খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৫: দেশে এখন গ্যাসের যে মজুত আছে তা দিয়ে আগামী ১৫ বছরের চাহিদা মেটানো যাবে। এ অবস্থায় জ্বালানির দক্ষতা বাড়াতে না পারলে সামনে কঠিন সময় আসছে।
‘শিল্পে জ্বালানি সক্ষমতার উন্নয়ন’ শিরোনামে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেছেন। রাজধানীর মতিঝিলের একটি হোটেলে গতকাল সোমবার সেমিনারটির আয়োজন করে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় তাঁদের বিনিয়োগ নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে দেওয়া গ্যাসের দাম শতভাগ বাড়ানোর কারণে এর ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তিত ব্যবসায়ীরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, সামনে কঠিন দিন আসছে। ১৫ বছর পর দেশের গ্যাস একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর দুই-চার বছর পর থেকেই বিভিন্ন কূপে গ্যাস কমতে শুরু করবে। সে জন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে, জ্বালানি দক্ষতা বাড়াতে হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, যাঁরা ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্র পেয়েছেন কিংবা পাবেন, তাঁদের আগামী ছয় মাসের মধ্যে সক্ষমতার ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। শিগগিরই এ বিষয়ে নির্দেশনা আসবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা ছয় মাসের বদলে মেয়াদ এক বছর করার দাবি জানান। উপদেষ্টা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান এ আর খান বলেন, দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দক্ষতা অনেক কম। তারা বলে ৬৪ শতাংশ। কিন্তু দাম বাড়ানোর আবেদন করার সময় বলে ৪৬ শতাংশ। তাই বলে তো এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া যাবে না। তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধুই জ্বালানির দাম বাড়াতে চাই না, কমাতেও চাই। এ জন্য জ্বালানির দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন।’
অনুষ্ঠানে বিসিআইয়ের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, বাসাবাড়ি ও সিএনজিতে যে গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে, তা অপচয়। বর্তমানে যত গ্যাস ব্যবহৃত হয়, তার ১২ শতাংশ যায় বাসাবাড়িতে। ৫ শতাংশ যায় সিএনজিতে। এই ১৭ শতাংশ গ্যাস দেশের জিডিপিতে কোনো অবদান রাখতে পারছে না। এই গ্যাস শিল্পে দেওয়া উচিত। আর বাসাবাড়ি ও সিএনজির জন্য এলপিজির ব্যবস্থা করা উচিত।
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘বর্তমানে ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎই আসছে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। কিন্তু এই গ্যাস যখন শেষ হয়ে যাবে, তখন কীভাবে এই বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা হবে, তার কোনো স্বচ্ছ ধারণা আমাদের সামনে নেই। আমরা আমাদের বিনিয়োগ নিয়ে চিন্তিত।’
ঢাকা চেম্বারের সহসভাপতি শোয়েব চৌধুরী বলেন, ‘সারা বিশ্বেই জ্বালানি তেলের দাম কমেছে। ভারত এ বছর দুবার দাম কমিয়েছে। কিন্তু দেশে এখনো কমানো হয়নি। এটি না কমালে আমরা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যাচ্ছি।’
চামড়াজাত পণ্য এবং জুতা প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (এলএফএমইএবি) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের অর্ধেক গ্যাসই পানির দামে নিয়ে নিচ্ছে কাফকো। দেশের স্বার্থে এটাকে কোনো কিছু করা যায় কি না, সরকারের তা ভেবে দেখা উচিত।
উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, ‘আমরা বিনিয়োগ করে বসে আছি। কিন্তু গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ পাচ্ছি না। তাহলে তো বিনিয়োগ হবে না। বিদেশি বিনিয়োগও আসবে না। আমরা জানি না ১৫-২০ বছর পর কী হবে?’
বিটিএমএর পরিচালক শাহিদ আলম বলেন, ‘আমাদের ক্যাপটিভ পাওয়ারে দেওয়া গ্যাসের দাম ১০০ ভাগ বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু সুতার দাম আমরা এক সেন্টও বাড়াইনি। আমাদের তো কাজ না বিদ্যুৎ উৎপাদন করা। কিন্তু আমরা বাধ্য হয়ে তা করছি।