খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৫
দীর্ঘদিন ঝুঁলে থাকা ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা হতে পারে ঈদের পর। সিটি করপোরেশন দুইভাগ হওয়ায় প্রথমবারের মতো ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ মহানগরের আলাদা দুটি কমিটি করার প্রস্তুতিও রয়েছে। কমিটি চূড়ান্ত করতে ঢাকা উত্তরে ফারুক খান ও দক্ষিণে আব্দুর রাজ্জাককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
দুই মহানগরের নতুন নেতৃত্বে বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে। এদের মধ্যে ঢাকা উত্তরে এ কে এম রহমতউল্লাহ, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আসলামুল হক আসলাম, সাদেক খানের নাম আলোচনায় রয়েছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এমএ আজিজ, মুকুল চৌধুরী, হাজী সেলিম, শাহে আলম মুরাদের নাম শোনা যাচ্ছে।
২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। ওই দিন প্রথম অধিবেশন শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনে বলা হয়েছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। সম্মেলনের দুই বছর নয় মাস পার হলেও এখনো ঘোষণা করা হয়নি নগর কমিটি।
রাজধানীর ৪৯টি থানা, ১০৩টি ওয়ার্ড ও ১৭টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ সম্মেলন পর্যায়ক্রমে শেষ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো থানা-ওয়ার্ড-ইউনিয়ন কমিটি ঘোষিত হয়নি। এর মধ্যে ডেমরা, শ্যামপুর, কদমতলী ও যাত্রাবাড়ী বাদে মহানগরের সব থানা, ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ হলেও মহানগর কমিটি না হওয়ায় সেগুলোর কমিটি গঠন করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মহানগরের কয়েকজন নেতা। এ নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে মহানগরের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ একাধিক নেতা বলেন, নতুন কমিটি গঠনে এবার ব্যক্তি প্রভাব কাজ করবে না। কমিটির শীর্ষ নেতৃত্ব তৃণমূল থেকেও আসতে পারে।
মহানগর কমিটি গঠনের সঙ্গে জড়িত নেতারা জানিয়েছেন, আগের কমিটির অনেকেই বাদ পড়তে পারেন। ঢাকা উত্তরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে সম্ভাব্য নেতাদের নামের তালিকা দলের সভাপতির কাছে জমা দিয়েছেন ফারুক খান। দক্ষিণের জন্য একই রকম তালিকা জমা দিয়েছেন কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক।
জানতে চাইলে ফারুক খান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের যে দায়িত্ব দিয়েছিলেন আমরা তা পালন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে আমরা নগরের প্রস্তাবিত কমিটির খসড়া তৈরি করে কয়েকদিন আগে তার কাছে পাঠিয়েছি। ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের খসড়া কমিটির তালিকাও প্রায় চূড়ান্ত। ঈদের আগেই তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া হবে’।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা আছে। থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলো প্রায় চূড়ান্ত। এখনও কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সফর শেষে দেশে ফিরলেই খসড়া কমিটিগুলো জমা দেওয়া হবে।
মহানগর কমিটি নিয়ে হঠাৎ নড়েচড়ে বসেছেন বর্তমান অবিভক্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। গত ১২ সেপ্টেম্বর সকালে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বৈঠকে বসেন মহানগর নেতারা। পরে বিকেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠক করেন নগর কমিটির নেতারা।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকের পর ঢাকা মহানগর উত্তরে সভাপতি হিসেবে মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া ও দক্ষিণে সভাপতি হিসেবে এম এ আজিজ-এর নাম শোনা যায়।
গত শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মহানগর নেতাদের এক অনির্ধারিত বৈঠক ডাকেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। সেই বৈঠকে বর্তমান সভাপতি এম এ আজিজসহ সকল নেতাদের যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত অধিকাংশ নেতারা যোগ দেননি।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মায়া সাহেব বৈঠক ডেকেছিলেন, নেত্রীকে বৈঠকের জানানোর পর নেত্রী বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। তাই মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের বৈঠকে যোগ দিতে নিষেধ করা হয়’।
ওই নেতা বলেন, মায়া সাহেব নিজেই মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে থাকতে চাচ্ছেন। এ নিয়ে তিনি উচ্চ পর্যায়ে তদবিরও চালাচ্ছেন।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ বলেন, ‘কিসের বৈঠক? ঢাকা মহানগরের কমিটি করার ক্ষমতা কি আমার আছে? আমাদের নেত্রী যেভাবে চান সেভাবে কমিটি করবেন’।
এ বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।