খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৫ : পশ্চিমবঙ্গের আদালত নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের আসামি নূর হোসেনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার পর এখন দিল্লির পদক্ষেপের অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ সরকার।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, “ভারত এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমাদের জানাবে। আমাদের দিক থেকে আমরা রেডি আছি।”
এজন্য কতদিন লাগতে পারে জানতে চাইলে মন্ত্রী শুধু বলেন, “হয়ে যাবে।”
নূর হোসেনকে ফেরত পাঠানোর জন্য তার বিরুদ্ধে দায়ের করা অবৈধ অনুপ্রেবেশের মামলা তুলে নিতে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ যে আবেদন করেছিল, শুক্রবার তা মঞ্জুর করে উত্তর চব্বিশ পরগণার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালত।
এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনার পথ প্রশস্ত হয়।
২০১৪ সালের এপ্রিলের নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাত জনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনার পর পালিয়ে ভারতে গিয়ে ধরা পড়েন সিদ্ধিরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন।
তখনই তার বিরুদ্ধে ভারতের পাসপোর্ট আইনে মামলা হয়; গতবছর ১৮ অগাস্ট সেই মামলায় অভিযোগপত্র দেয় বাগুইআটি থানা পুলিশ।
এরই মধ্যে গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন এবং র্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আদালতে অভিযোগপত্র দেয় বাংলাদেশের পুলিশ। নূর হোসেনকে ফেরাতে চলতে সরকারি পর্যায়ে চলতে থাকে চিঠি চালাচালি, ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিসও জারি হয়।
এর এক পর্যায়ে গত মার্চে ভারতের সংকেত পেয়ে নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশের একটি প্রতিনিধি দলকে বেনাপোল সীমান্তে পাঠানোর জন্য চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভারতে মামলা থাকায় সে সময় নূর হোসেনকে ফেরানো যায়নি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “তখন ভারত খবর দিয়েছিল বলেই বেনাপোল দিয়ে নূর হোসেনকে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এখন আর কোনো সমস্যা হবে না বলে আমরা আশা করছি।”
সরকারি পর্যায়ে আলোচনায় ভারত নূর হোসেনকে ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে গত ২৫ অগাস্ট নূর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেওয়ার আবেদন করেন পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কৌঁসুলি শান্তময় বসু। বারাসাতের আদালত শুক্রবার ওই আবেদন মঞ্জুর করে নূর হোসেনকে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা যত দ্রুত সম্ভব তাকে ফিরিয়ে দিতে চাই। বহিঃসমর্পণ চুক্তির আওতায় তা হতে পারে। আবার অন্য আইনি পথও আছে।”
২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত বহিঃসমর্পণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশি বন্দি উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের পাওয়ার সুযোগ ঘটলেও এই চুক্তির আওতায় এখনো কোনো দেশ কাউকে হস্তান্তর করেনি।
তবে চুক্তি না থাকা অবস্থায় ২০০৭ সালের শেষে দিকে এবং ২০০৮ সালের প্রথম দিকে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন, তাজ, লম্বু সেলিম, ক্যাপ সোহেল, ইব্রাহিমসহ আটজনকে ভারত থেকে বাংলাদেশে আনা হয়।
বিএসএফ-এর সাবেক উপ মহা পরিদর্শক সমির কুমার মিত্র বলেন, “পুশ ব্যাক করা হলে অনেক কম ঝামেলায় এ প্রক্রিয়া সারা সম্ভব। বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে কথা হবে, তারা এক সময়ে এক জায়গায় আসবে, যাকে পাঠানোর কথা তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে- এই হল পুশব্যক। অবৈধ অনুপ্রেবেশকারী অনেককেই এর আগে এভাবে ফেরত দেওয়া হয়েছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, “নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা প্রথম থেকেই সক্রিয় ছিলাম। এখন দুই দেশের কূটনৈতিক পর্যায়ে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারিত হবে। হস্তান্তরে দিনক্ষণ ও স্থান নির্ধারিত হলে তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে আমরা তাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত রয়েছি।”