খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০১৫, বরিশাল
ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন করে সদ্য যোগদান করা হাইব্রিড নেতাদের প্রাধান্য দেয়ায় নগরীসহ জেলার দশটি উপজেলার তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল মহাজোটে তীব্র কোন্দল দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে কেন্দ্রের নির্দেশে কৌশলে দলকে সংগঠিত করতে মাঠ গোছাচ্ছে বিএনপি।
আ’লীগ দলীয় সূত্রমতে, গত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আ.লীগ ও মহাজোটের শরিক দলের আলাদা প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই এখানে কোন্দল দেখা দিয়েছে। পরবর্তীতে যা হামলা ও মামলায় রূপ নেয়। আ.লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, পরপর দু’বার দল ক্ষমতায় থাকার পরেও দলের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন বিএনপি-জামায়াত থেকে সদ্য আ.লীগে যোগদান করা হাইব্রিড নেতারা। তারা আরও জানান, দলের বর্তমান নেতৃত্বস্থানীয়দের কাছেই অবমূল্যায়ন হতে হচ্ছে ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়কার আ.লীগের নির্যাতিত নেতাকর্মীদের। দলের ওইসব সুবিধাভোগী কতিপয় নেতৃত্বদানকারীদের হাত ধরে সদ্য আ.লীগে যোগদান করা হাইব্রিড নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে প্রকৃত নেতাকর্মীদের। এমনকি শক্তি প্রদর্শনের জন্য ইতোমধ্যে হাইব্রিড নেতাদের হাতে বরিশালে প্রাণদিতে হয়েছে ছাত্রলীগের দু’কর্মীকে। হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে দু’যুবলীগ নেতাকে। তাদের (হাইব্রিড) আ.লীগ কর্মীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি পর্যন্ত। প্রকাশ্য দিবালোকে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুরের সময় এ ছবি দুটিও ভাঙচুর করা হয়। একইভাবে হামলা ও মামলা দিয়ে দমন করা হচ্ছে মহাজোটের শরিক দল ওয়াকার্স পার্টির নেতাকর্মীদের।
সূত্রে আরও জানা গেছে, হাইব্রিড নেতাদের দিয়ে নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে কতিপয় পৌর মেয়র ও দলের পদ পদবীধারিরা নিজ দলে অভ্যন্তরীন কোন্দল ও শরিক দলের সাথে বিরোধ সৃষ্টির কারণে সরকারের নানামুখী উন্নয়নের প্রচার-প্রচারনা বরিশালে অনেকটাই ভেস্তে যাচ্ছে। অথচ সদ্যযোগদান করা হাইব্রিড নেতারা মুখে আ.লীগের কথা বললেও তারা দলের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে কৌশলে বিএনপি-জামায়াতের সিনিয়র নেতাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে তাদের লক্ষ্য পূরণ করে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকেই আবার আওয়ামী লীগের ব্যানারে আগামি নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হতে জোড় তৎপরতাও শুরু করেছেন। আ.লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা হাইব্রিড দমনে আগামি পৌর নির্বাচনে পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিযে ইতোমধ্যে মাঠে কাজও শুরু করেছেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দলের নিতিনির্ধারকরা তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের যৌক্তিক দাবিগুলো মূল্যায়িত না করলে আগামি পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেই আ’লীগকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, এত বড় দলে খুঁটিনাটি কিছু ভুল থাকতেই পারে। খুব শীঘ্রই তা সংশোধন করা হবে।
এদিকে মহাজোটে থাকা দলের (হাইব্রিড) নেতা-কর্মীদের কাজে লাগিয়ে কেন্দ্রের নির্দেশে কৌশলে দলকে সংগঠিত করতে দিনরাত সমানতালে মাঠ গুছিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তারা সরকারবিরোধী আন্দোলন সংগ্রামে ব্যর্থ হলেও এবার ঘুরে দাঁড়াতে কৌশলে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে মামলায় জর্জরিত নেতা-কর্মীদের আইনি জটিলতা থেকে দ্রুত মুক্ত করতে তারা প্রানন্তর কাজ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে কারান্তরীণ নেতা-কর্মীদের মুক্ত করে তারা বিএনপিকে ঢেলে সাজানোর কাজে অনেকটা সফলও হয়েছেন।
সূত্রে আরও জানা গেছে, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে জেলা শহরসহ প্রতিটি উপজেলায় দলকে সংগঠিত করতে প্রাণপণ কাজ করে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় প্রকাশ্যেই দল গোছাতে কাজ করে যাচ্ছেন স্ব-স্ব এলাকার সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা। ঈদ-উল আযহার পূর্ববতী সময় থেকে অদ্যাবধি গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান ও পৌর বিএনপির সভাপতি আশির দশকের কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা এস.এম মনির-উজ জামান মনির নেতা-কর্মীদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শেষ করেছেন। বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময়ও এখানকার বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংগঠিত করে রেখেছিলেন আশির দশকের ওই কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা। একইভাবে আগৈলঝাড়ায় এস.এম আফজাল হোসেন, মুলাদীতে আবদুস সাত্তার খানসহ জেলার বাকেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, বানারীপাড়া, উজিরপুর ও বরিশাল সদর উপজেলায় ইতোমধ্যে দলকে সংগঠিত করা হয়েছে। এখন শুধু কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দলের দুর্দীনে নেতা-কর্মীদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে যাঁরা দলকে সংগঠিত করেছেন, তাদেরকেই জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌর শাখার গুরুত্বপূর্ণ পদে অসীন রাখার জন্য বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের অসংখ্য নেতা-কর্মীরা বিএনপির চেয়ারপার্সনের কাছে জোরদাবি করেছেন।