজন এসে ভিড় করতে শুরু করে।
তিনি বলেন, বাবার সঙ্গে হজে যায় সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী হায়দার, যুবলীগ নেতা সোহেল রানা, সাভার এনাম মেডিক্যালের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম।
সোহেল রানার সঙ্গে বিকালে ফোনে কথা হয় জানিয়ে আতিকুর রহমান বলেন, বাবা ও মা। হতাহতদের মধ্যে নেই। গতকাল তার বাবার মরদেহ উদ্ধারের সংবাদ পেয়ে সোহেল রানা তা শনাক্ত করতে গেলে দেখেন আমিনুর রহমান নয় ওটা অন্য ব্যক্তির মরদেহ।
আমিনুর রহমান আগেও হজ পালন করেছেন। এবার গিয়েছিলেন সস্ত্রীক। তার হাজী শনাক্তকরণ নম্বর-০২৩৫০৯৫। আর পাসপোর্ট নম্বর- বিই০৬১২৯৫০। আলেমা বেগমের হাজী শনাক্তকরণ নম্বর-০২৩৫০৯৬, আর পাসপোর্ট নম্বর- এএফ৩৫৪১৮৭৫। তারা দি সিটি ট্রাভেলসের মাধ্যমে হজ পালন করতে গিয়েছিলেন।