Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০১৫
16বাংলাদেশে হঠাৎ করেই এক সপ্তাহের মধ্যে ইতালি ও জাপানের দুই ‘নিরীহ’ নাগরিক খুনের ঘটনায় বিদেশিরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অনেকেই চুপিসারে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ক্রিকেট কোচ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ কোম্পানির কর্মী- সবাই চলে যাচ্ছেন। এক সপ্তহের মধ্যে দুই বিদেশিকে বাংলাদেশে একই কায়দায় কারা হত্যা করা হলেও ঘটনার কোনো কারণই বের করতে পারছে না গোয়েন্দারা। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকা-ের পর ৩ অক্টোবর রংপুরে খুন করা হয় জাপানের নাগরিক কুনিও হোশিকে। রাজধানীর কূটনীতিক পাড়ায় সন্ধ্যার পর তাভেল্লাকে গুলি চালিয়ে হত্যার পর যেভাবে খুনিরা মোটর সাইকেলে পালিয়ে গিয়েছিল, তিনশ কিলোমিটার দূরে রংপুরের পল্লীতে কুনিওর হত্যাকা-ও ছিল একই কায়দায়। স্প্যানিশ প্রতিষ্ঠান আইসোলাক্স কোরসান বাংলাদেশ থেকে তাদের বিদেশী কর্মী সাময়িকভাবে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশে দুই বিদেশী নাগরিক নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে আইসোলাক্স এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী আঞ্চলিক পরিচালক মার্টা ফার্নান্দেজ। এ খবর দিয়েছে ফক্স নিউজ ল্যাটিনো। সোমবার মার্টা ফার্নান্দেজ জানিয়েছেন, ‘স্পেন ও অন্যান্য দেশের ২০ জন আইসোলাক্স কর্মী রোববার ঢাকা ছেড়েছে। আরও ৩০ জন কর্মী দ্রুতই বাংলাদেশ ছেড়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।’ তিনি আরও জানিয়েছে, কর্মীদের ফিরে যাওয়াটা সাময়িক। বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিবর্তন হওয়ার আগ পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আপাতত নভেম্বর মাসে আবারও তাদের বাংলাদেশে ফেরার সময়সূচি রাখা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ৫ বছর ধরে কাজ করছে আইসোলাক্স। বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে চলমান বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের ৭০ শতাংশ বাংলাদেশী। আর বাকি ৩০ শতাংশ স্পেন ও অন্যান্য দেশের। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, কর্মী সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত তাদের প্রকল্পের ওপর কোন প্রভাব ফেলবে না। প্রতিষ্ঠানটির অধীনে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলছে ঢাকার অদূরে সিদ্ধিরগঞ্জে। ২০১৬ সালের মার্চে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি ফ্রান্সের: বাংলাদেশে দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার নিন্দা এবং পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছে ফ্রান্স। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া এক বার্তায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে দেশটি। একইসঙ্গে বলেছে, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাংলাদেশের পাশে আছে ফ্রান্স। নরওয়ে, সিঙ্গাপুর ও নিউজিল্যান্ডের সতর্কতা: বাংলাদেশে ৫ দিনের ব্যবধানে দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনায় নরওয়ে, সিঙ্গাপুর ও নিউজিল্যান্ড তাদের নাগরিকদের এ দেশ ভ্রমণে সতর্কতা অবলম্বনের তাগিদ দিয়েছেন। দেশগুলোর তরফে নতুন করে সিকিউরিটি এলার্ট জারি করেছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্যমতে, সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৪ঠা অক্টোবর ‘ট্রাভেল নোটিশ টু বাংলাদেশ’ শিরোনামে তাদের নিরাপত্তা সতর্কতা প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে দুইজন বিদেশী হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ২৮শে সেপ্টেম্বর গুলশানে ইতালিয়ান নাগরিক হত্যার পর ৩রা অক্টোবর রংপুরে একজন জাপানি নাগরিক খুন হয়েছেন। বিদেশিদের ওপর সম্ভাব্য আরও হামলার আশঙ্কায় সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের বাংলাদেশে সফর ও অবস্থানের বিষয়ে উ”চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। যেখানে সাধারণত বিদেশিরা যাতায়াত করে এমন স্থানে সর্বো”চ সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। ব্যক্তিগত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রত্যেক সিঙ্গাপুরের নাগরিককে আগাম সতর্কতা অবলম্বন, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, জনসমাগম বেশি হয় এমন এলাকাগুলো এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এদিকে একইদিনে ঢাকাস্থ নরওয়ে দুতাবাস তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। ‘টেরর এ্যাটাকস্’ শিরোনামে ওই বার্তাটি দেশটি নিজস্ব ভাষায় প্রকাশ করা হয়। যার অনুবাদে দেখা যায়, সেখানে বলা হয়েছে সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে দুতাবাস বাংলাদেশে পশ্চিমা স্বার্থের ওপর জঙ্গিগোষ্ঠীর আক্রমণের তথ্য পেয়েছিল। এরপর দুইজন বিদেশী নাগরিক খুন হয়েছেন। এ হত্যার রহস্য এখনও জানা যায়নি, কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলোর নাগরিকদের ওপর উ”চমাত্রার যে হুমকি এসেছিল তার সঙ্গে ঘটনা দুইটির যোগসূত্রের সন্দেহ উড়িয়ে দেয়া যায় না। বাংলাদেশে ইসলামি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সক্রিয় রয়েছে। ২০০৫ সালের সিরিজ বিস্ফোরণের পর তাদের অনেকগুলো নেটওয়ার্ক গুড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে। তাদের হাজারের মতো কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছিল। ওই গ্র“পগুলো দুর্বল হলেও এখন পর্যন্ত সক্রিয় রয়েছে। গত বছরগুলোতেও পুলিশ তাদের কাছ থেকে প্রচুর বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধার করেছে। ওই বার্তায় উল্লেখ আছে, ২০০৮ সালে মুম্বাই এ্যাটাকের পর বাংলাদেশের হোটেল এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের জারি করা সতর্কবার্তায় দুইজন বিদেশি নাগরিক হত্যার তথ্য দিয়ে বলা হয়েছে, আইএস ওই দুটি হত্যার দায় স্বীকার করেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশে অবস্থানরত নিউজিল্যান্ডের নাগরিকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সর্বো”চ সচেতনতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিদেশীরা যাতায়াত করে এমন হোটেল ও কনফারেন্স সেন্টারে যাওয়া কমিয়ে দেয়াসহ ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় বাংলাদেশের মিডিয়া এবং তথ্যসূত্রগুলো নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদের বড় ঝুঁকি রয়েছে উল্লেখ করে ওই বার্তায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত সন্ত্রাস ও উগ্রপš’ার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গ্র“পকে গ্রেপ্তার করছে। এ অবস্থায় যে কোন স্থানে, যে কোন সময় যে কেউ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।