খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর ২০১৫ : চটকদার বিজ্ঞাপনের ভাষায়, এটি হলো দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল যুদ্ধ। শহরের নানা প্রান্তে বিলবোর্ডে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘ফুটবলান্দনে মেতে উঠুন।’ আক্ষরিক অর্থেই আজ থেকে ফুটবল উৎসবে মেতে ওঠার উপলক্ষ চট্টগ্রামবাসীর সামনে।
শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের হাওয়ায় চট্টগ্রাম শহর এখন দুলছে। এখানে-ওখানে অসংখ্য ফুটবল-ব্যানার। সাধারণ মানুষের মধ্যে আস্তে আস্তে আগ্রহও বেড়েছে। একসময় ঢাকা লিগের সঙ্গে ভালোই টক্কর দিত চট্টগ্রাম লিগ। সময়ের স্রোতে চট্টগ্রামের ফুটবলে চলছে বিশাল শূন্যতা। এই আয়োজনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ফুটবলে আগের সুদিন ফিরে পাওয়ার আশা আয়োজক চট্টগ্রাম আবাহনীর।
শুধু চট্টগ্রাম কেন, বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলেই অনেক দিন পর যেন এক পশলা বৃষ্টি এল। কোনো ক্লাবের উদ্যোগে দেশে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট এই প্রথম। ২০০৬ সালে এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপের পর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামেও আন্তর্জাতিক ফুটবল ফিরছে নয় বছরের বিচ্ছেদ কাটিয়ে। বিকেল সাড়ে চারটায় ঢাকা আবাহনী-করাচি ইলেকট্রিক ক্লাব উদ্বোধনী ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে ১১ দিনের আয়োজনের, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় চট্টগ্রাম আবাহনী-ইস্টবেঙ্গল লড়াই।
উপলক্ষটা তো সবার জানা। আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শেখ কামালের নামটা দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে দিতেই এই আয়োজন—কথাটা অনেকবারই বলেছেন আয়োজক চট্টগ্রাম আবাহনীর কর্মকর্তারা।
এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) অনুমোদিত হওয়ায় নিয়মকানুন সবই কঠোর। আজ জাঁকজমকপূর্ণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ছিল আয়োজকদের, কিন্তু চীনা ম্যাচ কমিশনার চুয়াং চিন অনেক কিছুতেই দিয়েছেন বাগড়া। ওটা করা যাবে না, ওটা করা নিষেধ—তাঁর এমন শক্ত মনোভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কলেবর গেছে কমে। কয়েক মিনিটের একটা সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠান হবে, এই যা।
সবার চোখটা আসলে ট্রফিতে, যেটি হাতে তুলতে লড়ছে আটটি দল। বাংলাদেশের তিনটির সঙ্গে বিদেশি পাঁচ। ভারতের দুটি। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের একটি করে। সেদিক থেকে এটিকে বিজ্ঞাপনের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে ‘দক্ষিণ এশিয়ান ফুটবল যুদ্ধ’ বলা যেতেই পারে।
সেই ‘যুদ্ধে’ শামিল সব দলকে নিয়েই কাল হয়ে গেল আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন। যেখানে ট্রফি জয়ের আশা ব্যক্ত করেছেন প্রায় সব দলের কোচ-অধিনায়কই। তবে শুরুতে সবাই অভিন্ন কণ্ঠেই গ্রুপ পর্ব পেরোনোর কথা বললেন। ‘সেমিফাইনালে উঠি আগে, তারপর ফাইনাল’ৃপ্রায় সব কোচ এভাবে তাঁদের লক্ষ্যের কথা বলে গেলেন স্থানীয় একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে।
বাংলাদেশের তিন দলের অধিনায়ককে একটু বেশিই উজ্জীবিত লাগল। ঢাকা আবাহনীর প্রাণতোষ কুমার যেমন বললেন, ‘এই টুর্নামেন্ট আমাদের ক্লাব ফুটবলের জন্য একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।’ মোহামেডানের অরুপ কুমার বৈদ্যর কাছে ঘরের মাঠে নিজেদের তুলে ধরার চ্যালেঞ্জও এটি। সেই চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি বলেও জানাতে ভোলেননি, ‘আমাদের ভালো খেলতে হবে, নিজেদের সেরাটা মাঠে ঢেলে দিয়ে জিততে হবে প্রতিটি ম্যাচই।’
কোচ শফিকুল ইসলাম মানিকের পাশে বসে চট্টগ্রাম আবাহনীর অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলির কণ্ঠেও ঝরল একই মন্ত্র। টুর্নামেন্টটাকে তিনি দেখছেন এভাবে, ‘জাতীয় দলের জার্সি গায়ে অনেক ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু ক্লাবের জার্সিতে তেমন নয়। আমি গর্বিত এই ভেবে যে আমাদেরই একটা ক্লাব এমন আন্তর্জাতিক আয়োজন করছে।’
সেই আয়োজনের আদ্যোপান্ত এখন পর্যন্ত মোটামুটি ভালোই। প্রচারণা শুরুতে যতটা ছিল, তার চেয়ে বেড়েছে। তবে একটা জায়গায় অতৃপ্তি রয়েই গেছে। এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের মাঠটা অমসৃণ, ভালোভাবে তৈরি করতে সময় মেলেনি। কারণ, এই মাঠেই স্থানীয় লিগে খেলা চলছিল কদিন আগেও। খেলা বন্ধ করে মাঠ তৈরি করা হচ্ছে কয়েক দিন ধরে।
চট্টগ্রাম আবাহনীর সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক চৌধুরী অবশ্য আশাবাদ রাখলেন, ‘মাঠ কোনো সমস্যা হবে না। ম্যাচ কমিশনার অনুমোদন করে দিয়েছেন। আশা করি, চট্টগ্রামবাসী দুর্দান্ত একটা টুর্নামেন্ট উপভোগ করতে পারবে।’
শুধু চট্টগ্রামবাসীর টুর্নামেন্ট কেন হবে! টুর্নামেন্টের সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন উত্তর দেওয়ার সুরেই বলছিলেন, ‘এই টুর্নামেন্ট গোটা দেশের ।’
সত্যি তাই। শেখ কামাল টুর্নামেন্ট গোটা দেশের ফুটবলের। সবার।
আজকের খেলা
ঢাকা আবাহনী-করাচি ইলেকট্রিক
(বিকেল সাড়ে ৪টা)
ইস্টবেঙ্গল-চট্টগ্রাম আবাহনী (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা)