খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর ২০১৫: শিশু সংক্রান্ত খবর পরিবেশনের ক্ষেত্রে আরও সংবেদনশীল হওয়ার জোর দেওয়া হয়েছে এক আলোচনা সভায়।
মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এমআরডিআই) আয়োজিত ‘শিশু সংক্রান্ত বিষয়ে সাংবাদিকতার নীতিমালা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অধিকাংশ বক্তা বিষয়টির উপর গুরুত্ব দেন।
শিশুদের নিয়ে কিংবা শিশুদের বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা তৈরিতে এমআরডিআইয়ের সহযোগী হয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও ইউনেস্কো।
শিশু মনে বিরূপ প্রভাব পড়ে- এই ধরনের ছবি না প্রকাশ করার কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে। অপরাধে জড়িত হলেও শিশুদের নাম ব্যবহার না করার কথাও বলা হয়েছে নীতিমালায়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, এই নীতিমালা সাংবাদিকদের জন্য ‘পথনকশা’ হিসাবে কাজ করবে।
“প্রতিদিনের কঠিন ডেডলাইনের মধ্যেও সংবেদনশীলতার জায়গাটিতে খেয়াল রেখে বিচারবুদ্ধি ও বিবেচনাবোধের প্রকাশ ঘটানো দরকার। আরও বেশি বিচারবুদ্ধি প্রয়োগে যতœবান হওয়া উচিত।”
তথ্যমন্ত্রী সেই সঙ্গে বলেন, “আইনের কাচের ঘরের ভেতরে শিশু-নারীসহ সাধারণ মানুষ ও সরকার থাকে। সেই কাচের ঘরের অংশকে কোন বিবেচনায় দেখব, সেটা সাংবাদিকরা ঠিক করবেন,”
বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) মহাপরিচালক ও দৈনিক সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, মফস্বল থেকে আসা বেশিরভাগ সংবাদই থাকে খুন-খারাবির। সেখান থেকে বাছাই করে কিছু সংবাদ পত্রিকার পাতায় আসে।
“বেশিরভাগ সময়ে শিশুদের ওপর করা প্রতিবেদনে সংবেদনশীলতার জায়গা ঠিক রাখা সম্ভব হয় না। তবুও আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার।”
অনুষ্ঠানের সভাপতি মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের ‘বিবেচনাবোধ’ প্রয়োগের পরামর্শ দেন।
টাঙ্গাইলের কালিহাতির সাম্প্রতিক ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “সাংবাদিকরা যদি পূর্ণাঙ্গভাবে লিখে জানাত তাহলে সারাদেশে আগুন লেগে যেত। তবে আমাদের সাংবাদিকরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করায় তারা ওই ঘটনার মধ্যে নিবদ্ধ থেকেছেন। এমন বিবেচনাবোধ নিয়ে রিপোর্টগুলো প্রকাশ করেছেন যাতে আগুন না লাগে।”
যে কোনো নীতিমালা ও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে এপি ও বিবিসির মতো পশ্চিমা দেশগুলোর সংবাদ মাধ্যমকে অনুসরণের প্রবণতা নিয়েও আপত্তি জানান মিজানুর।
“তারা তো রাবিশ। টনি ব্লেয়ারের বক্তব্যেই এটা প্রমাণিত। এখন তিনি দুঃখপ্রকাশ করছেন। যখন ইরাক, আফগানিস্তান ও তিউনিসিয়াসহ বিভিন্ন দেশে হামলা হয়, তখন তাদের (পশ্চিমা গণমাধ্যমের) ভূমিকা কী ছিল? ইরাকে ‘মানব বিধ্বংসী অস্ত্র’ আছে, সেটা প্রমাণের জন্য কী না করেছে?”
এপি’র সাবেক ব্যুরো প্রধান ফরিদ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম, এমআরডিআই নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার উত্তরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “৫৭ ধারায় সাংবাদিকসহ মোট কয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? দেশে তো কমপক্ষে ১২শ সংবাদপত্র আছে, প্রতিটিতে গড়ে ১০ করে হলেও মোট ১২ হাজার সাংবাদিক আছেন?
“যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদেরকে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই করা হয়েছে। শুধু এই ৫৭ ধারা নয়, বাংলাদেশের আইনে ৫৪ধারাসহ ৩০টির অধিক আইন রয়েছে যেগুলো জামিন অযোগ্য।”
‘মানুষের বদ কর্ম থেকে দূরে রাখতে আইন প্রণয়ন করা হয়’ মন্তব্য করেন ইনু বলেন, “আইন পরিবর্তনের জন্য আলোচনা-সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু ব্যক্তি স্বাধীনতার চর্চাসহ সবকিছু করতে হবে বিদ্যমান আইনের মধ্যে থেকেই।