Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৫: বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়লে 19দেশের বাজারে দ্রুতই তার প্রভাব পড়ে, মানে দাম বেড়ে যায়। তবে বিশ্ববাজারে দাম পড়লে দেশে কমে অনেক দেরিতে। আবার বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম যত কমে, দেশের বাজারে ততটা কমে না। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার সুফল ক্রেতা পায় সামান্যই। ফলে ঠকে দেশের ক্রেতারা। বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। ঢাকার কার্যালয়ে গত মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংক যে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ নামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে এই বিশ্লেষণগুলোর উল্লেখ রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ এ বছর এখন পর্যন্ত যেসব পণ্য আমদানি করেছে, তার মধ্যে খাদ্যপণ্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৪ শতাংশ। আর যত খাদ্যপণ্য আমদানি হয়েছে, তার ৭২ শতাংশই হলো গম, ভোজ্যতেল ও চিনি। ২০১৪ সালের মে থেকে এ বছরের মে পর্যন্ত—এই এক বছরে তেল, চিনি ও গমের দাম বিশ্ববাজারে এবং দেশে কত কমেছে, তার একটি হিসাব দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, এই এক বছরে বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমেছে ২৭ শতাংশ, কিন্তু দেশে কমেছে ৫ শতাংশ। সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে ১৯ শতাংশ কমলেও দেশে কমেছে ৬ শতাংশ। আর গমের দাম ২৮ শতাংশ কমলেও দেশে কমেছে ৯ শতাংশ। তবে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, এক বছরে দেশে চিনির দাম কমেছে ৯ শতাংশ। বাজারে এখন প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩৯-৪২ টাকায়। এক বছর আগে এর দাম ছিল ৪৩-৪৬ টাকা। খোলা সয়াবিন তেলের দাম এক বছরে কমেছে ১৩ শতাংশ। বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৭২-৭৬ টাকায়, যা এক বছর আগে বিক্রি হতো ৮০-৯০ টাকায়। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তেল-চিনিসহ ভোগ্যপণ্য বিপণনকারী দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে আমরা বেশি বাড়াই, আর দাম কমলে বেশি কমাই না—এ কথা ঠিক না।’ বিশ্ববাজারে তেল-চিনির দাম ১০ শতাংশ বাড়লে দেশে ২-৩ শতাংশ দাম বাড়ে বলে দাবি করেন তিনি। বিশ্ববাজারে দাম বাড়লে দেশে কী হারে বাড়ে এবং কমলে দেশে কী হারে কমে, সেটিও গবেষণায় দেখিয়েছে বিশ্বব্যাংক। দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম ১ শতাংশ বাড়লে-কমলে দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়ে দশমিক ৪৬ শতাংশ। গমের ক্ষেত্রে এ হার দশমিক ২৬ ও ভোজ্যতেলের বেলায় দশমিক ১৬ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কেজিতে ১০ টাকা বাড়লে দেশে বাড়ে ৩ টাকা ৪০ পয়সা। অন্যদিকে বিশ্ববাজারে ১০ টাকা কমলে দেশে কমে ১ টাকা ১০ পয়সা। গমের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কেজিতে ১০ টাকা বাড়লে দেশে বাড়ে ৪ টাকা ৪০ পয়সা। কিন্তু বিশ্ববাজারে ১০ টাকা কমলে দেশে কমে ১ টাকা ৪০ পয়সা। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম চিনি। পণ্যটির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কেজিতে ১০ টাকা বাড়লে দেশে বাড়ে ৪ টাকা ৩০ পয়সা। কিন্তু কমে ৪ টাকা ৮০ পয়সা। কিন্তু এই দাম কমা কিংবা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে মানুষের মত পুরোপুরিই নেতিবাচক। মানুষ মনেই করে না যে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলে দেশেও কমে। এ কারণ বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাংক দেখেছে, বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়ার পর দেশে দ্রুতই এর দাম বেড়ে যায়। কিন্তু দাম কমলে এত দেরিতে দেশে এর দাম কমে যে মানুষ তা মনেই রাখতে পারে না। বিশ্বব্যাংকের গবেষণা বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম বাড়লে দেশে ১ মাস ২৪ দিনের মধ্যে তার দাম বাড়ে। কিন্তু বিশ্ববাজারে চিনির দাম কমলে দেশে কমতে সময় লাগে ২ মাস ৬ দিন। একইভাবে সয়াবিন তেলের দাম বিশ্ববাজারে বাড়লে দেশে বাড়তে সময় লাগে সাড়ে চার মাস। তবে কমতে সময় লাগে ৬ মাস ৯ দিন। আর বিশ্ববাজারে গমের দাম বাড়লে দেশে যেখানে ২ মাস ২৭ দিনের মধ্যে দাম বেড়ে যায়, সেখানে কমতে সময় লাগে ৫ মাস ৯ দিন।