খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৫ : পুলিশ স্টাফ কলেজে আয়োজিত বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে সংঘটিত অপরাধ বিষয়ক সম্মেলনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে অপেক্ষাকৃত নতুন হলেও এর উন্নয়নে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে এবং ধর্মনিরপেক্ষতায় উল্লেখযোগ্য রেকর্ড রয়েছে। এসব কারণে সব ধরনের আন্তর্জাতিক অপরাধ সংগঠনগুলোর কাছে বাংলাদেশ বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। আপনারা এই লড়াইয়ে কোনোভাবেই একা নন। তবে ভুল করবেন না যে, এ লড়াইয়ে আপনারাও জড়িত এবং এর থেকে আপনারা নিরাপদ নন। গত ১২-১৪ অক্টোবর পুলিশ স্টাফ কলেজে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তার বক্তব্যটি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পাঠানো হয় ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস থেকে। বলেরাষ্ট্রদূত বার্নিকাটন, আন্তর্জাতিকভাবে সংঘবদ্ধ অপরাধের কাছে সকল দেশই অরিক্ষিত। জনগণের নিরাপত্তার জন্য এটি একটি প্রতিবন্ধকতা, এটি জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে নষ্ট করে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র আইনের শাসনকে বৃদ্ধাংগুলি দেখিয়ে একটি বিকল্প শাসন প্রণয়নকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তিনি বলেন, চোরাচালানের পথ ধরে মাদক অপরাধী চক্র আজকে এমন ধারা বিস্তার ও বহুমুখীকরণ করছে যা পৃথিবীব্যাপী বিভিন্ন দেশের শাসন ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। একটি আন্তর্জাতিক অপরাধের বিস্তার অন্যদেরও পথ দেখায়। উদাহরণস্বরূপ, অন্যথায় আইনতসিদ্ধ পণ্য যেমন সিগারেটের ব্যবসা, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, বন্যপ্রাণী পাচার, অস্ত্র পাচার, মানব পাচার, অর্থ পাচার ও চাঁদাবাজি বৃদ্ধি পেতে পারে। যার ফলাফল হতে পারে বিচার ব্যবস্থা ও সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কার্যক্ষমতার ওপর থেকে আস্থা হারানো এবং যেসব নাগরিক তাদের সরকারের ওপর থেকে বিশ্বাস হারায় তারা এই সহিংস চরমপন্থীদের দলের নিয়োগের শিকারে পরিণত হয়। এটি প্রতিনিয়ত খারাপ আকার ধারণ করেছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশকেই এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। রাষ্ট্রদূত বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধের প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলায় বাংলাদেশ একা নয় এবং এই দেশটি সহিংস চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদ দমনে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করে বেশ দ্রুততার সাথে পদক্ষেপ নিয়েছে। এই বছরের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এই সহিংস চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের সর্বজনীন হুমকিকে চিহ্নিত করতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও অন্যান্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে এক হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থা বৈশ্বিক শান্তি ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা এবং এটি একটি বৈশ্বিক প্রতিবন্ধকতা। এই ধরনের হুমকিগুলো কার্যকরভাবে চিহ্নিতকরণে রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা ও তিনি সকল দেশকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। : তিনি বলেন, আমাদের একসাথে কাজ করতে হবে, কেননা আমরা বিশ্বায়নের পৃথিবীতে বাস করি। ভালো বা মন্দ যা-ই হোক এক দেশের ঘটনা অন্য দেশের নাগরিকদের ওপর প্রভাব ফেলে। দক্ষিণ এশিয়া একটি বিশাল জনবহুল এবং দ্রুত উন্নয়নশীল অঞ্চল। এই অঞ্চলের উন্নয়ন এবং কল্যাণ আমার দেশসহ দূরবর্তী দেশগুলোর ওপরও প্রভাব ফেলে। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি এবং স্থিতিশীলতা পুরো পৃথিবীকে আরো বেশি শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল করতে অবদান রাখছে। আমাদের আরও মনে রাখা উচিৎ যে, সন্ত্রাসী ও বিদ্রোহীরা আন্তর্জাতিকভাবে সংঘটিত অপরাধকে ব্যবহার করে থাকে নিজেদের কর্মকান্ড, অর্থায়ন ও সংগঠিত করছে। আন্তর্জাতিকভাবে সংঘটিত অপরাধ বিশেষভাবে শঠতাপূর্ণ হয়ে থাকে। কেননা এর সঙ্গে যুক্ত সবাইকে অপরাধীর মতো মনে হয় না, কিংবা তারা নিজেরাও হয়তো জানেন না যে, তারা অপরাধমূলক কাজের সহযোগী হচ্ছেন। আইনজীবীরা অজ্ঞাতসারে হয়তো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে যেমন নিজস্ব লগ্নীবিহীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অথবা বিদেশে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে সহায়তা করে থাকতে পারেন; ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ ও ব্যাঙ্ক কর্মকর্তাগণ নাও জানতে পারেন যে, তারা অপরাধী সংগঠনের অর্থ পাচার করছেন; এবং বৈধ নৌ পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলো হয়তো নাও জেনে থাকতে পারেন যে, পাচার কর্মকান্ড লুকাতে তাদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে। : তিনি বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অপরাধী এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে আমরা ছত্রভঙ্গ করে দিতে পারি, যাদেরকে একসময় দুর্ভেদ্য ও ধরা ছোঁয়ার বাইরে বলে মনে করা হতো। এই প্রচেষ্টায় যোগ দেয়ার মাধ্যমে অন্যান্য ক্ষেত্রেও সম্পর্ক উন্নয়ন সম্ভব, বিশেষ করে সরকার পর্যায়ে। উদাহরণ হিসেবে, আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অবশ্যই নিজেদের মধ্যে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সাথে সহযোগিতার ক্ষেত্রে মডেল হিসেবে কাজ করতে হবে। বিনামূল্যে সংগৃহীত, পরীক্ষাকৃত ও ভাগাভাগি করা তথ্য আন্তর্জাতিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি শক্তিশালী অস্ত্র। তথ্য ধরে রাখা হলে জীবন হুমকির সম্মুখীন হয়। এটা খুবই জরুরি যে, এই অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা সরকারের ভেতরে প্রবেশ করাতে হবে যেন এটি স্বভাবজাত হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং আইনজীবীদের মধ্যে দৃঢ় কর্মসম্পর্ক দরকার। যে মামলাগুলো তারা করেন সেগুলোর কার্যকর দন্ডাদেশ প্রদানের জন্য এবং আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখতে বিচারপতির সভায় তা পাস করতে হবে। : রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, সম্মিলিতভাবে বহুজাতিক সংঘটিত অপরাধ দমন করতে আন্তর্জাতিক ঐকমত্য, বহুমুখী সহযোগিতা এবং সরকারি-বেসরকারি প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকার, শিল্প ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, সুশীল সমাজ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নতুন ও উদ্ভাবনী সহযোগিতা প্রয়োজন। এবং আমাদেরকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে যেন অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি তারা নির্ভুল ও নিরপেক্ষভাবে আন্তর্জাতিকভাবে সংঘটিত অপরাধের প্রভাব সম্পর্কে সংবাদ প্রতিবেদন তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে যারা সর্বদাই তাদের দেশের মানুষদের আত্মত্যাগ করে যারা এই দেশ স্বাধীন করেছেন। এই নিবেদিতপ্রাণ মানুষদের স্বপ্ন রয়েছে যে, কিভাবে এগিয়ে যেতে হবে এবং কি ধরনের দেশ আপনারা তৈরি করতে চান। আপনাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে আমি প্রস্তুত। : :
– See more at: http://www.dailydinkal.net/2015/10/16/20104.php#sthash.fShiqn1N.dpuf