খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৫ : বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দাদের ‘ফুলকুঁড়ি’ অভিহিত করে তাদের কল্যাণে ‘যা যা করার’ তার সবই করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম সরকারপ্রধান হিসাবে কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায় পৌঁছে বৃহস্পতিবার সেখানে বিদ্যুৎসংযোগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আপনাদের সার্বিক কল্যাণে যা যা করণীয় আওয়ামী লীগ সরকার তা করবে। দুঃখের রজনী শেষ হয়েছে, নতুন সূর্যালোকে আলোকিত হয়ে আলোর পথের যে যাত্রা আপনারা শুরু করেছেন সে যাত্রা অব্যাহত থাক।” সকালে হেলিকপ্টারে করে ফুলবাড়ি পৌঁছান শেখ হাসিনা। পরে সেখান থেকে ১১টার দিকে গাড়িতে করে পৌঁছান দাশিয়ারছড়ায়। সেখানে কালিহাট গার্লস হাই স্কুল মাঠে সভামঞ্চ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ কার্যক্রম উদ্বোধনের পাশাপাশি কয়েকজন বাসিন্দার মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল বিতরণ করেন তিনি। স্থানীয়দের নিয়ে আয়োজিত সমাবেশে তিনি বলেন, “দাসিয়ারছড়া এখন ছিটমহল নয়, এটি বাংলাদেশের অন্তর্গত ফুলবাড়ির এলাকা। আমি ফুলবাড়িতে এসেছি। ফুলবাড়ি এখন নতুন প্রস্ফূটিত ফুলের এক বাগান। এখানকার নাগরিকরা এখন এক একজন ফুল।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ আপনাদের মধ্যে আসতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। আগেও আসার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু আসতে পারিনি। কেন সেটা আপনারা ভালো করেই জানেন। “কোথায় যাব? কোনো ঠিকানা আপনাদের ছিলে না। আজ আপনাদের সে অসুবিধা আর নাই। আপনারা এখন বাংলাদেশের সন্তান, এদেশের নাগরিক, বাংলাদেশেরই আপনজন।” বিলুপ্ত ছিটবাসীদের বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্যসেবা এবং চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। “ইতিমধ্যে কুড়িগ্রাম, নীলফামারি ও পঞ্চগড়ে পাঁচটি পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে যেন যে কোনো অনভিপ্রেত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয়। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য এ তিন জেলায় ৪১ দশমিক ৭১ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ২৫ হাজার পরিবারকে পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।” যে সব এলাকায় বিদ্যুৎ লাইন নেই, সেসব এলাকায় সোলার প্যানেল দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার জন্য এসব এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের কাজ চলছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় বাসিন্দাদের তিনি বলেন, “আপনারা ভুল করেও নিজেদের ছিটবাসী মনে করবেন না। এ কথা চিন্তাও করবেন না। আপনারা এখন এদেশের নাগরিক, এটাই মনে করবেন।” নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিয়ে ৩১ জুলাই মধ্যরাতে স্থল সীমান্ত চুক্তি কার্যকরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহলের বিলুপ্তি ঘটে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্বের পাশাপাশি সরকারি সেবার অধিকারপ্রাপ্ত হয় ছিটবাসী। ৩৭ হাজার বাসিন্দাসহ নিজেদের সীমানায় ভারতের এ ধরনের ১১১টি ছিটমহল পেয়েছে বাংলাদেশ। একইভাবে ১৪ হাজার বাসিন্দাসহ ভারতের ভেতর বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল পেয়েছে প্রতিবেশী দেশটি। ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশের পাওয়া ছিটমহলগুলোর মধ্যে কুড়িগ্রামে রয়েছে ১২টি। এ ছিটমহলগুলোর মোট বাসিন্দা ৮ হাজার ১৩২ জন। এরমধ্যে দাসিয়ারছড়াতেই বাস করেন ৬ হাজার ৬০৮ জন। প্রধানমন্ত্রী দাসিয়ারছড়া থেকে ফিরে দুপুর আড়াইটায় কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে এক জনসভায় বক্তব্য দেবেন। একইসঙ্গে তিনি কুড়িগ্রাম জেলায় ১৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ১৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। উন্নয়ন প্রকল্পগুলো হল- সদর উপজেলার ত্রিমোহনী এলাকায় নির্মিত সমন্বিত বীজ হিমাগার, রাজারহাট কৃষি-আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সেন্টার, কুড়িগ্রাম টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, রাজীবপুর ও নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নবনির্মিত ৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবন ইত্যাদি।