খোলা বাজার২৪ ॥ শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৫: কথাটা প্রায়ই বলেন দেশের ফুটবলের অভিজ্ঞ বোদ্ধারা। মোহামেডান কিংবা আবাহনীর মতো ক্লাবের জার্সির ভার অনেক। সেই জার্সি পরে মাঠে নামলে অনেক সাধারণ খেলোয়াড়ও অসাধারণ হয়ে ওঠেন। দুর্বল দল নিয়েও অনেক সময় এই দুটো দল শক্তিশালী দলকে হাওয়া থেকে মাটিতে নামিয়ে নিয়ে আসে। দেশের ফুটবলের দীর্ঘ দিন ঢাকা মোহামেডান অনুজ্জ্বল, নিষ্প্রভ এক নাম। পেশাদার লিগ জেতা হয়নি একবারও। গত সাত-আট বছরে সাফল্য বলতে কেবল দুটো সুপার কাপ। দলে খুব বড় কোনো নামও নেই। কিন্তু সেই মোহামেডানই শুক্রবার শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় উড়িয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কার সলিড এফসিকে। ৬-১ গোলে হেরে বাংলাদেশের দর্শক-নন্দিত ঐতিহ্যবাহী এই দলের জার্সিও ভারটাও খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে তারা।
ম্যাচে এমনই আক্রমণাত্মক ছিল সাদা-কালো সেনারা। ছবি: শামসুল হক।কোচ জসিমউদ্দিন জোসি খেলোয়াড়ি জীবনে ছিলেন দ্রুতগতির খেলোয়াড়। আশির দশকে বল পায়ে নিয়ে কারিকুরি করে তিনি এগিয়ে যেতেন প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভাঙার লক্ষ্যে। তাঁর প্রশিক্ষণেও মোহামেডানের খেলায় দেখা যাচ্ছে ঠিক একই ব্যাপারটা। মোহামেডানের এই দলটা প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিতেই মাঠে নামে। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতায় নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের স্পিন গার বাজানের বিপক্ষে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেও গোল করতে না পারার ব্যর্থতা পুড়িয়েছিল তাদের। কিন্তু আজ আক্রমণাত্মক ফুটবলের পাশাপাশি স্কোরিং দক্ষতা মোহামেডানের সমর্থকদের মুখে এনে দিয়েছে হাসি। বিদেশি কোনো দলের বিপক্ষে মোহামেডান সর্বশেষ কবে এত ভালো ফুটবল খেলেছে, এ নিয়ে গবেষণারও সুযোগ তৈরি হয়েছে ভালোভাবেই।
খেলার প্রথম থেকেই মোহামেডান ফুটবলাররা ছিল ‘খুনে’ মেজাজে। ম্যাচের দশম মিনিটেই ফয়সাল মাহমুদের গোলে এগিয়ে যায় মোহামেডান। এর আট মিনিটে ব্যবধান ২-০ করেন অনূর্ধ্ব-১৯ বাংলাদেশ দলের মাশুক মিয়া জনি। ৩২ মিনিটে জাতীয় দলের ইতালীয় কোচ ফাবিও লোপেজের ‘পছন্দ’ নাবিব নেওয়াজ জীবন মোহামেডানকে এগিয়ে দেন ৩-০ ব্যবধানে। ২৫ মিনিটে অধিনায়ক অরূপ বৈদ্য স্কোর লাইনে নিজের নাম লেখান। প্রথমার্ধে ৪-০ গোলে এগিয়ে থাকা মোহামেডান দর্শকদের বড় জয়ের স্বপ্নই দেখাচ্ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্নে একটু ধাক্কা লাগে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই। ম্যাচের ৪৭ মিনিটে গোলের নেশায় অল আউট আক্রমণে থাকা মোহামেডানের রক্ষণ একেবারে অরক্ষিত অবস্থায় পেয়ে যান সলিড এফসির ওলায়েমি। গোলরক্ষক আশরাফুল আলম রানাকে কাটিয়ে ঠান্ডা মাথাতেই তিনি ব্যবধান বানিয়ে দেন ৪-১-এ।
৪৯ মিনিটে মোহামেডানের পঞ্চম গোলটি করেন লামিনে কামারা। ৭৫ মিনিটে হাবিবুর রহমান সোহাগের দারুণ এক গোলে বড় জয় নিশ্চিত হয় ঐতিহ্যবাহী সাদা-কালোদের।
বিদেশি দলের বিপক্ষে মোহামেডানের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় ৮-০। ১৯৯৩ সালে মালদ্বীপের ভ্যলেন্সিয়া ক্লাবকে এশিয়ান ক্লাব কাপ প্রতিযোগিতার বাছাইয়ে এই ব্যবধানে হারিয়েছিল মোহামেডান। একই ব্যবধানে ১৯৯৬ সালে লাওসের ইলেকট্রিসিটি ক্লাবকে মোহামেডান উড়িয়ে দিয়েছিল এশিয়ান কাপ উইনার্স কাপে। ১৯৯০ সালে এশিয়ান ক্লাব কাপ প্রতিযোগিতার বাছাইয়ে মালদ্বীপের ক্লাব ল্যাগুন্স মোহামেডানের কাছে হেরেছিল ৫-০ গোলে। মালদ্বীপেরই ভিক্টরি ক্লাব ১৯৮৯ সালের এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে মোহামেডানের কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল ৭-২ গোলে। ১৯৮৭ সালে এশিয়ান ক্লাব কাপ প্রতিযোগিতাতেই নেপালের মানাং মার্সিয়ান্দিকে ৬-২ গোলে হারিয়েছিল মোহামেডান।