Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর ২০১৫
1চলতি মাসের (অক্টোবর) মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ১ নভেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
দাবি-দাওয়া পূরণের বিষয়ে মঙ্গলবার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে বৈঠকের পর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা এ কর্মসূচির কথা জানান। এর আগে সকালে ফেডারেশনের সভায় লাগাতার কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত হয়।
তবে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে শিক্ষক নেতাদের প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টার বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠকে ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল উপস্থিত ছিলেন।
স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো ও অষ্টম বেতন কাঠামোতে বৈষম্য দূরীকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
মাকসুদ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘অক্টোবর মাসের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ১ নভেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ফেডারেশন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অনুভূতিতে আমরা আঘাত করতে চাই না। কিন্তু আমাদের দাবি-দাওয়া যদি উপেক্ষিত হয় তবে লাগাতার কর্মসূচিতে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প থাকবে না।’
বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষকদের মান, মর্যাদা, ইজ্জত রক্ষা করে আমরা কীভাবে এগোব সেটাতে জোর দেব। বেতন কাঠামোর ব্যাপারে স্যারদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করার জন্য যথাযথ ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করব। যে বিষয়গুলো সামনে আসছে আশা করি সে বিষয়গুলোর সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাধান বেরিয়ে আসবে।’
দুপুর ৩টা ২০ মিনিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকের শুরুতে ফেডারেশনের নেতারা দাবি-দাওয়া সম্বলিত সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা শিক্ষামন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, শিক্ষকদের দাবি পূরণে সাড়া না দিয়ে অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের দাবি পূরণে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ১ নভেম্বর হতে লাগাতার কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে এবং বিশেষ গ্রেড সৃষ্টি করে বেতন-ভাতার দিক থেকে দৃশ্যত শিক্ষকদের চার ধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষকদের মর্যাদা নিচে নামবে। এমনকি বিদ্যমান ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সেও শিক্ষকদের মর্যাদাহানির বিষয়টি বহুল আলোচিত।
সরকারি কর্মকর্তারা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন ও উচ্চ শিক্ষার জন্য সরকারি বৃত্তি পান, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তার কিছুই পান না বলেও জানানো হয়েছে এতে।
প্রস্তাবনায় পাঁচটি দাবির মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের লক্ষ্যে অনতিবিলম্বে একটি বেতন কমিশন গঠন। স্বতন্ত্র বেতন স্কেল বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ঘোষিত অষ্টম বেতন কাঠামো পুনর্র্নিধারণ করে সিনিয়র অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা গ্রেড-১, অধ্যাপকদের গ্রেড-২, সহযোগী অধ্যাপকদের গ্রেড-৩, সহকারী অধ্যাপকদের গ্রেড-৫ ও প্রভাষকদের বেতন কাঠামো সপ্তম গ্রেডে নির্ধারণ।
এ ছাড়া অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে- প্রস্তাবিত গ্রেড-১ প্রাপ্ত সিনিয়র অধ্যাপক হতে ২৫ শতাংশ শিক্ষককে সুপার গ্রেডের দুই নম্বর ধাপে বেতন-ভাতা দেওয়া। রাষ্ট্রীয় ওয়ারেন্ট অব প্রেসিডেন্সে শিক্ষকদের প্রত্যাশিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী পদমর্যাদাগত অবস্থান নিশ্চিত ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের মতো সুযোগ-সুবিধা শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত করা।
বৈঠক শেষ হয় বিকেল ৫টার দিকে। শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষকদের সমস্যাগুলো নিয়ে কীভাবে অগ্রসর হতে পারি তা নিয়ে আলোচনা করেছি। অর্থমন্ত্রী শিগগিরই (বিদেশ থেকে) ফিরে আসবেন। তিনি (বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির) সভাপতি, আসলেই সভা ডাকা হবে। সেই সভায় বিষয়গুলো সমাধানের চেষ্টা করব। তারপর শিক্ষকরা পদক্ষেপ নেবেন। শিক্ষকদের মর্যাদা-সম্মান এক নম্বর, টাকাটা হচ্ছে দুই নম্বর।’
‘শিক্ষকদের বলেছি, এখন ভর্তির সময়। ভর্তি প্রক্রিয়া, ক্লাস যাতে অব্যাহত থাকে। যখন উপযুক্ত সময় হবে তারা যদি কিছু করতে চান করবেন। তারা বলেছেন, ভর্তি ও পরীক্ষা ব্যাহত হবে না’ বলেন নাহিদ।
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা বলেছি সপ্তম বেতন স্কেলে আমাদের যে অবস্থান ছিল তা থেকে যেন অবনমন (নিচে নামানো) না হয়। আমরা বেতন-ভাতার জন্য আন্দোলন করছি না। সম্মানের জায়গায় হাত দিলে শিক্ষকরা জিনিসটি মেনে নেবে না। আমরা আশা করছি স্যারের (শিক্ষামন্ত্রী) নেতৃত্বে একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’
‘আমরা প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছি। পাঁচ মাসের পর ছয় মাস চলে যাচ্ছে। ছয় মাস পরে কিন্তু আমরা আর কলিগদের কাছে যেতে পারব না। তখন পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আশা করি আমরা এ মাসের মধ্যে একটা সুষ্ঠু সমাধান পাব। এর মধ্যে দৃশ্যমান কিছু না দেখাতে পারি তবে ১ নভেম্বর থেকে এমন একটা অবস্থায় চলে যেতে হবে, যা কারো জন্য সুখকর হবে না। লাগাতার কর্মসূচিতে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রচণ্ড চাপ রয়েছে’ বলেন ফেডারেশনের সভাপতি।
শিক্ষকদের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো, গবেষণা ও কনসালটেন্সি নিয়ে বাইরে কিছু অপপ্রচার ও ভুল বুঝাবুঝি রয়েছে জানিয়ে ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘এ জিনিসগুলো আমরা স্যারের কাছে তুলে ধরেছি।’
ফেডারেশনের মহাসচিব বলেন, ‘বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে সাত মন্ত্রী রয়েছেন। এর মধ্যে ছয় মন্ত্রীকে আমরা চিঠি দিয়েছি। অর্থমন্ত্রীকে আমরা চিঠি দেইনি, কারণ তিনি শিক্ষকদের নিয়ে যে মন্তব্য করেছিলেন তা সুবিবেচনা প্রসূত ছিল না। আজ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করলাম, আরো পাঁচ মন্ত্রীর সঙ্গে আমরা আলোচনা করব।’