খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ১২ অক্টোবর ২০১৫ : আগামীতে স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে করার প্রস্তাব আজ মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে আজ সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ক’দিন আগে সরকারের এমনি ভাবনার খবর জেনে প্রতিবাদ করেছিলাম এবং দাবী তুলেছিলাম-এ বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় যেন সংশ্লিষ্ট সকল মহলের মতামত যাচাই করা হয়। কিন্তু সরকার আমাদের সে দাবীকে পাশ কাটিয়ে একগুঁয়েমি মনোভাব প্রদর্শণ করে আজ এ সংক্রান্ত পাঁচটি আইনের সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রীসভায় উত্থাপন করে তড়িঘড়ি করে অনুমোদন করেছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করা প্রসঙ্গে আজ এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে অর্ধেক নারী জনপ্রতিনিধি দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচনের বিরোধিতা করেছেন। আমরাও মনে করি, এর ফলে স্বত:প্রণোদিতভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ হ্রাস পাবে। আমরা এর আগে উল্লেখ করেছি যে, বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্র-সমাজ ব্যবস্থা-এতটাই রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত এবং নির্বাচন ব্যবস্থা এতটা ত্রুটিপূর্ণ -যেখানে দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র-সমাজ আরো বেশী বিভাজিত হয়ে পড়বে। তাছাড়া, বর্তমান নতজানু ও সরকারের আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে ভোটারদের অবাধে ভোট দেয়ার অধিকার রক্ষা করতে সমর্থ নন। এবং দলবাজ প্রশাসন সরকারের আজ্ঞাবাহী হিসেবে সরকারের নীল নকশার বাইরে স্বাধীনভাবে কাজ করতে অক্ষম। এ পরিস্থিতিতে দলীয় প্রতীকে ভবিষ্যতে যারা নির্বাচিত হবেন-তাদের কাছ থেকে ভিন্ন মতাবলম্বীরা সহযোগিতা পাবেন না এবং বৈষম্য ও হয়রানীর শিকার হবেন ব্যাপকভাবে। সম্পত্তির ওয়ারিশ নির্ধারন, নাগরিক সনদ ও চারিত্রিক প্রত্যয়ন পত্র সহ দৈনন্দিন সাধারণ নাগরিক সুবিধা প্রাপ্তিতে নাগরিকদের দলীয় পরিচয়ের কারনে ভোগান্তিরও এতে আশঙ্কা থাকবে। আমরা অস্বীকার করিনা যে উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর অনেকেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকেই করে থাকেন-কিন্তু সেসব দেশে আমাদের দেশের মত রাজনীতির অপচর্চা হয়না। সেখানে নিরপেক্ষ প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করেন। বাংলাদেশে এই চিত্র বিপরীত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর বর্তমান সরকারের নৈতিক ভিত্তি যখন প্রশ্নবিদ্ধ এবং সকল দলের অংশ গ্রহনের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্রুত একটি জাতীয় নির্বাচনের দাবি যখন সকল মহলের-তখন সে দাবিকে পাশ কাটিয়ে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজনের পেছনে সরকারের এক মহা-দুরভিসন্ধি কাজ করছে বলে আমরা মনে করি। আপনারা জানেন, সরকারের দমন-নিপীড়নের কৌশলে আমাদের হাজার-হাজার কর্মী ঘরছাড়া, কারারুদ্ধ এবং সরকার বিরোধী রাজনীতিকে নুন্যতম ডেমোক্রেটিক স্পেস দেয়না-এমনি এক প্রেক্ষাপটে বিরোধী দলের পক্ষে সমান সুযোগ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া দুরুহ হয়ে উঠবে এবং সরকার সেই সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে রাজনীতির এক অসমান্তরাল ময়দানে ফাঁকা মাঠে গোল করতে হীন প্রচেষ্টা নিয়ে এগুচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে সরকার প্রমাণ করতে চেষ্টা করবে জাতীয় নির্বাচন-বিরোধী দলগুলো বর্জন করলেও সকল পর্যায়ের স্থানীয় নির্বাচনে তাদের প্রতি তথাকথিত সমর্থন রয়েছে। এটা একটি অসৎ পরিকল্পনা ছাড়া অন্য কোন কিছুই নয়। তাই আমাদের দলের পক্ষ থেকে দাবী জানাই এ সংক্রান্ত নির্বাচনী আইন অধ্যাদেশ আকারে জারী থেকে তারা যেন বিরত থাকেন। সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচন সংক্রান্ত যে পাঁচটি আইন অনুমোদন করেছে-তাও সাংঘর্ষিক। কেননা জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হলেও পরবর্তী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে বা শপথ নেয়ার পূর্ব পর্যন্ত সংসদ সদস্যরা পদে বহাল থাকতে পারলেও -মেয়াদোত্তীর্ণ হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখা হয়েছে। এতে স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি থাকার ধারাবাহিকতাও ক্ষুন্ন হবে। এই অধ্যাদেশ জারী হওয়ার পর, যেসব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন উপযোগী হয়নি-সেসব প্রতিষ্ঠানে পূর্বে নির্বাচিত মেয়র, চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও মেম্বারগণের পদে থাকার বৈধতারও প্রশ্ন উঠবে। আমরা মনে করি, মন্ত্রীপরিষদে অনুমোদিত প্রস্তাব মোটেই বাস্তবসম্মত নয়, সাংঘর্ষিক ও বাংলাদেশের জনগণের ঝড়পরধষ ঐধৎসড়হু ধ্বংস হয়ে যাবে।