বিশেষ প্রতিনিধি, খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ১১ অক্টোবর ২০১৫ : রাজধানীর ধানমন্ডী শংকর এলাকায় অবস্থিত আলী হোসেন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। আর নিয়োগ বাণিজ্যের নেতৃত্বে দিচ্ছেন বিদ্যালয়ের অকার্যকর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ নাদির খান। তাকে সহযোগিতা করছেন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুক – রশিদের সংগঠন ফ্রিডম পার্টির অন্যতম নেতা ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ আজাহার । যিনি এলাকায় ফ্রিডম আজাহার হিসেবে পরিচিত। ঐতিহ্যবাহী আলী হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নিয়োগ বাণিজ্য, লুটতরাজ, স্বজনপ্রীতি, কিশোরিদের জন্য নেতিবাচক পরিবেশ বিরাজ করায় শিক্ষা কার্যক্রম এখন হুমকির সম্মূখীন।
নাদির খানের একঘেঁয়েমি সিদ্ধান্ত, প্রভাবখাটিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি,স্বেচ্ছাচারিতা জায়েজ করার চেষ্টা চালালে এর প্রতিবাদে ম্যানেজিং কমিটির আটজন সদস্য কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। ১২ সদস্য বিশিষ্ট ম্যানেজিং কমিটির আর বাকী থাকে ৪ জন। কিন্তু কমিটি ছাড়াই একক ক্ষমতাবলে নাদির খান নিয়োগ বাণিজ্যসহ সকল অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন !
তিনি সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়ে ২৫ বছরের কর্মরত সহকারী প্রধান শিক্ষিকা সুলতানা ইয়াকুতি বেগম এর নিকট একলক্ষ বিশ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করলে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তৎসময়ে সভাপতি শিক্ষিকাকে জোরপূর্বক অব্যাহতি দেন এবং তার স্থলে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে মামলার ২নং বিবাদী মোঃ রাশেদুল আলমকে নিয়োগ দেন। শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য সহকারী শিক্ষিকা তানিয়া আলমের বিরুদ্ধেও মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে বরখাস্ত করেন ।
এছাড়া মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ০৫ জন নতুন শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগ দেন। উল্লেখ্য ৮জন সদস্য পদত্যাগ করার পরেই এসকল শিক্ষক/শিক্ষিকা নিয়োগ দেয়া হয় প্রতিজন শিক্ষক/শিক্ষিকা থেকে ৩-৫ লক্ষ টাকা করে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা ঘুষ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। গোপন সূত্রে জানা গেছে শিক্ষিকা সেলিমা বেগমের নিবন্ধন গনিতে কিন্তু তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বিজ্ঞান বিষয়ে। সূত্রে আরো জানা গেছে সেলিমা বেগম সর্বোচ্চ টাকা দিয়ে শিক্ষিকা পদে নিয়োগ নেন। এ অনিয়মের মাধ্যমে যারা শিক্ষক/শিক্ষিকা পদে নিয়োগ পেয়েছেন তারা হলেন- নিউটন কুমার বাড়ৈ (গণিত), মিলি ইয়াসমিন (কম্পিউটার), সুরেশ হালদার (ইংরেজী), লামিয়া আক্তার (কম্পিউটার, ডেমোনেস্ট্রেটর)। এ বিশাল অংকের ঘুষ দিয়ে চাকুরি নেয়া শিক্ষক/শিক্ষিকাদের যোগ্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ ?
এদিকে, ম্যানেজিং কমিটির ৮জন সদস্য পদত্যাগ করায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিধিমালা ৩০(৩) ধারায় উল্লেখিত কমিটি অকার্যকর হয়ে যায়। ফলে এসকল নিয়োগের কোনো বৈধতা নেই। নিয়োগের বৈধতা ও সভাপতির ক্ষমতার অপব্যবহারকে চ্যালেঞ্জ করে বিদ্যালয়ের সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মোঃ শরীফুল হোসেন ঢাকার আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। যাহার নাম্বার ৩১৭/২০১৫। আদালত বিবাদীদের জবাবের জন্য নোটিশ প্রেরণ করলে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কেহ নোটিশ গ্রহন করেনি ।
সভাপতি নাদির খানের এহেন কর্মকান্ডে বিদ্যালয়ের ছাত্রীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। অচিরেই অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের অন্য স্কুলে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করছেন। এমনিতেই অভিভাবকরা শংকিত কারণ এর আগেও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ফ্রিডম আজাহার কর্তৃক লাঞ্চিত হয়েছেন শিক্ষিকা ইয়াকুতি বেগম, শিক্ষিকা জেরিন সুলতানা, সায়েদা আফরীন সনিসহ অনেকেই। ফ্রিডম আজাহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেও ভূক্তভোগীরা কোনো ফল পায়নি। কারণ ফ্রিডম আজাহার বিতর্কিত সভাপতি নাদির খানের অন্যতম সহযোগি। আর নাদির খানের ক্ষমতাতো অসীম ! তারই ছোট ভাই মোঃ সাদেক খান বর্তমান ক্ষমতাসীন দল মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি। তাই নাদির খান দম্ভোক্তি করে বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোন লাভ হবে না। তার ছোট ভাই আওয়ামীলীগ নেতা সাদেক খান স্থানীয় এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানকের ডান-হাত, বাম-হাত। সভাপতির আস্ফালনের কারণে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটি আজ ধ্বংসের সম্মুঙ্খীন। তাই প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করার জন্য তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। এলাকাবাসী বলেন ম্যানেজিং কমিটির আট সদস্য যেহেতু পদত্যাগ করেছেন সুতরাং এই কমিটি তাদের কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছেন। অতএব অচলাবস্থা নিরসনের জন্য এবং বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য তড়িতগতিতে সরকারী প্রতিনিধি দিয়ে একটা এডহক কমিটি করার জোর দাবী জানান।
নিয়োগ নিয়ে ঘুষ বাণিজ্য ও অয়িমের বিষয়ে বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি নিয়োগের কিছুই জানেন না, সব জানেন সভাপতি । সভাপতির সাথে যোগাযোগ করুন । সভাপতির মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায় ।