খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৫
গুলশানে ইতালীয় নাগরিক তাভেলা সিজার হত্যাকাণ্ডে এখনও কোনো ক্লু পায়নি পুলিশ। ক্লু’র সন্ধানে নেমে সম্ভাব্য সব সমীকরণ মাথায় নিয়ে কাজ করছে পুলিশসহ সকল গোয়েন্দা সংস্থা। শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা এবং পুলিশ বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।
‘বড় ঘটনা ঘটাতে ব্যর্থতা অনেক সময় তাৎক্ষণিক কোনো ঘটনার দিকে নিয়ে যায়,’ উল্লেখ করে এক কর্মকর্তা বলেছেন, গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে চিরায়ত এ সূত্র মাথায় রেখেও গোয়েন্দারা কাজ করছেন।
তিনি বলেন: হতে পারে মার্কিন কিংবা ব্রিটিশ গোয়েন্দা নেটওয়ার্কে অস্ট্রেলিয়া তার নাগরিকদের উপর সম্ভাব্য হামলার যে তথ্য পেয়েছিলো সেটা বানচাল হয়ে যাওয়ার পর তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্তে যে কোনো বিদেশী নাগরিক হত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ওই ইতালীয়কে হত্যা করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনও বলেছেন, হত্যাকাণ্ডটি পূর্বপরিকল্পিত। তবে বাংলাদেশে আইএস (ইসলামিক স্টেট) নেই বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে আইএস নামে সরাসরি জঙ্গি কার্যক্রম না থাকলেও তাদের অনুসারী এবং সহমর্মী একাধিক সংগঠন ও তাদের জঙ্গি সদস্যরা সক্রিয় আছে। তাদের কোনো পরিকল্পনা হয়তো মার্কিন বা ব্রিটিশ গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক আগেই জানতে পেরেছে এবং তাদের কাছ থেকে জানতে পেরে অস্ট্রেলিয়া ‘ট্রাভেল অ্যালার্ট’ জারির পাশাপাশি তাদের ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর পিছিয়ে দিয়েছে।
তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছেও ঈদের সময় বা ঈদের আগে-পরে নাশকতা পরিকল্পনার তথ্য ছিলো। জামায়াতে ইসলামী ওই পরিকল্পনা করছিলো উল্লেখ করে এক কর্মকর্তা বলেছেন, জামায়াতের সাবেক এমপিসহ বেশকিছু নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে ওই পরিকল্পনা বানচাল করে দেওয়া হয়।
সাম্প্রতিক গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করে একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, অস্ট্রেলিয়া দলকে টার্গেট করে কোনো নাশকতা পরিকল্পনা হয়ে থাকলে আর সেটা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার কারণে ইতালীয় নাগরিককে হত্যা করা হয়ে থাকলে এর সঙ্গে যুক্তরাজ্যভিত্তিক জঙ্গিদের সম্পর্ক থাকতে পারে।
গার্ডিয়ানসহ ব্রিটিশ এবং আমেরিকান পত্র-পত্রিকায় সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ রপ্তানির চেষ্টা নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।
এমনকি গার্ডিয়ানের সঙ্গে সাক্ষাতকারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়টির উল্লেখ করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনকে সতর্ক করে এরকম জঙ্গিদের দমনে তার সহায়তা চেয়েছেন।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, সরাসরি আইএস না হলেও যুক্তরাজ্যের জঙ্গিদের সঙ্গে সম্পর্কিত আইএসপন্থী কোনো সংগঠনের কারণেই অস্ট্রেলিয়ানরা উদ্বিগ্ন বোধ করে থাকতে পারেন, ওই জঙ্গি পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ঢাকায় ইতালীয় নাগরিককে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
কোনো জঙ্গি সংগঠনের জড়িত থাকার সম্ভাবনার পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের পেছনে এনজিও নিয়ে কোনো বিরোধ বা ব্যক্তিগত কোনো পূর্বশত্রুতা কাজ করেছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন সাংবাদিকদের বলেছেন, টার্গেট করেই ওই এনজিও কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আইএসের বিবৃতি বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, ‘কথিত’ এই বিবৃতির সত্যতার বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ‘ইতালিয়ান নাগরিক হত্যাকাণ্ডের রহস্য খুঁজে বের করতে আমরা চেষ্টা করছি। শিগগিরই খুনিদের খুঁজে বের করা হবে।’
সোমবার সন্ধ্যায় সুইমিং শেষে গুলশান-১ এর ৯০ নম্বর সড়ক দিয়ে বাসায় ফেরার সময় ইতালীয় নাগরিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কর্মকর্তা টাভেলা সিজারকে পরপর তিনটি গুলি করে তিন যুবক। আশেপাশের লোকজন উদ্ধার করে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ৮টায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানায়, মোটরসাইকেল চালকসহ তিন যুবক ‘কিলিং মিশনে’ অংশ নেয়।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গুলশান থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামী করে হত্যা মামলা করা হয়েছে।
সকালে ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ময়না তদন্ত শেষে ডাক্তাররা জানান, নিহতের শরীরে তিনটি গুলি লেগেছে।