Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৫ : ঋণের জন্য স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ব্যাংকের দ্বারস্ত হওয়ার 122হার বাড়ছে না। গত বছরের অগাস্ট থেকে এ বছরের একই সময় পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে কমেছে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি। সামগ্রিক ঋণ চাহিদায়ও চলছে ভাটার টান। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে, অগাস্টে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। সহজ করে বললে, গত বছর অগাস্টে ১০০ টাকার ঋণ বিতরণ হলে এবছর হয়েছে ১১২ দশমিক ৬৯ টাকা। তবে জুন ও জুলাইয়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি বেশি ছিল। জুন মাসে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ আর জুলাইয়ে ছিল ১২ দশমিক ৯৬ শতাংশ। অগাস্ট শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬৫ হাজার ৯৩ কোটি টাকা বেশি। সর্বশেষ মুদ্রানীতিতে ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণ চাহিদায় এমন পড়তি অবস্থার জন্য ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীরা নানা বাধার কথা বললেও নতুন কারখানায় গ্যাস, বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়া এবং ঋণের চড়া সুদহারকেই প্রধান বাধা হিসাবে দেখাচ্ছেন। তাছাড়া বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বাড়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোর অতিমাত্রায় সতর্ক হওয়াকে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার কারণ হিসাবে দেখছেন কেউ কেউ। শিল্প স্থাপনে জমি না পাওয়াও আরেকটি কারণ। রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদ উদ্দিন বলেন, “বর্তমানে মোট ঋণের চাহিদাই কম। যা চাহিদা আছে সেগুলো চলমান শিল্প কারখানার সংস্কার বা সম্প্রসারণের জন্য। নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য ঋণের চাহিদা নেই।” এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “উদ্যোক্তারা আমাদেরকে যে সমস্যাগুলোর কথা বলছেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নতুন কারখানার জন্য গ্যাস সংযোগ না পাওয়া। এছাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ ও জমি না পাওয়ার কথাও অনেকে বলছেন।” ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী রেজা ইফতেখারও বলেন, “নতুন ব্যবসা বা শিল্প উদ্যোগে ঋণ প্রস্তাব নেই বললেই চলে। “এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। অন্যতম কারণ হচ্ছে কারখানাগুলো গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় চালু হচ্ছে না। যে কারণে অন্যরাও নতুন প্রকল্পে যেতে পারছেন না। আবার ডিমান্ড নোট ইস্যু হয়েছে এমন অনেক কারখানায় ব্যাংক ঋণ দিয়েছে, কিন্তু সংযোগ না পাওয়ায় ঋণের টাকা আটকে আছে।” সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের একটি সংবাদ সম্মেলনেও শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়ার করুণ চিত্র ফুটে উঠে। ওই সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ জানান, এ পর্যন্ত ডিমান্ড নোট ইস্যু করা হয়েছে এমন ৭০টির মতো শিল্প কারখানার মধ্যে ৮-১০টি কারখানায় গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রতিশ্র“তি পাওয়া (ডিমান্ড নোট ইস্যু হয়েছে এমন) শিল্প কারখানাগুলোয় সংযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে এফবিসিসিআই। ব্যাংকার আলী রেজার মতো নিউ এইজ গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের ভাইস চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিমও ব্যবসায়ীদের বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বাড়াকেও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমার কারণ হিসাবে দেখেন। আর এর জন্য দেশীয় ব্যাংকগুলোর ঋণের চড়া সুদকে দায়ী করেছেন তারা। আলী রেজার দেওয়া তথ্য মতে, বর্তমানে বেসরকারি খাতে সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ স্থিতি আছে। “মূলত উচ্চ সুদহারের কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ বিতরণ কমে যাচ্ছে। এই উচ্চ সুদের কারণেই নতুন উদ্যোক্তা বা নতুন প্রকল্প আসছে না। উদ্যোক্তারা বিদেশ থেকে কম সুদে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিচ্ছেন, যে কারণে দেশের ব্যাংকে ঋণ চাহিদা কম,” বলেন ডিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম। একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “দেশে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। ভবিষ্যতে দেশ কোনদিকে যাবে তা স্পষ্ট নয়। যে কারণে উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগে যাচ্ছেন না। এদিকে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগও পাওয়া যাচ্ছে না। কবে নাগাদ পাওয়া যাবে সে বিষয়েও স্পষ্ট কোনো দিক-নির্দেশনা নেই।” “আবার বেশকিছু ঋণ কেলেংকারির পর ব্যাংকগুলোও ঋণ বিতরণে সতর্ক। অনেক উদ্যোক্তা বিদেশ থেকে ঋণ নিচ্ছে। এসব কারণে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ব্যবস্থায় ঋণের চাহিদা বাড়ছে না,” বলেন তিনি।