Mon. Apr 14th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
61১৯৯৬ সালে শেয়ার কারসাজির ঘটনায় প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হবে। বুধবার সকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনে অবস্থিত পুঁজিবাজার বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হুমায়ুন কবীর (জেলা ও দায়রা জজ) এ আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল এ মামলার আসামিদের উপস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ পড়ে শুনানোর পর আদালত এ আদেশ ঘোষণা করেন।
গত ৯ সেপ্টেম্বর আদালত এ মামলার চার্জ (অভিযোগ) শুনানির জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য্য করেছিলেন।
এ সময়ে আদালতে আসামিপক্ষের সিনিয়র আইনজীবী মো. সিরাজুল হক, সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ মহসিন রশিদ, অইনজীবী শেখ বাহারুল ইসলাম, পান্নু খানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) প্যানেল আইনজীবী মাসুদ রানা খান উপস্থিত ছিলেন।
এ দিনে চার্জ শুনানির পাশাপাশি আসামি এম.এ. রউফ চৌধুরী শারীরিক অসুস্থতার কারণে পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিনে আদালতে উপস্থিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে অব্যাহতি চান। তার পক্ষে আবদন করেন আইনজীবী শেখ বাহারুল ইসলাম। তবে আদালত বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আদেশ দেননি।
আদালতের আদেশের বিষয়ে বিএসইসির আইনজীবী মাসুদ রানা খান বলেন, ‘প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের আসামিদের উপস্থিতিতে অভিযোগ পড়ে শুনানো হয়েছে। যেহেতু আসামিরা সকলেই উপস্থিত ছিলেন, সেহেতু বিচার কার্যক্রম পরিচালর অংশ হিসবে আগামী ১৫ অক্টোবর সাক্ষগ্রহণ ও জেরার দিন ধার্য্য করেছেন আদালত।’
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর আসামিদের অনুপস্থিতিতে আদালত বাদীপেক্ষের শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে এবং ১৩ সেপ্টেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করেন। কিন্তু আসামিরা আত্মসমর্পন করে এ মামলার পুনরায় শুনানির আবেদন করলে আদালত রায় ঘোষণার দিনক্ষণ স্থগিত করেন।
৮ সেপ্টেম্বর এ মামলার তিনজন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিয়েছেন। এরা হলেন- এম.এ. রউফ চৌধুরী, প্রিমিয়ার সিকিউরিটিজের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান ও পরিচালক অনু জাগীরদার। ৯ সেপ্টেম্বর জামিন নিয়েছেন অপর আসামি সাঈদ এইচ চৌধুরী।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামিরা প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজের নামে ১৯৯৬ সালের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার লেনদেন করেছেন। এ সময়ে তারা মিতা টেক্সটাইল, প্রাইম টেক্সটাইল, বাটা সুজ ও বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার লেনদেন করেন। প্রতিষ্ঠানটি ওই সময়ে মোট ১২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা লেনদেন করে। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি শুধু ফরেন ডেলিভারি ভার্সেস পেমেন্টের (ডিভিপি) মাধ্যমে ৮৫ লাখ টাকা লেনদেন করে।
এ সময় ১ নম্বর আসামি প্রিমিয়াম সিকিউরিটিজ ওই সময়ে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৩টি শেয়ার বিক্রি করে, যার মূল্য ছিল ৬৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
স্টক এক্সচেঞ্জের রেকর্ড মোতাবেক আসামিরা এসিআই লিমিটেডের ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১৯টি শেয়ার বিক্রি করেন। অথচ ব্যাংক রেকর্ড অনুযায়ী শেয়ার বিক্রির পরিমাণ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৩৮টি, যার মধ্যে ফরেন ডিভিপি মাধ্যমে লেনদেন অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ারের পরিমাণ ছিল ৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।
একইভাবে আসামিরা ডিভিপির মাধ্যম ছাড়াও স্থানীয়ভাবে শেয়ারের অন্যতম ক্রেতা-বিক্রেতা ছিলেন। আসামিরা ওই সময়ের মধ্যে বেক্সিমকো ফার্মার ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৯৫টি শেয়ার বিক্রি করেন। এর মধ্যে ডিভিপির মাধ্যমে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৭০০টি শেয়ার বিক্রি করেন। আর এখানেও অনিষ্পত্তি হওয়া শেয়ার ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৫০০টি। এসব ফরেন ডিভিপি মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পত্তির জন্য প্রতিষ্ঠানটি স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক ও ইন্দোসুয়েজ ব্যাংক ব্যবহার করত। আসামিদের এ ধরনের কার্যকলাপ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি, অপকার ও অনীষ্ট করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ২১ ধারা বলে গঠিত তদন্ত কমিটি ১৯৯৭ সালের ২৭ মার্চ একটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে আসামিরা সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ১৭ ধারার ই(২) বিধান লঙ্ঘন করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়। আর সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ এর ২৪ ধারার অধীনে আসামিদের শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।
এই মামলার সাক্ষী হচ্ছেন- বিএসইসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক এমএ রশিদ খান (বাদী), বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন আহমেদ, প্রফেসর জহুরুল হক, প্রফেসর আমিরুল ইসলাম চৌধুরী।