Wed. Jun 18th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৫: বাংলাদেশে ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেলাকে 1হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার চারজনের মধ্যে তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এর আগে আজ ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে এক সংবাদসম্মেলনে বলা হয়, একজন শ্বেতাঙ্গ বিদেশীকে হত্যার জন্য কোন এক ‘বড় ভাইয়ের’ নির্দেশে ভাড়াটে খুনিরা এ ঘটনা ঘটায়। পুলিশ এখন সেই ‘বড় ভাইকে’ খুঁজছে। কর্মকর্তারা বলছেন, শ্বেতাঙ্গ কোন বিদেশীকে টার্গেট করে সরকারকে চাপে ফেলার জন্যই ওই আক্রমণ চালানো হয়। গত ২৮শে সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশান এলাকায় ইতালির ঐ নাগরিককে গুলি করে হত্যার পর পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে। ইতালীয় নাগরিককে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া চারজনের মধ্যে একজন তামজীদ আহমেদ রুবেল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বাকি তিন জন রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল এবং সাখাওয়াত হোসেন শরীফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেকের আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তদের আদালতে নেয়ার আগে সোমবার সকালে ঢাকার মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে নিয়ে সাংবাদিকদের ছবি তোলার সুযোগ দেয়া হয়। চেজারে তাভেলা কোন সুনির্দিষ্ট টার্গেট ছিলেন না। সরকারকে চাপে ফেলার জন্য হত্যার টার্গেট ছিল কোন একজন শ্বেতাঙ্গ বিদেশী। সেখানেই এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া চারজনের গ্রেফতারের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি দাবি করেন কয়েকদিন ধরে অভিযান চালিয়ে গত রোববার চার জনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়। কিন্তু চারজনকে গত ১০ই অক্টোবর আটক করা হয়েছে বলে তাদের পরিবারের দেয়া তথ্য নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুললে জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেছেন, অনেক আগে গ্রেফতারের ঐ তথ্য সঠিক নয়। তিনি দাবি করেন, একজন কথিত বড় ভাইয়ের নির্দেশে ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবে চার জনের মধ্যে তিন জনই সরাসরি জড়িত ছিল এবং একজন মোটর সাইকেল ধার দিয়েছিল। এই ‘বড় ভাই’ -এর পরিচয় নিশ্চিত করতে পারে নি পুলিশ, কর্মকর্তারা বলছেন, তাকে এবং তার পেছনের ম“দাতা করা তা খোঁজা হচ্ছে। গত ২৮ শে সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশান এলাকায় সন্ধ্যায় যখন ইতালীয় নাগরিক চেজারে তাভেলাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনা ঘটিয়ে দু’জন মোটর সাইকেলে পালিয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। পুলিশের সংবাদ সম্মেলনের আগে সেই মোটর সাইকেলও সেখানে আনা হয়েছিল। তবে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র এখনও পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ব্যবহৃত অস্ত্র এবং কথিত ‘বড় ভাই’ সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া উল্লেখ করেছেন, চেজারে তাভেলা কোন সুনির্দিষ্ট টার্গেট ছিলেন না। সরকারকে চাপে ফেলার জন্য হত্যার টার্গেট ছিল কোন একজন শ্বেতাঙ্গ বিদেশী – প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য তারা পেয়েছেন। কথিত বড় ভাই আটক ব্যক্তিদের বলেছে একজন বিদেশীকে খুন করতে হবে। সিসিটিভি’র ফুটেজ পর্যালোচনা এবং প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে নিশ্চিতভাবে অপরাধীদের সনাক্ত করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের ঘটনার পর থেকেই সরকারের মন্ত্রীদের অনেকেই বলে আসছেন, দেশকে অস্থিতিশীল করার টার্গেট থেকে এই ঘটনা ঘটনো হয়েছে। এসব বক্তব্যে বিরোধীদল বিএনপি এবং জামায়াতের প্রতিও ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে। বিএনপি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে কিছু বলতে চাননি পুলিশ কমিশনার। তবে তিনি বলেছেন, সরকারকে চাপে ফেলার জন্য হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যই তারা তুলে ধরেছেন। অন্যদিকে, জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেট হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে যে খবর প্রকাশ হয়েছে, তা নাকচ করে দেন পুলিশ কমিশনার। পুলিশের কর্মকর্তারা এটাও উল্লেখ করেছেন, পেশাদার খুনি দিয়ে ইতালীয় নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। আটককৃত ‘ভাড়াটে খুনিদের’ সাথে সেই কথিত বড় ভাই হত্যাকাণ্ডের জন্য টাকার বিনিময়ে মৌখিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের আগে অর্ধেক টাকা ‘খুনিদের’ দেয়া হয়েছে। বাকি অর্ধেক পরে দেয়া হবে বলে সেই কথিত বড়ভাই জানিয়েছিলেন। পুলিশ কমিশনার বলেন, “একজন কথিত বড়ভাই তাদের (আটক ব্যক্তিদের) বলেছে একজন বিদেশীকে খুন করতে হবে। সিসিটিভি’র ফুটেজ পর্যালোচনা এবং প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে নিশ্চিতভাবে অপরাধীদের সনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, এই একই গ্রুপ রংপুরে একজন জাপানের নাগরিক হত্যা বা দু’দিন আগে তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলার ঘটনার সাথে জড়িত নয়। কিন্তু সবক’টি ঘটনার উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনাকারী অভিন্ন বলে পুলিশ ধারণা করছে।