Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

28খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৫: আর্থিক খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রকদের এক সমন্বয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আজ বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশ ব্যাংকে আজ বেলা তিনটায় এ সভা হওয়ার কথা রয়েছে। এ রকম সভা আগেও হয়েছে। কিন্তু এবারের সভাকে ঘিরে অন্য রকম এক ‘উন্মাদনা’ শুরু হয়ে গেছে শেয়ারবাজারে। এ উন্মাদনাটা এতটাই, যেন এ সভার ওপরই নির্ভর করছে শেয়ারবাজারের ভবিষ্যৎ। হাত গুটিয়ে নিয়ে এই একটিমাত্র সভার দিকেই যেন তাকিয়ে আছেন বিনিয়োগকারীরা।
কেন এতটা তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠল নিয়ন্ত্রকদের নিয়মিত সমন্বয়ের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত এমন একটি সভা? ক্ষুদ্র, মাঝারি, ব্যক্তিশ্রেণি, প্রাতিষ্ঠানিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিনিয়োগকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ সভাটিকে অনেকেই দেখছেন ‘দাবি পূরণের’ সভা হিসেবে। কী সে দাবি? জানা গেল, শেয়ারবাজারে ব্যাংকের মাত্রাতিরিক্ত যে বিনিয়োগ রয়েছে, সেটি নির্ধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে আনার সময়সীমা আরও বাড়ানোর ঘোষণা চান বিনিয়োগকারীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সময়সীমা অনুযায়ী, আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যে ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগ কমিয়ে আনতে হবে। এখনো প্রায় আট মাস বাকি এ সময় শেষ হওয়ার। এত আগেভাগে তাহলে একটি সভাকে কেন্দ্র করে কেন এ দাবিটি মুখ্য হয়ে উঠল বাজারে? যৌক্তিক কোনো কারণই খুঁজে পাওয়া গেল না বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে। তবে কি শেয়ারবাজারকে দাবি আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে কেউ ব্যবহার করছেন? যেখানে ক্রীড়নক হিসেবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যবহার করা হচ্ছে? প্রশ্নটি এখন ঘুরেফিরেই আসে। অতীতে এমন অনেক কিছুই ঘটেছে শেয়ারবাজারে। যৌক্তিকতা থাকুক আর না থাকুক, বিনিয়োগকারীরা একের পর এক দাবিতে সোচ্চার ছিলেন।
২০১০ সালে শেয়ারবাজার ধসের পরপরই বিনিয়োগকারীদের ‘অনড় দাবির’ মুখে বন্ধ করা হলো ঋণ হিসাবের ফোর্সড সেল। এখন এসে সেসব ঋণ হিসাবগুলো হয়ে উঠেছে শেয়ারবাজারের গলার কাঁটা। এরপর ধসের পরপরই দাবি উঠল, কারসাজিকারকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। যথেষ্ট যৌক্তিক দাবি বিনিয়োগকারীদের। শেয়ারবাজার হোক বা অন্য কোথাও হোক, অপরাধীর শাস্তি হোক এটাই সবার কাম্য। শেয়ারবাজারের মামলা নিষ্পত্তির জন্য গঠিত হলো আলাদা ট্রাইব্যুনাল। কিছু কিছু মামলার বিচারও শুরু হলো। আর তাতে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করল। কারসাজিকারকদের বিচার হবে, অপরাধ প্রমাণ হলে শাস্তি হবে—তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীর ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়ার হিসাবটা আর মেলে না। প্রশ্ন উঠল, তাহলে কি যেনতেনভাবে বাজার ভালো থাকুক সেটাই কাম্য বিনিয়োগকারীদের?
যুক্তির খাতিরে যদি ধরেই নেওয়া হয়, ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের সময় আর বাড়ানো হলো না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ব্যাংকগুলোকে শেয়ার বিক্রি করে তাঁদের বিনিয়োগসীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে। তাহলে কি শেয়ারবাজার বন্ধ হয়ে যাবে? নাকি তালিকাভুক্ত কোম্পানির যে মৌলভিত্তি, তা নষ্ট হয়ে যাবে? শূন্য হয়ে যাবে কি সব শেয়ারের দাম? বাস্তবতা বলে—এর কোনোটিই হবে না। তাহলে কেন একটি দাবিকে কেন্দ্র করে বাজারে এ অনাকাক্সিক্ষত দরপতন? আড়ালে থেকে কেউ কি তবে নিজ স্বার্থে বাজারকে ব্যবহার করছেন?
ধারাবাহিক দরপতনের বাজারে কারা শেয়ার বিক্রি করে বাজারকে আরও তলানিতে নিয়ে যাচ্ছে, তা খুঁজে দেখার দায়িত্ব পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। তাঁরা কি তাঁদের সেই দায়িত্বটি যথাযথভাবে পালন করছেন? নাকি প্রচ্ছন্নভাবে অন্যের দাবি আদায়ের অন্যায্য সমর্থন দিচ্ছেন?