Wed. Aug 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৫: দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাংকের ভল্টে বেঁধে দেওয়া সীমার 49বাইরে অতিরিক্ত নগদ অর্থ রাখায় ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে বলে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইন্টিগ্রেটেড সুপারভিশন ম্যানেজমেন্ট সেল থেকে সম্প্রতি চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করার পাশাপাশি যেসব ব্যাংকের ভল্টে সীমার অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের ঘটনার প্রেক্ষাপটে সীমার অতিরিক্ত অর্থ রাখাকে ব্যাংকের সার্বিক ভল্ট ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, “ভল্ট ম্যানেজমেন্টে নীতিমালা আছে। ওই নীতিমালায় কোন ভল্টে কত নগদ অর্থ রাখা যাবে, ওই শাখার অতিরিক্ত অর্থ কোথায় রাখতে হবে এসব বলা আছে।
“এরপরও আমরা দেখছি কোন কোন ব্যাংকের ভল্টে সীমার বেশি অর্থ রাখা হচ্ছে। এটি যেমন ভল্ট ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, তেমন ঝুঁকিও সৃষ্টি করছে।”
প্রত্যেকটি ভল্টের নগদ অর্থ রাখার একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে। ওই সীমার বেশি অর্থ সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা হলে তা প্রথমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের মেইন ব্রাঞ্চে (ওই শাখা যে আঞ্চলিক শাখার অধীনে কাজ করে) পাঠাতে হয়। সেখানকার ভল্টের সীমা অতিক্রম করলে অতিরিক্ত অর্থ ওই এলাকার বাংলাদেশ ব্যাংক অফিস অথবা সোনালী ব্যাংকের চেস্ট শাখায় (বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিবর্তে সোনালী ব্যাংকের যে শাখা কাজ করে) রাখতে হয়।
সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন ভল্টের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ রাখার ঘটনা বেশি ঘটছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের বাবুরহাট শাখার ভল্টের সীমা মাত্র এক লাখ টাকা। কিন্তু আগস্ট মাসে তাদের ভল্টে ৫৭৬ কোটি টাকাও ছিল।”
অতিরিক্ত এই অর্থ রাখায় ঝুঁকি তৈরি হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রতিটি ভল্টেরই একটি বীমা করা থাকে। ভল্টের সীমাই ওই বীমার কাভারেজ পায়। অতিরিক্ত অর্থ কোনো কাভারেজ পায় না।”
গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে অর্থ লুটের ঘটনা ঘটেছে।
সম্প্রতি যশোরে অগ্রণী ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ২১ লাখ টাকা লুট হয়েছে। মৌলভীবাজারে কৃষি ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে ৬ লাখ টাকা নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা।
এর আগে সোনালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখা থেকে ১৬ কোটি টাকা, বগুড়ার আমদীঘি শাখা থেকে ৩২ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখা থেকে ২ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের গাজীপুরের জয়দেবপুর শাখা থেকে ৬০ লাখ টাকা, নোয়াখালীর জমিদারহাট শাখা থেকে ৭ লাখ টাকা লুট হয়েছে।
ভল্টে বাড়তি অর্থ থাকার কথা স্বীকার করে এক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরেছেন রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফরিদউদ্দিন।
তিনি বলেন, “আমরা সব সময়ই ভল্টের সীমার মধ্যে অর্থ রাখার চেষ্টা করি, ম্যানেজারদের নির্দেশনাও দিয়ে থাকি। কিন্তু অনেক সময় হঠাৎ করেই দিনের শেষভাগে অনেক টাকা জমা হয়ে যায়। তখন সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে মেইন ব্র্যাঞ্চে বা বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালী ব্যাংকে টাকা পাঠানোর সুযোগ থাকে না। গাড়ি পাওয়া সম্ভব হয় না, আবার পুলিশও সব সময় পাওয়া যায় না।”
এছাড়া বেশ কয়েক বছর আগে অনেক ভল্টের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমানে ব্যবসা-ব্যাংকের গ্রাহক বেড়েছে। তার সাথে মিলিয়ে ভল্ট সীমা নির্ধারণ হয়নি। যে কারণে অনেক সময় বাধ্য হয়েই সীমার বেশি অর্থ রাখতে হয়।”
ঝুঁকি এড়াতে বর্তমানে ভল্টের সীমা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।

অন্যরকম