Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৫: রাজনীতি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে বিএনপির 68বর্তমান কার্যধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দলটির পদত্যাগী ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী।
নতুন কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন না জানিয়ে সাবেক এই কূটনীতিক বলেছেন, লেখালেখি করেই এখন অবসর কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
বিএনপির কঠিন সময়ে বৃহস্পতিবার আকস্মিকভাবে দলের সব পদ ছাড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর শমসের মবিনের রাজধানীর বনানীর ওল্ড ডিওএইচএসের বাড়িতে ভিড় জমান সাংবাদিকরা।
সেনা কর্মকর্তা থেকে কূটনীতিক হিসেবে কর্মজীবন পার করে রাজনীতিতে নামা ৬৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তি সাংবাদিকদের নানা কৌতূহল মেটানোর চেষ্টা করেন, জানান নিজের পরবর্তী পরিকল্পনাও।
বীরবিক্রম খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা শমসের মবিন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালে সেনাবাহিনী থেকে জনপ্রশাসনে কূটনীতিক হিসেবে আসেন।
২০০১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালে পররাষ্ট্র সচিব এবং যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনের পর অবসরে যান তিনি।
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে রাজনীতিকদের জন্য কঠিন সময়ে অবসরে যাওয়ার পর বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হন শমসের মবিন। ২০০৯ সালের কাউন্সিলে হন ভাইস চেয়ারম্যান।
ভোট ঠেকাতে বিফল হওয়ার পর আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে নত করতে ব্যর্থ বিএনপি যখন শীর্ষ নেতাদের মামলা ও গ্রেপ্তারের মধ্যে রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে অনিশ্চিত অবস্থায়, তখনই দল ছাড়লেন শমসের।
পদত্যাগের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কারও চাপে নয়, একান্ত স্বাস্থ্যগত কারণে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছি।
“কারাগার থেকে মুক্তির পর কয়েক মাস ধরে শারীরিক অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে সরে আছি। দলের ভেতরে কী হচ্ছে না হচ্ছে, তা নিয়ে বলার কিছুই নেই। এ বিষয়ে কিছুই জানি না।”
শীর্ষ পর্যায়ের আরও নেতাদের সঙ্গে শমসের মবিনকেও কারাগারে যেতে হয়েছিল এই বছর। গত ৮ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হন তিনি। তার বিরুদ্ধে নাশকতার চারটি মামলা হয়। গত ২২ মে জামিনে তিনি মুক্তি পান।
চাপের কথা না বললেও পাসপোর্ট নবায়ন নিয়ে নিজের সমস্যার কথা বলেন সাবেক এই রাষ্ট্রদূত।
গত জুলাই মাসে পাসপোর্ট নবায়নের আবেদন করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি জানি না, কেন পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে না। আমার চোখের অবস্থা খুবই খারাপ। অস্ত্রোপচার করতে হবে। কেন দিচ্ছে না সরকারকে জিজ্ঞাসা করুন। তারা (সরকার) বড়ভাই খুঁজবে, না আমার পাসপোর্ট দেবে- কে জানে।”
ভিন্নমত পোষণ করে দল ছেড়েছেন কি না- এই প্রশ্নে শমসের বলেন, “মহল বিশেষ কী বলল, জানি না। আমি অসুস্থ, স্বাস্থ্যগত কারণেই রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছি।
“আমি বাইরে যেতে পারি না, চলাফেরায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এই অবস্থায় রাজনীতি করতে হলে যে ধরনের শ্রম ও সময় দেওয়া প্রয়োজন, সেটা আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”
তবে বর্তমানে বিএনপি দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শ নিয়ে কতটুকু চলছে, তা নিয়ে যে প্রশ্ন রয়েছে, তাও অকপটে বলেন দলের সদস্য সাবেক এই ভাইস চেয়ারম্যান।
“বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। উনি যে চিন্তাধারা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে একটা গঠনমূলক রাজনীতির কথা ভেবেছিলেন; অনেকের মনে প্রশ্ন এবং আমার মনেও প্রশ্ন, বিএনপি সেখানে কতটুকু রয়েছে।”
শমসের মবিনের পদত্যাগের খবর শুনে বিএনপির প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপিতে ‘যারা এখনও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী’ আছেন, তাদের অনেকেই একে একে বেরিয়ে এসে দলটিকে ‘ঢেলে সাজাবেন’ বলে তার বিশ্বাস।
নতুন কোনো দলে যোগ দেবেন কি না- প্রশ্ন করা হলে শমসের বলেন, “দল পরিবর্তনে আমি বিশ্বাস করি না।”
বিএনপিকে নিয়ে নেতিবাচক কিছু বলতে অনীহা জানিয়ে তিনি বলেন, “একটা বিরাট জনপ্রিয় দল। এ্কাধিবার জনগণের আস্থা নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার সুযোগ পেয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, যদি সঠিক রাজনীতি বিএনপি করতে পারে, জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা তথা তাদের প্রত্যাশার দিকে যদি দল চলতে পারে, তাহলে জনগণ তাদের পক্ষে সঠিকভাবে অবশ্যই রায় দেবে।”
বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জানিয়ে সমশের বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। কতটুকু গণতান্ত্রিকভাবে বাংলাদেশ রয়েছে? জনগণ ‍সুস্থ রাজনীতি চায়। সহিংসতার রাজনীতি চায় না, নিপীড়ন-নিপীড়নের রাজনীতি চায় না।”
“মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উপর ভিত্তি করে জাতীয় ঐক্যমত্যের এখন কোনো বিকল্প নেই। আমাদের রাজনীতির আচরণের পরিবর্তন আসা উচিৎ বলে আমি মনে করি,” বলেন যুদ্ধাহত এই মুক্তিযোদ্ধা।
বিভক্ত রাজনীতির সমালোচনা করে জাতীয় ঐক্যের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, “সমস্ত সমাজটা বিভক্ত হয়ে আছে। ক্লাবে যান, একদিকে আওয়ামী লীগ বসে, অন্যকোনায় বিএনপি বসে। প্রেস ক্লাবেও একই অবস্থা। ব্যাংকে যান সেখানেও একই। মুদির দোকানেও।
“এটা কেন হবে? দেশ তো সকলের। কোনো কোনো বিষয়ে কি এক হতে পারব না। এটা তো সুস্থ রাজনীতি নয়।”
দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন,এর তদন্ত স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে হওয়া উচিত।
শমসের মবিন জানান, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বরাবর লেখা পদত্যাপগত্র বুধবার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে দিয়ে এসেছেন তিনি।
“উনি প্রাপ্তি স্বীকার করেছেন। বললেন, ‘ভারাক্রান্ত মনে গ্রহণ করলাম’। আমি তাকে অনুরোধ করেছি, তিনি যেন চিঠিটি চেয়ারপারসনের কাছে পাঠিয়ে দেন।”
পদত্যাগে দলে কোনো প্রভাব পড়বে কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বিএনপি একটা বড় দল। আমার চলে যাওয়াতে ক্ষতি হবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি তেমন কোনো ব্যক্তি না যে আমার সিদ্ধান্তে এত বড় দলের বিরাট কোনো ক্ষতি হবে।”
শমসের মবিনের পদত্যাগের খবরের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, “তিনি প্রবীণ নেতা হিসেবে অনেক শ্রম দিয়েছেন, মেধা দিয়েছেন। তিনি অবসরে গেলে দলের অনেক ক্ষতি হবে।”
রাজনীতিতে আসাটা ‘লার্নিং এরিয়া’ বলে মনে করেন আট বছর বিএনপিতে থাকা শমসের মবিন।
“বিএনপি আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছে, মূল্যায়ন করেছে। আমি যে ভুমিকা পালন করতে চেয়েছিলাম, তা অনেকটাই আমি পেরেছি।”
“সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি সিলেট আমার পৈত্রিক জেলা সেখানকার মানুষের কাছে আসতে পেরেছি। তাদের কাছে আমি পরিচিত পেয়েছি এই রাজনীতির মাধ্যমেই। সিলেটের মানুষ অনেকে আমাকে টেলিফোন করে বলেছেন, আমরা আপনার পাশে আছি। আমরা আপনাকে ছেড়ে যাব না।”
সুস্থ হয়ে আবার রাজনীতিতে যোগ দেবেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছি। এটা চূড়ান্ত। অবসর জীবনে আমি থাকব।”
অবসর জীবন কীভাবে কাটাবেন- জানতে চাইলে শমসের মবিন বলেন, “ঠিক করেছি, পড়ালেখা ও লেখালেখি করে সময় কাটাব। এখন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় ছবিগুলো দেখে দেখে সময় কাটাব।