Thu. Aug 7th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, রবিবার , ১৮ অক্টোবর ২০১৫ : গভীর রাত। উত্তর আফগানিস্তানের কুন্দুজ শহরের 20পথঘাট বেশ সুনসান। আচমকা রাতের নিঃস্তব্ধতা খান খান করে মহল্লায় ঢুকল হানাদাররা। তালিবান- ঘুম ভাঙা চোখে ঘরে ঘরে ফিসফাস। তালেবানের দাপটে কুন্দুজ ও আশপাশের এলাকায় ইদানীং প্রশাসন নেই হয়ে গেছে। রাত নামলেই বাড়তে থাকে কালাশনিকভের শাসানি। এমনই এক থমথমে রাতে ঘটে এই হানা। এক মহিলা রেডিও সঞ্চালকের বাড়ির সিঁড়িতক গড়িয়ে এল হানদারদের বুটের আওয়াজ। মহিলা ততক্ষণে বুঝে গেছেন, কী উদ্দেশ্যে এসেছে রাতের এ ‘অতিথি’রা। বিছানা ছেড়ে, ঘর ছেড়ে পা টিপে টিপে বাড়ির বেসমেন্টে গিয়ে লুকোলেন তিনি। এর মধ্যেই দরজায় টোকা পড়ল। কপাট না খুলেই মহিলার চাচা জিজ্ঞাসা করলেন, কী চাই? ‘এ বাড়িতে একজন চাকুরিজীবী মহিলা আছেন বলে খবর আছে’- তালেবান কম্যান্ডারের শীতল কণ্ঠস্বর। গৃহকর্তা অস্বীকার করলেন। তালেবানরা তাঁকে দরজা খুলতে বাধ্য করল। টেনে নিয়ে গেল ঘরের বাইরে। কয়েক মুহূর্তের নীরবতা। তার পরই বিকট শব্দে আগুন উগরে দিল কালশনিকভ। রেডিও সঞ্চালকের চাচার নিথর দেহ লুটিয়ে পড়ল রাস্তায়। দু’দিন ধরে ওখানেই পড়ে থাকে তাঁর লাশ। মৃতদেহ তুলে এনে দাফনের ব্যবস্থা করবে কার এত হিম্মত! এখন এটাই হলো কুন্দুজের নিত্যদিনের চিত্র। শুধু কুন্দুজ নয়, আফগান মুলুকের সব তালেবান মুক্তাঞ্চলেই এখন চাকুরিজীবী মহিলাদের খোঁজে বাড়ি বাড়ি চলছে তল্লাশি। তালেবানের কড়া ফতোয়া, স্বামীর সঙ্গে ছাড়া বাড়ির চৌকাঠ পেরুবে না মেয়েরা। চাকরি করা চলবে না কিছুতেই। নির্দেশ না মানলেই মৃত্য। কোনও মহিলাই যাতে আয়-রোজগার করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করতে তালেবানরা এতটাই তৎপর যে, সন্তান জন্ম দেয়ার সময় মায়েদের পাশে থাকেন যে আয়ারা, তাদের পেশার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে। যে মেয়েরা ফতোয়া না মেনে চাকরি করেন, তাদের হয় খুন হতে হচ্ছে, না হলে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বন্দিশিবিরে। সেখানে রোজ তালেবান ‘যোদ্ধা’রা বন্দি মহিলাদের ধর্ষণ করছে বলে দাবি করেছে এক মহিলা পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তালেবানরা কুন্দুজে মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত বেশ কয়েকটি রেডিও স্টেশন তছনছ করেছে। যে সব অফিসে মহিলারা চাকরি করেন, সেখানে হানা দিয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। কম্পিউটার তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। লুঠতরাজ চালিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে মেয়েদের স্কুল। আর মহিলাদের সাহায্যার্থে গড়ে ওঠা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোকে সমূলে বিনাশ করা হয়েছে। তালেবানের ভয়ে বা পরিজনদের হাতে ‘অনার কিলিং’-এর আতঙ্কে আফগানিস্তানে অনেক মেয়ে এখন ঘরছাড়া। কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই পলাতক মেয়েদের আশ্রয় দিচ্ছে। কিন্তু কুন্দুজ বা কান্দাহারে সেই আশ্রয় শিবির চালানো অসম্ভব। এই সব মুক্তাঞ্চলে যখন তখন হানা দেয় ঘাতক বাহিনী। আশ্রয় শিবির তছনছ করে, আশ্রিতাদের ধর্ষণ করে, খুন করে। তাই অসহায় মেয়েদের উদ্ধার করে এখন কাবুল বা তার কাছাকাছি কোথাও পাঠিয়ে দিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলো। তাতেও নিস্তার মিলছে না। নারীমুক্তি আন্দোলনের কর্মী হাসিনা সরওয়ারি জানালেন, উড়ো ফোনে কয়েক দিন আগেই কেউ জিজ্ঞাসা করেছে, আশ্রয় শিবিরের মেয়েরা কোথায়? প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও, হাসিনা সামলে নেন দ্রুত। কড়া গলায় জানিয়ে দেন, মেয়েরা কাবুলে নিরাপদে রয়েছে। এর দিন কয়েকের মধ্যেই হাসিনার বাড়িতে কাগজে মোড়া বিয়ের কার্ড পাঠিয়েছে তালিবানরা। চিঠিতে লিখেছে, তালিবান কমান্ডারের সঙ্গে হাসিনার বিয়ে দেয়া হবে। এই হুমকি হালকাভাবে নিতে পারছেন না তিনি। জানাচ্ছেন, এক সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রীকে সম্প্রতি তুলে নিয়ে গিয়ে কমান্ডারের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে তালেবানরা। সুযোগ পেলেই হাসিনা সরওয়ারিরও একই হাল করবে তারা। তবু থামছেন না হাসিনারা। আবার নিশ্চিতভাবে বলতেও পারছেন না, কত দিন চালানো যাবে এই লড়াই।

অন্যরকম