Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৫ : পীর’ খিজির খানের 49মতাদর্শকে ‘ধর্মীয় বিচ্যুতি’ ধরে নিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি সদস্যরা ‘ইমানি দায়িত্ব’ মনে করে তাকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আগের দিন গ্রেপ্তার দুজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। খিজির হত্যায় জড়িত সন্দেহে বুধবার টাঙ্গাইল থেকে জেএমবির সংগঠক তরিকুল ইসলাম ওরফে তারেক ওরফে মিঠু এবং রাজধানীর মিরপুর থেকে আলেক বেপারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছে খিজির খানের দুটি ল্যাপটপ ও দুটি ক্যামেরা পাওয়া গেছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপির গণমাধ্যম কার‌্যালয়ে মনিরুল সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে একটি ছোট কাগজে লেখা আরেক পীরের নাম পাওয়া গেছে। ‘গ্রেপ্তার তারেক জানিয়েছে, ওই পীরকেও তারা হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।’ মধ্যবাড্ডার যে বাড়িতে খিজির খানকে খুন করা হয়, সেখানে রাহমানিয়া খানকা শরীফ নামে নকশেবন্দিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকতের মাহফিল করতেন বলে জানান তিনি। যুগ্ম কমিশনার বলেন, “পীর, ফকির ও মাজার সেবকদের খুনিরা পছন্দ করে না। তারা দাবি করে, ইসলামে পীর বলে কোনও শব্দ নেই। পীর হত্যাকে তারা ইমানি দায়িত্ব বলে মনে করায় খিজির খানকে হত্যা করেছে।” পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, এই ‘কিলিং মিশনে’ দুটি দলে ভাগ হয়ে অন্তত ৮ জন অংশ নেয়। এক দল ঘটনাস্থল রেকি করে এবং আরেক দল হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়। “একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে চার জন খিজির খানের বাড়ির সামনে উপস্থিত হয়। হত্যায় সরাসরি অংশ নিয়েছিল তারেক।” আর মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার আলেক বেপারী পেশায় গাড়িচালক বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “সে জেনে ও বুঝে খুনিদের খিজির খানের বাসায় নিয়ে যায় এবং সেখান থেকে খুনিদের পালিয়ে যেতে সাহায্য করে।” দেলদুয়ারের মৌলভীপাড়ার পিয়ার আলীর ছেলে তারেককে জেএমবির ‘কট্টরপন্থি’ নেতা পলাতক ফারুকের অন্যতম অনুসারী বলে উল্লেখ করেন মনিরুল। “নিজেদের মতবাদের সঙ্গে কারও বিরোধ তৈরি হলে তারা ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে হত্যার পরিকল্পনা করে থাকে। পরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার তারেক ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে সিরিজ বোমা হামলার মামলায় ৫ বছর কারাভোগ করেছিল। পুলিশের ধারণা, মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী ও গোপীবাগের ‘কথিত’ পীর লুৎফর রহমান হত্যার সঙ্গে খিজির খান হত্যার যোগসূত্র থাকতে পারে। এছাড়া পাবনার ঈশ্বরদীতে খ্রিস্টান যাজক লুক সরকার হত্যায় জড়িতরা একই দলের বলেও সন্দেহ করেন পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল। ডিএমপির উপ-কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, “ওরা (খুনিরা) মনে করে কাউকে মেরে ফেলার পর তার সম্পত্তি গনিমতের মাল হওয়া যায়। “তাই তারা খিজির খানের বাসা থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করেছিল।” সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-কমিশনার মাশরুকুর রহমান খালেদ, মো. সাজ্জাদ হোসেন, মাহবুব আলম ও অতিরিক্ত উপ কমিশনার মোহাম্মদ শাহজাহান। গত ৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় নিজের বাড়িতে খুন হন ৬৮ বছর বয়সী খিজির খান। ওই বাড়িতে ছিল রাহমানিয়া খানকা শরীফ, তাকে অনেকে পীর মানত। নিহত খিজিরের বাবা কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগরের বাসিন্দা হাবিব রহমত উল্লাহও তিনি পীর ছিলেন। প্রায় ১২ বছর আগে তার মৃত্যুর পর পীরের ছেলে হিসেবে খিজির খানের শিষ্যত্ব নেন মুরিদরা। এক বছর আগে ২০১৪ সালের ২৭ অগাস্ট ঢাকার রাজাবাজারের বাসায় একইভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল ইসলামী ফ্রন্টের নেতা নুরুল ইসলাম ফারুকীকে। তার আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর গোপীবাগে খুন করা হয় কথিত পীর লুৎফর রহমানকে। ওই দুটি হত্যাকাণ্ডের কোনো কূল-কিনারা গোয়েন্দারা করতে না পারলেও তাদের ধারণা, মতাদর্শিক বিরোধের কারণে জঙ্গিবাদীরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়।