খোলা বাজার২৪, রবিবার , ১৮ অক্টোবর ২০১৫ : মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৮ এবং ১৬ নিয়ে বেশি বেশি বিতর্ক করা হয়েছে। ফলে ১৬ বছরের কথাটাই মানুষের কাছে চলে গেছে। সরকার বিয়ের ক্ষেত্রে ১৮ বছর থেকে এক চুলও নড়বে না। আর যেন এ প্রসঙ্গ না আসে। আইনে কোনো শর্ত রাখব, নাকি তা নীতিতে থাকবে তা নিয়ে চিন্তা করছি।’ আজ রোববার ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এবং ‘আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট’ আয়োজিত ‘বাল্যবিবাহ: পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। মতবিনিময়ে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ পরিস্থিতির কথা প্রত্যাহার না করে আলোচনা করেন। সুপারিশ করেন। আমরা সব সুপারিশ মনোযোগ সহকারে দেখব। এখন আইনের খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং এ আছে। বিভিন্ন ধাপ পার হয়ে সংসদে যাওয়ার পরও আলোচনার সুযোগ থাকবে। আপনারা টেনশন করবেন না। এমন কোনো আইন হবে না যা দেশের জন্য ক্ষতিকারক হয়।’ তবে প্রতিমন্ত্রী বাল্যবিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ কারণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এখনকার মেয়েরাও অস্থিরচিত্ত। বিয়ের জন্য পাগল পাগল হয়ে যায়। বিয়ের আগে গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছে তার সংখ্যা খুবই কম। তারপরও বিভিন্ন সময় রাস্তায় নবজাতককে ফেলে যাচ্ছে কেউ কেউ। সংখ্যাটা বাড়তে থাকলে তা হবে কঠিন পরিস্থিতি। তাই এ ধরনের বিশেষ পরিস্থিতির কথা আইনে হয়তো থাকবে না, নীতিতে থাকবে।’ মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে। বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৪ নামে আইনের এই খসড়া মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোও হয়েছে। খসড়ায় উল্লেখ আছে, ‘যুক্তিসংগত কারণে মা-বাবা বা আদালতের সম্মতিতে ১৬ বছর বয়সে কোনো নারী বিয়ে করলে সেই ক্ষেত্রে তিনি “অপরিণত বয়স্ক” বলে গণ্য হবেন না।’ খসড়া আইনটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৮ ডিসেম্বর যে অনুশাসন দিয়েছেন, তাতে বলা হয়েছে, ‘বিয়ের বয়স ১৮, তবে পিতামাতা বা আদালতের সম্মতিতে ১৬ বছর সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। সামাজিক সমস্যা কম হবে।’ রাজধানীতে ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে আজিমুর রহমান কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণকারীরা বাল্যবিয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ কারণ বা শর্ত নিয়েই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সভার সভাপতি আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এবং আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে বিনীতভাবে আবেদন করছি, আইনগত সুরক্ষা দিয়ে বিপদগ্রস্ত হওয়া থেকে যাতে আমাদের রক্ষা করে।’ মতবিনিময় সভার বিশেষ অতিথি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল ইসলাম বাল্যবিয়ে নিরোধ আইনে জনগণের মতামতের প্রতিফলন যাতে ঘটে সে প্রত্যাশা করেন। তিনি এর আগে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর সময়ই আইনের খসড়া তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রায় দুই বছর ধরে আইনের খসড়াটি আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং বা যাচাই বাছাইয়ের জন্য আছে উল্লেখ করে তিনি আইনটি যাতে দ্রুত পাশ হয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি সে আহ্বান জানান। সভায় মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, দেশের আইনে ১৮ বছরের কম বয়সীরা শিশু। তাই এ বয়সের আগে বিয়ে বলেই তা বাল্যবিয়ে হবে। সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আমরাই পারি পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোটের জাতীয় সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক। জোটের সদস্য আইনজীবী ফরিদা ইয়াসমীন ১৯২৯ সালের বাল্যবিয়ে নিরোধ আইন এবং বর্তমান আইনের খসড়ার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। জোটের আরেক সদস্য চলচ্চিত্র নির্মাতা শবনম ফেরদৌসী বাল্যবিয়ে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপন করেন। এ ছাড়া সভায় বাল্যবিয়ে বিষয়ক গবেষণার তথ্য উপস্থাপন করেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী বনশ্রী মিত্র।