খোলা বাজার২৪ বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০১৫
মেডিকেল ও ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে আবার পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে শাহবাগে পুলিশের ব্যারিকেট ভেঙে অবস্থান নিয়ে সব সড়ক বন্ধ করে দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তাদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রারাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ক্লাস বর্জন এবং আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছেন অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক খালেদ সাইফুল্লাহ বলেন, আমাদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন ঢাবি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তার্ াক্লাস বর্জন করে আমাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে। আর আজকে (বুধবার) আমরা বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান করব। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী সোনালী বলেন, তোমাদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একাত্বতা প্রকাশ করতে আমরা ঢাবির সাধারণ শিক্ষার্তীরা এখানে এসেছি। আশা করি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তোমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমরা আন্দোলনকারীদের আটকাতে ব্যারিকেট দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা ব্যারিকেট ভেঙে শাহবাগে আবস্থান নিয়ে সড়ক বন্ধ করে দেয়। এর ফলে এ এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে সড়ক থেকে সড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। এদিকে লাগাতার প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ, ফাঁস হওয়া প্রশ্নে অনুষ্ঠিত মেডিকেল ও ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে আবার পরীক্ষা নেওয়া, প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশী নির্যাতনের বিচার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ধর্মঘট কর্মসূচি পালন করেছে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও সাম্রারাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্য। বুধবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, কলাভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসার অনুষদের গেটে তালা লাগিয়ে দেন নেতাকর্মীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তালাগুলো ভেঙ্গে ফেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাভবনের মূল ফটকে সকাল ৭টা থেকে অবস্থান নেন ধর্মঘট আহ্বানকারীরা। পরে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাভবনের মূল ফটক থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগার হয়ে আবার কলাভবনের মূল ফটকের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে আবারও মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার দাবি জানিয়ে দুই জোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাবিব রুমন বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে, তা পাঁচ হাজার টাকা করে বিক্রি হয়েছে। কিন্তু দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে কোনো তদন্ত ছাড়াই বলে দিলেন, এটা লজ্জার। উনার মন্ত্রী থাকার কোনো যোগ্যতা নেই। প্রশ্ন ফাঁসে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জি এম জিলানী শুভ বলেন, প্রশ্ন ফাঁস শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সব ধরনের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। এই প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের শাস্তি দাবি করেন তিনি। একইসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনার বিষয়ক সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার, ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক তুহিন কান্তি দাশ, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম সোহেল, সাম্রারাজ্যবাদবিরোধী ছাত্র ঐক্যের সমন্বয়ক এম এম পারভেজ লেনিন, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সদস্য রিয়াল চাকমা, ছাত্র গণমঞ্চের বিলাস মাহমুদ ও বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক বিপ্লব ভট্টার্চায প্রমুখ। ঢাবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মঘট আহ্বানকারীরা তাদের কর্মসূচি পালন করছে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় তারা কোনো বাধা দেয়নি। কয়েকটি বিভাগের ক্লাস ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্জন হল, কলাভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় অনুষদের গেটে তালা লাগিয়ে দেয় নেতাকর্মীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তালাগুলো ভেঙ্গে ফেলে। এদিকে, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল সাড়ে ৯টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শহীদ মিনারে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা পুনরায় নেওয়ার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। ১২টার দিকে তারা শহীদ মিনার থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগের দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে অগ্রসর হন।