Sun. Jul 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর ২০১৫ ; গণমাধ্যমকে দেয়া আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের 2হুমকিতে সতর্ক চট্টগ্রামের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ হুমকির সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম জড়িত কিনা বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। সবক’টি বড় খবরের কাগজ এবং নিউজ চ্যানেলের দফতরে ইমেইল পাঠিয়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ‘নির্দেশ’, সংবাদমাধ্যমে জেহাদের বিরোধিতা চলবে না। আর সমস্ত মহিলা কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হবে। কারণ শরিয়ত অনুযায়ী পর্দার অন্তরালে থাকা তাঁদের জন্য বাধ্যতামূলক। ফতোয়া না মানলে সাংবাদিকদের মাথা কেটে নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছে ই-মেইলে। সোমাবার ধহংধৎঁষষধযনধহমষধনফ@মসধরষ.পড়স থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের দফতরে মেইলটি পাঠানো হয়। চিঠির প্রেরকের ঠিকানা— আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, প্রধান কার্যালয়, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ। প্রেরকের নাম আবদুল্লাহ বিন সালিম, প্রচার সমন্বয়ক, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম। চিঠিতে ‘জেহাদবিরোধী’ খবর প্রকাশ থেকে সংবাদমাদ্যমকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে লেখা হয়েছে, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নির্দেশ এখন থেকে সংবাদমাধ্যমের জন্য আইন। ইসলামের পথে না চললে পরিণতি হবে ভয়াবহ। উঁচু উঁচু ভবন ধুলোয় লুটোবে, সাংবাদিকদের মাথা পড়ে থাকবে ‘ইসলামের সেনা’র পায়ের নীচে। অন্দরমহল ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে মেয়েদের চাকরি করতে যাওয়াও না-পছন্দ আনসারুল্লাহ বাংলা’র। ই-মেইলে বলা হয়েছে, শরিয়ত অনুযায়ী মেয়েদের চাকরি করা ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’। তাই সংবাদমাধ্যমের মহিলা কর্মীদের অবিলম্বে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলাম বিরোধী প্রচারের অভিযোগ তুলে কয়েকজন ব্লগারের নাম উল্লেখ করা হয়েছে হুমকি মেইলটিতে। সেই ব্লগারদের খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে চিঠিতে। সংবাদ মাধ্যমের উদ্দেশ্যে তাদের হুঁশিয়ারি, নাস্তিকদের সহায়তা করলে ভয়ঙ্কর ফল ভুগতে হবে। ‘‘আপনাদের বাক স্বাধীনতা যদি আমাদের বেঁধে দেওয়া সীমা না মানে, তবে আমাদের ক্রোধ প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য প্রত্যেক সংবাদ মাধ্যম যেন প্রস্তুত থাকে।’’ মেয়েদের কাজ থেকে বরখাস্ত করার পক্ষে মৌলবাদী সংগঠনটির যুক্তি, নারীদের ঘরের বাইরে চাকুরি করা, বেপর্দা হয়ে ঘোরাঘুরি করা শরিয়ত অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই যাঁরা মেয়েদের চাকরি দিচ্ছেন এবং যাঁরা তাঁদের চাকরি করা সমর্থন করছেন, তাঁরা সবাই অপরাধী। ই-মেইলে আর যে সব হুমকি দেয়া হয়েছে, সেগুলি হল, ইসলামবিরোধী বা নাস্তিক শক্তির কোনও প্রচারে সামিল হওয়া যাবে না। ইসলামের সৈনিকদের বিরুদ্ধে কোনও অপপ্রচার চালানো যাবে না। জেহাদি কর্মকাণ্ডের সমালোচনা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। পত্রিকার বিজ্ঞাপনে নারী মডেলের ছবি ব্যবহার করা যাবে না। মেয়েদের ‘বেপর্দা’ ছবি পত্রিকায় ছাপানো যাবে না। বিনোদন পাতা, নৃত্য, গীত, নাটক, সিনেমা এমন যে কোনো শরিয়ত বিরোধী প্রকাশনা থেকে বিরত থাকতে হবে। ‘নাস্তিক’দের মৃত্যুর পরে পত্রিকায় জেহাদ বিরোধী খবর প্রকাশ চলবে না। এই নির্দেশ না মানলে পত্রিকার কর্মী এবং মালিক পক্ষকে নাস্তিক বা তাদের সহায়ক শক্তি হিসেবে গণ্য করে সমূলে উপড়ে ফেলা হবে। দেশের ছ’জন ব্লগার এবং ক’জন প্রবাসী ব্লগারের নামের তালিকা উল্লেখ করে মেলটিতে বলা হয়েছে, সুযোগ পেলেই তাদের খুন করা হবে। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ঘোষণা, ফেসবুক, ব্লগ-সহ যে কোনো মাধ্যমে ইসলামের বিরুদ্ধে বা মাদ্রাসার শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই, লেখককে খুন করা হবে। মৌলবাদীদের হাতে খুন হওয়া ব্লগারদের নাম উল্লেখ করে গর্বের সঙ্গে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ঘোষণা, নাস্তিকতার দিকে কেউ ঝুঁকলেই তাঁর অবস্থা হবে নিলয় নীল, ওয়াশিকুর বাবু বা অভিজিৎ রায়ের মত। একটি নাস্তিককেও বেঁচে থাকতে দেওয়া হবে না। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, “কারা এই ই-মেইল কাণ্ডের পিছনে রয়েছে, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।” বার্তায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদর দপ্তর চট্টগ্রামে বলে উল্লেখ করা হয়। বার্তায় ১৯ অক্টোবর থেকেই এসব নির্দেশনা সংবাদ মাধ্যমের জন্য আইন হিসাবে কার্যকর হবে বলে হুমকি প্রদান করা হয়। এই বার্তায় র‌্যাব ও সিএমপি গণমাধ্যম কর্মী ও কার্যালয়গুলোতে বিশেষ সতর্কতা জারি করে। এই হুমকির সঙ্গে জড়িতদের সনাক্তের কাজ চলছে উল্লেখ করে সিএমপির সহকারী কমিশনার বাবুল আক্তার জানান, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এ হুমকি নিয়ে পুলিশ সন্দিহান। চট্টগ্রামে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান সদর দপ্তর আছে বলে কোনো রকম তথ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে এ মুহুর্তে নেই। জঙ্গি সংগঠনের তৎপরতা নিয়ে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কাজ করছে উল্লেখ করে সিএমপি কমিশনার আব্দুল জলিল মন্ডল বলেন, জঙ্গিদের কাজের সূত্র ধরে তাদের খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ সবসময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সংগঠনটির প্রথম হুমকি ছিলো, গণমাধ্যমে কর্মরত নারীদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। এ ধরনের হুমকিকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন সিএমপি কমিশনার আব্দুল জলিল মন্ডল। তিনি বলেন, দেশের ৫০ শতাংশ কর্মজীবী মানুষ যেখানে নারী, সেখানে এ ধরনের হুমকি দিলেই গণমাধ্যমকে কি তা মানতে হবে? আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ইমেইল বার্তাকে গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি উল্লেখ করে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী বলেন, এই বার্তা পাঠানোর ব্যাপাটির যথার্থতা ও উদ্দেশ্য আগে যাচাই করতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি এজাজ ইউসুফী বলেন, গণমাধ্যমের ওপর হুমকি আশঙ্কার বিষয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এটি নিয়ে কাজ করতে হবে। এই হুমকির যথার্থতা আর উদ্দেশ্য যাচাই করতে হবে। সরকারের এটিকে হালকাভাবে নেয়ার কিছু নেই। এছাড়া এ ধরনের হুমকি দিয়ে জঙ্গি সংগঠনগুলো গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বলে মনে করেন সিইউজে সভাপতি।