খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর ২০১৫
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বিরুদ্ধে গত মঙ্গলবার রাতে সুন্দরগঞ্জ থানায় আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে। বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর শাহাবাজ গ্রামের হাফিজার রহমান মন্ডল বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন। মামলায় সংসদ সদস্য লিটনসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে আবারও একটি মামলার বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলে তা সাংবাদিকরা জানতে পারেন। মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, গত ২ অক্টোবর সকাল পৌঁনে ছয়টার দিকে সংসদ সদস্য লিটন শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভকে গুলি ছুড়ে আহত করে। সেখান থেকে ফেরার পথে তিনি দলবল নিয়ে সকাল আটটার দিকে সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর সাহাবাজ গ্রামে যান। ওই গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলী মন্ডলের ছেলে ভটভটি চালক হাফিজার রহমান মন্ডলের বসতবাড়িতে আকষ্মিকভাবে হামলা চালানো হয়। মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, সংসদ সদস্যদের নির্দেশে তার লোকজন হামলা করে বাড়িঘর ভাংচুর করায় হাফিজার রহমানের ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ঘটনায় হাফিজার রহমান মন্ডল বাদী হয়ে গত ৬ অক্টোবর সংসদ সদস্য লিটনসহ ১০ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় সংসদ সদস্যকে ১ নম্বর হুকুমের আসামি করা হয়। তবে স্থানীয়রা জানান, উত্তর শাহাবাজ গ্রামের হাফিজার রহমান মন্ডলের সম্পর্কিত ভাই আব্দুল মতিনের পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সম্প্রতি তিনি বিরোধপূর্ণ জমিতে টিনের চালাঘর নির্মাণ করে। আব্দুল মতিনের লোকজন ২ অক্টোবর তা ভেঙে দিলে এই ঘটনায় সংসদ সদস্যকে আসামি করে মামলা করেন হাফিজার রহমান। হাফিজার রহমানের মামলাটি রুজু করতে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসরাইল হোসেন বলেন, এজন্য পুলিশ দায়ী নয়। বাদী মামলা দিতে বিলম্ব করেছেন। মিমাংসার কথাবার্তা চলার কারণে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গার বাড়িতে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলেও তালা ঝুলছিল। তবে এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার কোন কর্মসূচিও পালিত হয়নি। সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র ও সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুল্যাহ আল মামুন অভিযোগ করেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গোপালচরণ গ্রামের শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করে হত্যার চেষ্টার ঘটনার সাতদিন পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পুলিশ সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি বলেন, সংসদ সদস্য লিটনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় জামায়াত-শিবিরের প্রভাব বেশী। এখানে সংসদ সদস্যকে ঘিরে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তা পুলিশ ঠান্ডা মাথায় মোকাবেলা করছে। শিশু সৌরভ গুলিবিদ্ধ হবার ঘটনার সাতদিন পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন। তিনি গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে শিশু সৌরভকে গুলি প্রসঙ্গে বলেন, এটি একটি দুঘর্টনা। এনিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অথচ এই ঘটনায় কতিপয় দলছুট আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী আমার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন। ওইসব নেতাকর্মীদের আন্দোলনের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলেও দাবি করেন লিটন। তারা আমাকে বেকায়দায় ফেলে জামায়াত-শিবিরকে সক্রিয় করার চেষ্টা করছে। প্রসঙ্গত, ২ অক্টোবর শুক্রবার সকালে সুন্দরগঞ্জ-বামনডাঙ্গা সড়কের ব্র্যাক মোড়ে সৌরভ ভোরে ঘুম থেকে উঠে রাস্তায় হাটাহাটি করছিলো। সংসদ সদস্য লিটন শুক্রবার সকালে পাজেরো গাড়ি নিয়ে নিজ বাড়ি উপজেলার বামনডাঙ্গা থেকে সুন্দরগঞ্জ যাচ্ছিলেন। তিনি নিজে গাড়ি চালিয়ে ব্র্যাক মোড়ে পৌঁছলে রাস্তায় সৌরভকে দেখে গাড়ি থামিয়ে সৌরভের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এসময় সংসদ সদস্য লিটন সৌরভকে ডাক দেয়। সৌরভ সাড়া না দিলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েন। এতে সৌরভের ডান পায়ে দুইটি ও বাম পায়ে একটি গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ শিশুটিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে বামনডাঙ্গায় সংসদ সদস্যদের লোকজন শিশুটিকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে অ্যাম্বুলেন্সটি ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে আহত সৌরভ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের ১৮ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ ঘটনায় সৌরভের বাবা সাজু মিয়া বাদী হয়ে সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলামকে একমাত্র আসামি করে গত ৩ অক্টোবর রাতে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে ৩২৬ ও ৩০৭ ধারায় মামলা দায়ের করেন।