খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
ইতালির নাগরিক সিজার তাভেলাকে (৫১) গুলশানের যে স্পটে গুলি করা হয় এবং খুনিরা যে সড়ক ব্যবহার করে পালিয়েছে, তার আশপাশের কোনো বাসা ও অফিসের বহির্মুখে সিসিটিভি ছিল না। তাভেলাকে হত্যার পর নির্বিঘেœ পালিয়ে যেতে খুনিরা এমন এলাকা বেছে নিয়েছে। কোন সড়কে ব্যবহার করলে তারা সিসিটিভির আওতার বাইরে থাকবে, তা আগে থেকে রেকি করা হয়েছিল।
তাভেলাকে হত্যার পর খুনিদের শনাক্ত করতে গুলশানের বিভিন্ন সড়কের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। কিলিংস্পটের আশপাশের সড়কের কোনো সিসিটিভিতে খুনিদের পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য না পেয়ে এখন গুলশানের সৌদি দূতাবাসসহ অন্যান্য এলাকা থেকে সংগৃহীত ফুটেজ পরীক্ষা করছেন তারা।
হত্যার ধরন, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা ও স্থান নির্বাচন দেখে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছেথ এ হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। গুলশানের কূটনৈতিকপাড়ায় অধিকাংশ এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় থাকলেও পরিকল্পনাকারীরা সিসিটিভির আওতামুক্ত এলাকা নির্বাচন করে। আশপাশের অন্তত তিনটি বিদেশি দূতাবাসের সামনের সড়ক বাদ দিয়ে খুনিরা অন্য পথে পালিয়ে যায়। কারণ দূতাবাসের সামনে অত্যন্ত আধুনিক সিসিটিভি রয়েছে।
হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে পুলিশ গতকাল বিশেষ তদন্ত টিম গঠন করেছে। ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে বিভিন্ন ইউনিটের চৌকস কর্মকর্তাদের নিয়ে এ টিম গঠন করা হয়। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তরে ভারপ্রাপ্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল পর্যন্ত তাভেলাকেহত্যার নেপথ্যের কোনো সুস্পষ্ট ক্লু পায়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কাউকে আটক করাও সম্ভব হয়নি। তবে তাভেলা গুলশানের যে বাসায় ভাড়া থাকতেন, সেখান থেকে গতকাল তার ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন জব্দ করে পরীক্ষা করছেন গোয়েন্দারা। বাসাটি পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে।
তাভেলা নেদারল্যান্ডসভিত্তিক এনজিও আইসিসিও কো-অপারেশন নামে একটি সংস্থার প্রফিটেবল অপরচুনিটিজ ফর ফুড সিকিউরিটি কর্মসূচির প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবে গুলশানে কর্মরত ছিলেন। সোমবার বারিধারা থেকে সুইমিং করে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তরা ৯০ নম্বর সড়কের মাথায় তাভেলাকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় আইসিসিওর কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভ্যানডারবিক গুলশান থানায় অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। গতকাল মামলাটি থানা থেকে ডিবিতে স্থানান্তর করা হয়েছে। গুলশান থানায় হেলেন সাংবাদিকদের বলেন, সহকর্মীকে হারিয়ে তারা মর্মাহত।
ঢাকায় ইতালির নাগরিককে খুনের দায় ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে জঙ্গি হুমকি পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ’। তাভেলাকে হত্যার কয়েক ঘণ্টা পর এমন খবর তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল বলেছেন, ইতালির নাগরিককে হত্যার সঙ্গে আইএসের জড়িত থাকার কোনো তথ্যের সত্যতা এখনও পাওয়া যায়নি। ব্যক্তিগত শত্রুতা, এনজিও কার্যক্রম নিয়ে বিরোধ, জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার বিষয় মাথায় নিয়ে চারটি গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে কাজ করছে।