খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ৯ অক্টোবর ২০১৫ দেশে স্বল্পমূল্যে ডিমের উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য, নকল ডিম প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া ও পোল্ট্রিকে করমুক্ত খাত হিসেবে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন এই শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট খামারি ও ব্যবসায়িরা। শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাঙালি হবে স্বাস্থ্যবান, প্রতিদিন ডিম খান এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ২০তম বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে পোল্ট্রি শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৭টি অ্যাসোসিয়েশনের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটি (বিপিআইসিসি) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ব্যবসায়িরা এ দাবি জানান। আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প সমন্বয় কমিটির (বিপিআইসিসি) আহ্বায়ক মসিউর রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরে পোল্ট্রি শিল্পের উপর আমদানি শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর আরোপ করার ফলে পোল্ট্রি ফিড, বাচ্চা, ডিম ও মুরগির মাংসের উৎপাদন খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পোল্ট্রিকে করমুক্ত খাত হিসেবে ঘোষণার বিকল্প নেই। দেশে ডিমের মোট চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয় জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে ডিমের দৈনিক উৎপাদন প্রায় ২ কোটি; ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ডিমের দৈনিক চাহিদা হবে প্রায় ৪০-৪৫ কোটি। এ বিশাল চাহিদা পূরণে পোল্ট্র্রি শিল্পের উন্নয়নে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত সহযোগিতা দরকার। মসিউর বলেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক জনসচেতনতা এবং আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধির কারনে বাংলাদেশে ডিমের চাহিদা অনেক বেড়েছে। কিন্তু ডিম সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার কারণে এবং সঠিক প্রচার ও পরিকল্পনার অভাবে ডিমের কাঙ্খিত চাহিদা বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর জন্য ব্যবসায়িদের তাগিদ দেন। আলোচনায় মূল প্রবন্ধা উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি প্যাথলজির প্রফেসর ড. এ এস মাহফুজুল বারী। তিনি বলেন, ডিম অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং নিরাপদ একটি খাদ্য। মাত্র ২টি ডিম নারীর দৈনিক প্রোটিন চাহিদার ১/৪ ভাগ পূরণ করতে পারে। শুধু তাই নয়, শর্করা কমিয়ে প্রতিদিন ডিম খেলে মাসে ৩ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব! সমাজে ডিম সম্পর্কে অনেক ভুল ধারনা প্রচলিত আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেকেই মনে করেন ডিম খেলে কোলস্টেরল বাড়ে ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। এমন ধারণা একেবারেই অমূলক। ডিমে কোলস্টেরল আছে তবে তা ক্ষতিকর নয় বরং উপকারি। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, সপ্তাহে ৪টি ডিম খেলে টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৩৭ শতাংশ কমে যায়। সপ্তাহে ৬ টি ডিম খেলে স্তন ক্যানসারের সম্ভবনা ৪০% হ্রাস পায়। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায়, বিপিআইসিসি’র যুগ্ম-আহ্বায়ক সামছুল আরেফিন খালেদ, স্যার সলিমুল্লাহ্ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ এবং হেড অব মেডিসিন প্রফেসর ডা. মো. বিল্লাল আলম, অধ্যাপক ড. মোফাজ্জল হোসেন প্রমুখ। সভায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা এবং ময়মনসিংহে বিশ্ব ডিম দিবস উপলক্ষে র্যালি এবং আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বিপিআইসিসি। এর পাশাপাশি দেশের ৬৪টি জেলায় পোস্টার লাগানো এবং মোবাইল ফোনের ক্ষুদ্র বার্তার মাধ্যমে ১৫ লক্ষ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারির কাছে ডিম দিবসের বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। বিপিআইসিসি’র সদস্যভুক্ত অ্যাসোসিয়েশন সমূহ: ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বিএবি), ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি), এনিম্যাল হেলথ কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আহকাব), ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব), বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (বিপিইএ), বাংলাদেশ এগ প্রডিউসারস্ অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ এগ্রো ফিড ইনগ্রিডিয়েন্ট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফিটা)।