খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ৪ অক্টোবর ২০১৫
বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা জানলে খুশি হবেন শ্রীনিবাসনের বিদায়ঘণ্টা প্রথমটা রোববারই বেজে গেছে। প্রথমটা এ জন্য বলা যে, ভারতীয় বোর্ড থেকে একরকম বিতাড়িত হয়েও তিনি একটা পদ টিকিয়ে রেখেছিলেন। সেটা হচ্ছে আইসিসি প্রধানের পদ। আইসিসি প্রধানের পদের সুবাদে তিনি আন্তর্জাতিক মহলে নানা কা-কারখানা করে থাকেন। যেমন- বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি ও আইসিসির সাবেক প্রেসিডেন্ট মুস্তফা কামাল অত্যন্ত যোগ্য ছিলেন এবং সংবিধান অনুযায়ী তারই বিশ্বকাপের ট্রফি তুলে দেওয়ার কথা ছিল। শ্রীনিবাসন তাকে অবজ্ঞা করে নিজেই ওই পুরস্কার দিয়েছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনেও তিনি এরকম অনেক কা-কীর্তি ঘটিয়েছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে শ্রীনি আপাতত অতীত একটি বিষয়। রোববার দুপুর দুটা থেকে অর্থাৎ ৪ অক্টোবর দুপুর থেকে এন শ্রীনিবাসন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড থেকে অতীত হয়ে গেছেন। বর্তমান হচ্ছেন তার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী শশাঙ্ক মনোহর। শারদ পাওয়ার, যিনি আইসিসির সাবেক প্রধান ছিলেন তিনি শনিবার বলেছেন, রোববার ভারতীয় ক্রিকেটের একটি সোনাবাঁধা দিন। কারণ, এদিন একটা নতুন যুগের শুরু হবে। আজ সে কথাটি শশাঙ্ক মনোহর বারবার বলছিলেন। তিনি সাংবাদিক সম্মেলনেও বলেছেন, শ্রীনির আমলে একটা খারাপ সময় দিয়ে ভারতীয় ক্রিকেট যাচ্ছিল। নানা ধরনের দুর্নীতি কেলেঙ্কারি লেগেই ছিলো। তিনি সে অবস্থা থেকে ভারতীয় ক্রিকেটকে সঠিক পথে আনতে চান। নতুন নতুন সংস্কারের খসড়া তিনি এদিন মিডিয়াকে জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে শ্রীনির প্রভাবমুক্ত করার জন্য বা সংস্কার আনার জন্য তিনি মাত্র দুমাস সময় চান। ঠিক দুমাস বাদে তিনি আবার মিডিয়ার সামনে হাজির হবেন। তখন কেউ যদি বলে, ‘না যথেষ্ট সংস্কার হয়নি’; তাহলে সে কথা তিনি শুনবেন। ভারতীয় ক্রিকেটে সবমিলিয়ে ভোট হচ্ছে ৩১টি। অর্থাৎ ৩০ জন সদস্য ও একজন প্রেসিডেন্ট মিলে ভারতবর্ষের ক্রিকেট নীতি ঠিক করেন। শ্রীনি এমন একটা অবস্থা তৈরি করেছিলেন যেখানে ৩০ জনের ২২ বা ২৩ জন তার একান্ত কুক্ষিগত ছিলো। তাদের তিনি নানারকম সুযোগ সুবিধা দিতেন, আর্থিক সুবিধা দিতেন। তাদের মাধ্যমে তিনি একটা সাম্রাজ্য তৈরি করেছিলেন। আজ মুম্বাইতে দেখা গেলো সেই সাম্রাজ্য অনেকটাই ধূলিসাৎ। কারণ, ৩০ জনের যে ২২ জন তার দিকে থাকতো, তার দুই তৃতীয়াংশ ঝড়ে গেছে। বৈঠকে নতুন আরও কয়েকজন এসেছিলেন। সৌরভ এসেছিলেন, ডালমিয়ার ছেলে এসেছেন। তারা সবাই শ্রীনিবিরোধী। এখন দেখা গেছে, ৩০ জনের ২২জনই শ্রীনিবিরোধী। অথ্যাৎ শ্রীনির অস্তিত্ব এখনকার মতো ভারতীয় ক্রিকেটে খুবই মার্জিনালাইজড। তাকে চেন্নাইতে ফোন দিয়েছিলেন সাংবাদিকরা। তাকে জিজ্ঞেস করা হলো- আপনি বৈঠকে এলেন না। একেবারে কোণঠাসা- এ বিষয়ে কী বলবেন? তিনি উত্তর দেন, ‘রোববার আমার গলফ ডে। আমি মন দিয়ে গলফ খেলছি।’ ভারতীয় এবং বাংলাদেশি ক্রিকেট সমর্থকরা চাইবেন শ্রীনি এখন মন দিয়ে গলফই খেলুক। ক্রিকেট বোর্ডের আশেপাশে তাকে যেন না দেখা যায়! বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে আইসিসির চেয়ারম্যান হিসেবে নিজের ক্ষমতার প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন শ্রীনিবাসন। আইসিসির সভাপতি আ হ ম মুস্তফা কামালকে ট্র বিতরণ করতে দেননি তিনি। এরপর থেকেই সমালোচনার তোপের মুখে পড়তে হয় শ্রীনিবাসনকে। এদিকে, রোববার বিসিসিআইয়ের বিশেষ সাধারণ সভায় শ্রীনিবাসন উপস্থিত না থাকার বিষয়টি আগেরদিনই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল। আইসিসির চেয়ারম্যান কিংবা সভাপতি যে পদই হোক না কেন, এ সব পদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করে সাধারণত সংশ্লিষ্ট ক্রিকেট বোর্ডগুলো। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সমর্থন নিয়ে আইসিসির চেয়ারম্যান হয়েছিলেন শ্রীনিবাসন।