Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, শনিবার , ১৭ অক্টোবর ২০১৫: পদ্মা সেতুর মূল পাইলিং (ভিত্তি) ও নদীশাসনের কাজ 1আগামী ডিসেম্বরে শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করবেন। তবে দিন-তারিখ এখনো ঠিক হয়নি। সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন, এর জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নিশ্চিত করা এবং কাজের অগ্রগতি সরেজমিন দেখার জন্য সরকারের সচিবদের পরবর্তী সভা পদ্মা সেতু প্রকল্পের কটেজে করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে আজ শনিবার এ সভা হওয়ার কথা। সচিবালয়ের বাইরে এ ধরনের সভা নিকট অতীতে হয়নি বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়। সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, এবারের সচিব সভায় তিনটি এজেন্ডা রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পদ্মা সেতুর বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতার বিষয়টি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, সচিবদের আনুষ্ঠানিক সভা ছাড়াও সেখানে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরবে। এরপর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করা হবে। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, সেটা বোঝা। তিনি বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনীতিতে তা নানা দিক থেকে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সচিবদের সে বিষয়েও ধারণা দেওয়া হবে। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরার মধ্যে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে কাজ চলছে। সরকার ২০১৮ সালের মধ্যে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। সেতুর ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন। নিচে থাকবে রেললাইন। যানবাহন চলাচলের পথ হবে চার লেনের, ২২ মিটার চওড়া। দুই পাড়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাই, নকশা প্রণয়ন, জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, পুরো প্রকল্প এখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তবে সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাতে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ও ফরিদপুরের ভাঙ্গার মধ্যে রেলসংযোগ চালু করা যায়, সেই লক্ষ্যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেতু বিভাগ থেকে জানা গেছে। মূল পাইলিং কাজের আগে নভেম্বরের শুরুতে আরেকটি পরীক্ষামূলক পাইলিং করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। এখন এর জন্য প্রকল্প এলাকার মাওয়া প্রান্তে স্টিলের কাঠামো তৈরি এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্র স্থাপনের কাজ চলছে। গত মাসে একটি পরীক্ষামূলক পাইলিং হয়েছে। দুটি পরীক্ষামূলক পাইলিং শেষে মূল পাইলিংয়ের কাজ শুরু হওয়ার কথা। আর নদীশাসনের মূল কাজ শুরুর আগে প্রায় চার মাস ধরে চলছে নদী খনন ও মাটি পরীক্ষার কাজ। সার্বিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়ার লক্ষ্যে আগামী সোমবার সেতু বিভাগে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। এতে প্রকল্প কর্মকর্তা ছাড়াও দেশি-বিদেশি পরামর্শক ও সব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকের প্রস্তুতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, বর্ষা ও নদীভাঙনের কারণে প্রস্তুতি কিছু ব্যাহত হয়েছে। মূল পাইলিং ও নদীশাসনের মূল কাজ নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা কিছুটা পিছিয়ে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই অনুযায়ীই প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচি তৈরি করা হচ্ছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নভেম্বরের শেষে পাইলিং ও নদীশাসনের কাজ শুরু হবে ধরেই সব প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রী কাজের উদ্বোধন করবেন। সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। পদ্মার কাজ আশানুরূপ গতিতেই চলছে। নকশা অনুসারে, পদ্মা সেতুতে ৪২টি পিলার হবে। প্রতিটি পিলারের নিচে তিন মিটার পরিধির ছয়টি করে স্টিলের পাইল বসানো হবে। এগুলো ভারী হাতুড়ি ও যন্ত্র দিয়ে নদীর তলদেশের মাটি থেকে ১১৪ থেকে ১২০ মিটার পর্যন্ত গভীরে বসানো হবে। পাইল বসানোর জন্য জার্মানি থেকে ভারী হাতুড়ি আনা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে ভারী ক্রেনও। প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি ২৫ শতাংশ। এর মধ্যে নির্মাণ অবকাঠামো (সার্ভিস এলাকা), সংযোগ সড়কের কাজ সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে। পদ্মা সেতুর মূল কাজ পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে মূল সেতু, নদীশাসন, দুই তীরে দুটি সংযোগ সড়ক নির্মাণ, নির্মাণ অবকাঠামো তৈরি। মূল সেতুর কাজ করছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। নদীশাসনের কাজ পেয়েছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই তীরে সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণকাজ করছে বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড। অবকাঠামোর মধ্যে থাকবে অফিস ভবন, ল্যাবরেটরি, মসজিদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডুপ্লেক্স ভবনের মোটেল, ওভারহেড পানির ট্যাংক, বিদ্যুতের সাবস্টেশন, গার্ডদের বাসস্থান, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা। এর অনেক স্থাপনা ইতিমধ্যে নির্মাণ হয়ে গেছে। সূত্র জানায়, এই পাঁচটি কাজের জন্য ২২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকায় ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১ অক্টোবর পর্যন্ত ঠিকাদারদের বিল দেওয়া হয়েছে ৬ হাজার ১৪০ কোটি টাকা, যা মোট খরচের সাড়ে ২৭ শতাংশ। এই বিলের ১৫ শতাংশ নির্বাচিত হওয়ার পরপরই অগ্রিম হিসেবে ঠিকাদারদের দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধনী অনুসারে, পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ, পরামর্শকদের ব্যয়, নদীতীর সংরক্ষণ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে।