খোলা বাজার২৪ ॥ বুধবার, ২৮ অক্টোবর ২০১৫ : রাজধানীর বিদেশি খুনের ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুমের নাম বলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
ইতালির নাগরিক চেজারে তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে রাজনীতিবিদ রয়েছেন বলে মঙ্গলবার দুপুরে জানিয়েছিলেন মন্ত্রী। কিন্তু তখন কারও নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
খুনের ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে ঢাকার সাবেক কমিশনার কাইয়ুমের নাম রাতে একটি টেলিভিশনকে বলেন আসাদুজ্জামান কামাল।
বিএনপি নেতা কাইয়ুমের নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে কি না- প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, “হ্যাঁ।”
আর কেউ জড়িত কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমাদের তদন্ত হচ্ছে। তদন্ত শেষে বাদ বাকি জানা যাবে।”
এখন পর্যন্ত তদন্তে কাইয়ুমের জড়িত থাকার প্রমাণই কি পাওয়া গেছে- পুনরায় জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, “হুঁ।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কাইয়ুম ঢাকা মহানগর কমিটিরও যুগ্ম আহ্বায়ক। সাদেক হোসেন খোকা মেয়র থাকার সময় তিনি গুলশান-বাড্ডা এলাকার কমিশনার ছিলেন।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে গুলশান-বাড্ডা আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন কাইয়ুম।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর কাইয়ুমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে সফল হওয়া যায়নি। দলটির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, কাইয়ুম বিদেশে রয়েছেন।
বিদেশি খুনের পর থেকে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বিএনপি-জামায়াতকে সরাসরি দায়ী করে বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মঙ্গলবারই বলেন, কোনো ঘটনা ঘটলেই সরকার বিএনপিকে দোষারোপ করে প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করছে।
তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডের জড়িত অভিযোগে চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর খুনের পেছনে রাজনীতিবিদ জড়িত বলে মঙ্গলবার দুপুরেই সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সন্দেহভাজন কয়েকজন ইতোমধ্যে দেশ ছেড়েছেন,তাদের ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে- একথাও বলেছিলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, “ইতালির নাগরিক তাভেল্লা হত্যাকাণ্ডে শুধু বড় ভাই আসল নয়, তার পেছনে যারা রয়েছেন, তারা রাজনীতিবিদ।
“সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণে রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংশ্লিষ্টতা (খুনের সঙ্গে) পাওয়া গেছে। তারা গোয়েন্দা নজরদারিতে আছেন। তথ্য প্রমাণ বিচার-বিশ্লেষণ করে দ্রুত তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।”
সোমবার চারজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে পুলিশ জানায়, পলাতক এক ‘বড় ভাই’য়ের নির্দেশে গ্রেপ্তার তিনজন এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এর উদ্দেশ্য ছিল বিদেশি কাউকে হত্যা করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা।
কাইয়ুমের ভাই এম এ মতিনকে পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠলেও তা স্বীকার করেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সোমবার যে চারজনকে সাংবাদিকদের সামনে এনে পুলিশ রোববার গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছিল, তাদের অন্তত দুজনকে বেশ কয়েকদিন আগে আটক করা হয় বলে তাদের পরিবারের অভিযোগ।
মতিন জড়িত কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন,তা তদন্তে শেষ হলেও বোঝা যাবে।
ঢাকায় গুলি চালিয়ে ইতালীয় হত্যাকাণ্ডের ছয় দিনের মধ্যে রংপুরে একই কায়দায় জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে হত্যা করা হয়।
ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিবুননবী খান সোহেলের ভাই রাশেদুন্নবী খান বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সাম্প্রতিক বিদেশি হত্যা, পুলিশ হত্যা, আশুরায় শিয়াদের তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা- সব ঘটনায় যোগসূত্র রয়েছে বলে দাবি করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডে আলাদা ব্যক্তিরা থাকলেও কারণ একই জানিয়ে তিনি বলেন, “বিদেশি হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ষড়যন্ত্র। আমাদের দেশকে জঙ্গিরাষ্ট্র হিসাবে প্রমাণ করতে চায় ষড়যন্ত্রকারীরা। দুই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা একই জায়গা থেকে হয়েছে।”
দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে দুই-একদিনের মধ্যেই বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
“গোয়েন্দারা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে। তা মিলিয়ে দেখার জন্য বিলম্ব হচ্ছে।”
বিএনপি আমলে একুশে অগাস্টের গ্রেনেড হামলার মতো কোনো ‘জজ মিয়া নাটক’ সাজানো হবে না বলেও আশ্বস্ত করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
পুরান ঢাকায় হোসাইনী দালানে বোমা হামলা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “ইতোমধ্যে আমরা সব ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। অচিরেই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা হবে।”