খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৫
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালের আগে কোনো আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, “জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সমর্থক যারা বাংলাদেশের অগ্রগতি ও উন্নয়ন চায় না, তারাই নির্ধারিত সময়ের আগে সাধারণ নির্বাচন চাইতে পারে।” তিনি বলেন, “আওয়ামী যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিনই বাংলাদেশের উন্নয়ন গতি পাবে। যারা এ উন্নয়ন চায় না, তারা আগাম নির্বাচনের জন্য হৈ চৈ করতে পারেন।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে কারও উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।” গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় (স্থানীয় সময়) জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭০তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রীর সফরের ফলাফল সম্পর্কে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর সফরের বিষয় ছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী সাংবাদিকরা বর্তমান রাজনৈতিক ও স্থানীয় ইস্যু নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। নিউ ইয়র্কে তাঁর এ সফরকে সফল অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত ২০১৫ পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা সদস্য দেশগুলো বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি অত্যন্ত গণমুখী লক্ষ্য।” এ ছাড়া তিনি ভারত, জাপান, নেদারল্যান্ডস ও চীনের সঙ্গে অত্যন্ত সফল দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের ঝুঁকির বিষয়টি স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা দেশকে হত্যা ও ক্যুর রাজনীতিতে নিমজ্জিত করেছিল, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৭৫ সালের পর বাংলাদেশ হত্যা ও ক্যুর রাজনীতিতে ঘুরপাক খেয়েছে। সরকার দেশকে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।” তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনীরা দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে এবং তারা অবিরাম তাই করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে সরকার দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য সব ধরনের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে।” সম্প্রতি ঢাকায় একজন ইতালিয়ান নাগরিক খুন হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সরকার এই ঘৃণ্য খুনের সঙ্গে জড়িত দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।” এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই দুঃখজনক খুনের ঘটনা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর বিবৃতি প্রদানকারী একজন বিএনপি নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত।
শেখ হাসিনা বলেন, “কেবল বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের সর্বত্রই কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। এমনকি নিউ ইয়র্ক সিটিতেই প্রকাশ্য দিবালোকে আওয়ামী লীগের দুইজন নেতাকে খুন করা হয়েছিল।” তিনি বলেন, “সরকার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ রোধ করার লক্ষ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। কিন্তু, বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে মানুষ হত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। বিএনপি-জামায়াত ২০১৩ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে হত্যার রাজনীতি শুরু করে এবং তারা ২০১৪ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখে। তারা ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সন্ত্রাস চালিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, “বাংলাদেশ অবশ্যই পুড়িয়ে মানুষ মারার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করবে। কেউ রেহাই পাবে না। তাদের অবস্থান যাই হোক না কেন, আমরা তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করব।” এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সংসদীয় ব্যবস্থায় সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হচ্ছে বিরোধীদল। এটি হচ্ছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। কিন্তু আমাদের দেশে আরেকটি দল রয়েছে যারা বিগত নির্বাচনে অংশ নেয়নি এবং জঙ্গিবাদী ও মানুষ মারার কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিল। তারা কখনও কখনও পরিবহনে অগ্নিসংযোগ এবং শিশু ও নারীসহ মানুষ হত্যা করে তাদের অস্তিত্ব প্রকাশ করে।