খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৫ : সরকার গণপরিবহনের নতুন ভাড়া ঠিক করে দেওয়ার পরও ৪০ শতাংশ বাস ও মিনিবাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ধারণা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে কেবল চালক নয়, মালিকদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বুধবার সচিবালয়ে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আমার ধারণা, প্রায় ৪০ শতাংশ বাস-মিনিবাস অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে।” সম্প্রতি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর সরকার ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরী এবং ডিটিসিএ-এর আওতাধীন গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় বাস ও মিনিবাসের ভাড়া পুনর্র্নিধারণ করে। এতে ভাড়া বেড়েছে প্রতি কিলোমিটারে ১০ পয়সা। মহানগরীতে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ন্যূনতম ভাড়া আগের মতই ৭ টাকা ও ৫ টাকা থাকবে বলা হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না বলে যাত্রীদের অভিযোগ। ওবায়দুল কাদের বলেন, গত কয়েকদিনে ঢাকা ও আশেপাশে ‘অনেক পরিবহনে’ অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি তিনি নিজেই দেখেছেন। “অবাক করা বিষয়! সরকার নিয়ন্ত্রিত বি আরটিসি’র কয়েকটি বাস অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে আমার কাছে যাত্রীরা অভিযোগ করার পর আমি এর সত্যতা পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধেও মোবাইল কোর্ট আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।” ভাড়ার তালিকা না থাকা এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কারণে বুধবারও ঢাকায় ১৬টি বাসকে মোট ২৪ হাজার টাকা জরিমানা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বি আরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালত। মন্ত্রী বলেন, “সরকারি গাড়ি যদি আইনভঙ্গ করে তাহলে অন্যদের আইন মানতে কীভাবে বাধ্য করব? বি আরটিসি চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন এ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে।” ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ ‘বেশি পাওয়া যাচ্ছে’ জানিয়ে কাদের বলেন, “বি আরটিএ-কে নির্দেশ দিচ্ছি, শুধু চালকের বিরুদ্ধে নয়, চালক-মালিক উভয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মালিকের দায়টা বেশি, কারণ মালিক ভাড়া নির্ধারণ করে থাকে।” বোরাক, আনন্দ, শিকড়সহ কয়েকটি পরিবহনের নাম উল্লেখ করে বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে ‘অ্যাকশনে’ যাওয়ার কথা বলেন সড়ক পরিবহন মন্ত্রী। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে আপাতত পাঁচটির বেশি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে কাদের বলেন, এই ‘সীমাবদ্ধতা’ থাকার পরও অভিযান চলবে। তিনি বলেন, “যাত্রীদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায় এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে আমি পরিবহন মালিকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।” মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এর অধীনস্থ দপ্তরগুলোর বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষরের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় নির্দিষ্ট কাজের বিপরীতে অর্থ দেবে। আর মাঠ পর্যায়ে সে কাজ বাস্তবায়ন করবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। “কাজটি সঠিক মান বজায় রেখে শেষ হলো কিনা, সেবা-গ্রহীতারা উপকার পেল কিনা- তা বিভিন্ন পরিমাপকের মাধ্যমে যাচাই করা হবে।” মন্ত্রী বলেন, সরকার দুটি ‘প্রাধিকার’ চিহ্নিত করেছে। একটি হচ্ছে কাজের মান নিশ্চিত করা। অন্যটি নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা। অনেক ক্ষেত্রে সড়ক মেরামত বা সংস্কার কাজে মান বজায় থাকছে না মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, “এ চুক্তির মাধ্যমে কাজের গুণগত মানও বিবেচনায় আনা হবে। আমরা কঠোর অবস্থানের দিকে যাচ্ছি। কোনো কর্মকর্তা, প্রকৌশলী কিংবা ঠিকাদার গাফিলতি করলে তা সিরিয়াসলি দেখা হবে।” সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এমএএন ছিদ্দিক, সওজের প্রধান প্রকৌশলী মো. ফিরোজ ইকবাল, বি আরটিএ-এর চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, বি আরটিসি’র চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান, ডিটিসিএ-এর নির্বাহী পরিচালক মো. কায়কোবাদ হোসেনসহ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।