Wed. Mar 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ২০ অক্টোবর ২০১৫ : এ এক অন্যরকম কুকুর কাহিনী। এই কুকুরটি রেলে 30চেপেছিল। যাচ্ছিল উড়িষ্যায়। উঠেছিল হাওড়া থেকে। কথা ছিল উড়িষ্যার খুরদা রোড স্টেশনে নামার। নেমে গেলেই গল্পটা শেষ হয়ে যেতো। তা আর হয়নি। রবিবার সকালে হাওড়া-পুরী এক্সপ্রেস হঠাৎ থমকে যায় উড়িষ্যার খুরদা রোড স্টেশনে। খানিকক্ষণ পর শুরু হয় যাত্রীদের চেঁচামেচি। কিন্তু ট্রেন আর নড়ে না। নড়বে কী করে? কুকুরের টিকিট তো ওই খুরদা রোড পর্যন্তই। কুকুর নেমেছে স্টেশনে, কিন্তু মনিবের পাত্তা নেই। খোঁজ খোঁজ। মনিব ছাড়া কুকুরকে কার হাতে সঁপে দেওয়া হবে! অতএব পুরী এক্সপ্রেস ঠায় দাঁড়িয়ে খুরদা রোডেই। এ দিকে যাত্রীবিক্ষোভ বাড়তে থাকে। খবর যায় রেলের কন্ট্রোলরুমে। বেগতিক দেখে, মালিকহীন এই কুকুরসহ-ই ট্রেন পুরী নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কুকুরের সঙ্গে মনিবের বিচ্ছেদ হল কী করে? সে আরেক কাহিনী। রেল সূত্রের খবর, কুকুরের মালিক সেনা-জওয়ান বীরসেন সুবুদ্ধিও হাওড়া থেকে খুরদা রোডের টিকিট কেটেছিলেন। পোষ্য কুকুর ‘স্নুপি’কে তিনি নিয়মমাফিক গার্ডের কামরায় উঠিয়েও দেন। ডগবক্স-এর ভিতরে বিছানা পেতে তাকে আরামসে শুইয়ে ফের প্ল্যাটফর্মে নামেন নিজের সংরক্ষিত কামরার খোঁজে। এর পরেই ঘটে বিপত্তি। জওয়ান তার কামরায় পৌঁছনোর আগেই ট্রেন স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এ অঘটন যে ঘটেছে, পরের দিন সকালে ট্রেন খুরদা রোড পৌঁছানো অবধি তা ধরা পড়েনি। কুকুর গন্তব্যে পৌঁছার পরই খোঁজ পড়ে মালিকের। এদিকে ‘পুরী এক্সপ্রেস’ খুরদা রোড ছেড়ে যাওয়ার ঘণ্টাখানেক বাদেই সেখানে পৌঁছায় ‘অমরাবতী এক্সপ্রেস’। পুরী এক্সপ্রেসে উঠতে না পেরে এই ট্রেনেই উঠে পড়েছিলেন জওয়ান বীরসেন। খুরদা রোডে পড়ি-মরি করে ট্রেন থেকে নামেন তিনি। আকুল হয়ে তার কুকুর স্নুপির খোঁজ করেন। স্টেশনে রেলকর্তারাই তখন জানান, তার কুকুর পুরী চলে গেছে। জওয়ান কী করেন? খুরদা রোড থেকে তখন পুরীর উদ্দেশে রওনা দিচ্ছে ‘আমদাবাদ-পুরী এক্সপ্রেস’। বুদ্ধি করে করে তাতেই চেপে বসেন জওয়ান। ভারতে ট্রেনে কুকুর কাহিনী অবশ্য এটাই প্রথম নয়। এর আগেও একবার দিল্লিমুখী পূর্বা এক্সপ্রেসে দু’টি ডোবারম্যানকে সামলাতে গিয়ে বেচারা গার্ডের প্রায় আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার দশা হয়েছিল। ট্রেন ছাড়তেই দুই ডোবারম্যান ডগবক্স ভেঙে বেরিয়ে এসেছিল। মানিকজোড়ের দাঁতখিচুনি দেখে কয়েক মিনিটেই গার্ড সংজ্ঞা হারান। পরে শেওড়াফুলি স্টেশনে দুই সারমেয়কে বের করে নতুন গার্ড এনে ট্রেন চালানো হয়। এ যাত্রা ‘স্নুপি’ অবশ্য রেলকর্মীদের সেভাবে ভোগায়নি। ডগবক্সের আরামে গুটিসুটি মেরে লম্বা রেলসফরে দিব্যি ঘুম দিয়েছে সে। এক বছর তিন মাসের ‘কিশোর’, শঙ্কর প্রজাতির চতুষ্পদটি পুরীতে নেমে জুল জুল চোখে তার মালিকের খোঁজ করছিল। জওয়ানটি পুরী এসে পৌঁছানোর পরে তার প্রতীক্ষার অবসান ঘটল। পুরী স্টেশনের রেলকর্মীরা জানান, অনেকক্ষণ পরে আপনজনকে দেখে ‘স্নুপি’ আবেগ সামলাতে পারেনি। আনন্দে ল্যাজ নেড়ে প্রচন্ড লাফাচ্ছিল। পরে ফোনে ধরা হলে স্নুপির মালিকের কণ্ঠস্বরেও মিলল অপার আনন্দের ছোঁয়া। জওয়ান বললেন, ‘ছাড়াছাড়ি হওয়ার পরে রাতভর টেনশনে ছিলাম। পুরীতে ওকে দেখে ধড়ে প্রাণ এল।