খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ০১ অক্টোবর ২০১৫
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বিসিআইউইও ট্রান্সপে আয়োজিত বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অর্থনীতির ভূমিকা নিয়ে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতেও একটি জনপ্রিয় ও নির্ভরযোগ্য নামে পরিচিত হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আরো বিপুলসংখ্যক দক্ষ মুক্ত পেশাজীবী এসব মার্কেটপ্লেসে যুক্ত হবেন এবং দেশের অর্থনীতিতেও তারা বড় ধরনের ভূমিকা রাখবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপের প্রধান নির্বাহী সামিষ কুমার বাংলাদেশের তরুণদের ভার্চুয়াল ইকোনমিতে অগ্রগতি নিয়ে মতবিনিময় করেন। এসময় সামিষ কুমার জানান, বাংলাদেশের অধিকাংশ ফ্রিল্যান্সারই এর মধ্যে ট্রান্সপের সেবা ব্যবহার করতে শুরু করেছেন এবং এই সেবার মাধ্যমেই অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলো থেকে উপার্জিত অর্থ উত্তোলন করছেন। তিনি আরো জানান, ট্রান্সপের মাধ্যমে সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যায়। যেকোনো মুক্ত পেশাজীবী অথবা প্রতিষ্ঠান যাদের বাংলাদেশের বাইরে থেকে টাকা আসে তারা ট্রান্সপের ওয়েবসাইটে গিয়ে বিনামূল্যে নিবন্ধন করতে পারেন।
আরো বিস্তৃত হতে যাচ্ছে তথ্য প্রযুক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের সকল স্তরের মহিলাদের ক্ষমতায়নে আওতা ও ব্যয় বাড়িয়ে এবার হাতে নেয়া হচ্ছে ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়। কয়েকবছর আগেও বাংলাদেশে কম্পিউটার তথা আইসিটি ক্ষেত্রে পুরুষদেরই বিচরণ ছিল। শিক্ষা, চাকরি ও ব্যবসায় নিয়োজিতদের বেশিরভাগই ছিলেন পুরুষ। গত কয়েক বছরে এ চিত্র ধীরে ধীরে পাল্টেছে। এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক নারী তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বলা হচ্ছে, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়িত তথ্য আপা প্রকল্পের মাধ্যমে নারীদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের সক্ষমতা বেড়েছে। ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে গৃহীত একটি প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জাতীয় মহিলা সংস্থা। এরই মধ্যে প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে। কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা কার্যপত্র তৈরি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নতুন প্রস্তাবে প্রকল্পের আকার ও ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে। সংস্থা সূত্র জানায়, প্রকল্পটি হাতে নেয়ার সময় উদ্দেশ্য ছিল, পর্যায়ক্রমে দেশের সকল উপজেলায় তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। এরই মধ্যে ১৩টি উপজেলায় ১৩টি তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে আরো ৩৯টি উপজেলায় একটি করে তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। এছাড়া প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত দেশের বিপুল সংখ্যক গ্রামীন মহিলাদের প্রযুক্তি সুবিধার আওতায় এনে মহিলা উন্নয়নে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ চলতি বছরের জুনে শেষ হয়েছে। এতে ব্যয় হয় ১৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ১১৩ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। প্রকল্পের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, প্রকল্পের আওতায় ক্রমান্বয়ে দেশের অবশিষ্ট ৪৭৪টি উপজেলায় তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা। যাতে গ্রামীন মহিলাদের প্রযুক্তি সুবিধার আওতায় আনা যায়। এছাড়া প্রকল্প কর্তৃক নির্মিত বিভিন্ন সফটওয়্যার যেমন তথ্য ভান্ডার, ওয়েব পোর্টাল, উইমেন টিভি, কলসেন্টার এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনে নতুন সুবিধা সংযুক্ত করে সেবার মান বৃদ্ধি করা, নতুন সফটওয়্যার নির্মানের মাধ্যমে মহিলাদের আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখা, আত্মকর্মসংস্থানের জন্য মহিলা ফ্রিল্যান্সার গড়ে তুলতে ট্রেনিং ও আর্থিক সহায়তা মূলক স্কিম হাতে নেয়া প্রভৃতি। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে কম সুযোগপ্রাপ্ত মহিলাদের জন্য তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সহজে তথ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে নারীর ক্ষমতায়ন, নির্বাচিত ৩৯টি উপজেলায় ৩৯টি তথ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা, এসব তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে তিন লাখ মহিলাকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধকরণ, নারী ও শিশুদের প্রাধান্য দিয়ে একটি ওয়েব পোর্টাল তৈরী এবং শুধুমাত্র নারী ও শিশু বিষয়ক সমস্যাদি ও তার প্রতিকার বিষয়ে সুপারিশ প্রদানের জন্য একটি কেন্দ্রীয় কল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়নে তথ্য আপা প্রকল্পটি ইতোমধ্যেই সাড়া ফেলেছে। একজন তথ্য আপা নিজেকে তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি তার পরিবারকে ও গ্রামের নারীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে সহযোগিতা করতে পারছে। যেসব উপজেলায় তথ্য দআপাদ রয়েছে সেখানকার নারীরা পুষ্টি, কৃষি তথ্যসহ নানা সুবিধা পাচ্ছে। এসব অঞ্চলে বাল্য ও কিশোরী বিয়ের হার কমেছে। কন্যা শিশুদের বিদ্যালয়ে ঝরে পড়াও অনেক কমে এসেছে। প্রকল্প পরিচালক মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মীনা পারভীন বলেন, নারীদের জন্য তথ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে দতথ্য আপাদ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে। নারী শিশুসহ পুরুষরাও এই বিষয়টিকে সানন্দে গ্রহণ করেছে। এতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সঠিক ব্যবস্থাপনায় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে নারী ক্ষমতায়নে অংশ নিতে পারছে। স্কাইপি ব্যবহার করে একজন মা তার প্রবাসী ছেলের সাথে কথা বলতে পারছে। তেমনিভাবে এতে সেবাগ্রহীতা স্বাস্থ্যসম্পর্কিত তথ্য, জরুরি খবর, সাধারণ জ্ঞান, কৃষিতথ্য, রান্না বিষয়ক তথ্য এই প্রযুক্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, তথ্য আপা প্রকল্পটি ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুলাই পর্যন্ত সময়সীমায় গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে প্রকল্পের সম্প্রসারণ করা হয়েছে ২০১৫ জুন পর্যন্ত। বর্তমানে প্রকল্পের সাফল্যের কারণে এর দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মেয়াদ প্রস্তাব করা হয়েছে ২০২০ সালের অক্টোবর পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে একটি সমৃদ্ধ তথ্য ভান্ডার গড়ে তোলা হয়েছে। এতে মহিলা বিষয়ক বিভিন্ন তথ্যের মজুদ রয়েছে। সবার জন্য উন্মুক্ত ডাটাবেজের তথ্যসমুহ বিনামূল্যে বিতরণ ও ব্যবহার করা যায়। ১৩টি তথ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং ওয়েট ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি সরবরাহপূর্বক এসব তথ্য কেন্দ্রে মহিলাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। মহিলাদের জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল স্থাপন করা হয়েছে। এই পোর্টালের মূল উপজীব্য হল নারী। এতে তৈরী করা হয়েছে ‘ওমেন টিভি’ নামে একটি অনলাইন টিভি। এই টিভিতে যে সব প্রোগ্রাম প্রচার করা হয় সেগুলোর মূল উপজীব্য হবে নারী সংক্রান্ত বিষয়াবলী। এছাড়া এতে রয়েছে একটি ভিডিও এবং স্থিরচিত্রের সংগ্রহশালা। প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হলে আরো বিস্তৃত আকারে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার কর্মকর্তারা।