খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৫ : বাংলাদেশে ধান, গম, ভুট্টা, সার ও চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের পণ্য মোড়কজাত করার জন্য পাটজাত পণ্য ব্যবহার না করলে ঐসব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ না দেবার সিন্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশের সকল তফসিলি ব্যাংকে সে রকম একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ব্যবহার জনপ্রিয় করার জন্যে এর আগেও বহু উদ্যেগ নিয়েছে সরকার।
এসব বিষয়ে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের পাট শিল্পকে জনপ্রিয় করা এবং আমাদের দেশে পাটের যে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য সেটাকে আবার জনপ্রিয় করে তোলা। সেই সাথে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি করা। এটা সরকারি একটি প্রজ্ঞাপনের সূত্র ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংক এধরনের একটি সার্কুলার করেছে। কারণ সরকার পাট শিল্পের অগ্রগতি এবং পাটের ব্যবহার বৃদ্ধির চেষ্টা করছে।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত কতটা কাজে আসবে এর জবাবে মাহফুজুর রহমান বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতি বলতে আমাদের দেশীয় সম্পদ ব্যবহার করবেন না, কিন্তু যেটা পরিবেশ বান্ধব নয় এরকম একটা জিনিস ব্যবহার করে দেশের পরিবেশকে ঝুঁকির মধ্যে নিয়ে যাবেন সেটা আমি মনে করি সঠিক নয়। আমাদের পরিবেশকে লালন করতে হবে এবং ভবিষ্যতের চিন্তা করতে হবে। সেই বিবেচনাতেই আমরা পাট শিল্প দ্বারা তৈরি পণ্যসামগ্রী ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি। যেসব শিল্পে পাটজাত পণ্য ব্যাবহার করা সম্ভব তারা যদি পাটজাত পণ্য ব্যাবহার না করে তাহলে ব্যাংকগুলোকে বলেছি তাদেরকে যেন ঋণ প্রদান না করে। আমাদের গ্রীন ব্যাংকিং নামে একটা কার্যক্রম আছে। যেসব যায়গায় পরিবেশ দূষণ হবে সেসব জায়গায় ব্যাংক যাতে ঋণ না দেয় সেরকম নির্দেশনা ইতিপূর্বেও দিয়েছি। প্যাকেজিং যেসব সামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় বিশেষ করে পলিথিন সেটা কিন্তু শুধু বাংলাদেশের জন্য নয় সারা বিশ্বের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। সুতরাং সকলের স্বার্থেই পাটজাত পণ্যকে জনপ্রিয় করে তোলা উচিত।
সরকারের এই সিদ্ধন্তের ফলে ব্যাবসায়ীদের চাপ প্রয়োগের করে আসল উদ্দেশ্য কতটা সফল হবে এর জবাবে মাহফুজুর রহমান বলেন , আমাদের বিশ্বাস আসল উদ্দেশ্য সফল হবে। পাট এ দেশের একটি সম্পদ এ দেশে এর উৎপাদন বাড়াতে পারি এবং আমরা আমাদের নিজেদের জিনিস ব্যবহার করতে পারি। পাটজাত পণ্য বারবার ব্যাবহার করা যায় এবং বারবার ব্যাবহার করার ফলেও নষ্ট হয়ে যায়না। সবচেয়ে বড় বিষয় হল পাটজাত পণ্য পরিবেশ দূষণ করেনা।
বিভিন্ন রকম প্যাকেজিং খাতে যে পরিমাণ পাটজাত পণ্য ব্যবহার করা হয় সেটা কতটা বাড়ানো সম্ভব এর জবাবে মাহফুজুর রহমান বলেন, আমাদের এ ধরনের কোন জরিপ এখনো নাই। তবে সরকার চাচ্ছে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে। এতে করে আমাদের কৃষকরা পাটের উৎপাদন বাড়াবে। যদি কোন ব্যাবসায়ী ব্যাংকের সহযোগীতা সহজে নিতে না চান তাহলে সে ব্যবসায়ী পণ্য প্যাকেজিং এর ক্ষেত্রে যেকোন কিছু ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু কোন ব্যাবসায়ীর যদি ব্যাংক ঋণ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ থাকে তাহলেই কেবল তার জন্য এই নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। এটা মানতে কোন ব্যবসায়ীকে শতভাগ বাধ্য করছিনা। কিন্তু পাটজাত পণ্যকে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় করার সবরকম চেষ্টা করা হচ্ছে।