Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

14খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৫: দেখে মনে হবে ক্রেডিট কার্ড; মানিব্যাগে ভরে পরীক্ষার হলে ঢুকে পড়লে হয়ত সন্দেহই করবে না কেউ। কিন্তু এর সঙ্গে যখন যুক্ত হবে ইয়ারপিস, ওই কার্ডই তখন ‘কানে কানে বলে দেবে’ প্রশ্নের উত্তর।
এমন অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে ইদানিং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসছেন ‘প্রতারক’ শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ওই যন্ত্রসহ আটকের পর এক পরীক্ষার্থীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এটি আসলে বিশেষভাবে তৈরি একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যার ভেতরে সিম যুক্ত করে মোবাইল ফোনের মত ব্যবহার করা যায়। পরীক্ষকের চোখ ফাঁকি দিয়ে কেন্দ্রের বাইরে যোগাযোগ করে জেনে নেওয়া যায় কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর।
দণ্ডপ্রাপ্ত হাসিবুল হাসান শামু এবার নীলফামারী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে বসে প্রথম এক ঘণ্টা পরীক্ষকদের ফাঁকিও দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে ধরা পড়তে হয় ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিজানুন রহমানের কাছে।
অধ্যাপক মিজান বলেন, “দেড় ঘণ্টার পরীক্ষা। এক ঘণ্টার মাথায় সন্দেহ হয়। হাসিবুলকে তল্লাশি করে পাওয়া যায় ওই ইলেকট্রনিক ডিভাইস। ওই যন্ত্রের সাহায্যে উত্তর জেনে নিয়ে সে পরীক্ষার হলে উত্তরপত্রে বৃত্ত ভরাটের চেষ্টা করছিল।”
ব্যাংকের এটিএম কার্ডের মত দেখতে ওই যন্ত্রের সঙ্গে এই জালিয়াতিতে ব্যবহার করা হয় তারবিহীন ‘ব্লুটুথ’ ইয়ারপিস। আকারে ছোট হওয়ায় পরীক্ষার্থী অন্য কারও দৃষ্টি আকর্ষণ না করে সহজেই তা কানের সঙ্গে আটকে রাখতে পারেন।
ওই যন্ত্রসহ আটকের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় হাসিবুলকে। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) ফরহাদ মাহমুদ ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শুভ নামের দুই ছাত্রের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকায় ওই যন্ত্র পেয়েছেন তিনি।
হাসিবুলের দাবি, ফরহাদের কাছে তিনি ‘প্রাইভেট’ পড়তেন। পরীক্ষার হলে প্রশ্নের উত্তর সরবরাহের জন্য তাদের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকার চুক্তি হয়েছিল।
জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রক্টর কার্যালয়ে বসা ভ্রাম্যামণ আদালতে অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মৌসুমী মাহবুব দুই বছর কারাদণ্ড দেন হাসিবুলকে। পরে তাকে শাহবাগ থানা পুলিশের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
ম্যাজিস্ট্রেট মৌসুমী মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, পরীক্ষা চালকালে ‘প্রযুক্তির মাধ্যমে’ অন্যদের সহায়তা নেওয়ার অপরাধে পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইনের ১৯৮০ এর ৯ (খ) ধারা অনুযায়ী হাসিবুলকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী বলেন, “এ ঘটনায় জড়িত যে দুই ছাত্রের নাম এসেছে, তাদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।”
শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও বাইরের ৭৬টি কেন্দ্রে বিজ্ঞান অনুষদের অধীন ‘ক’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা হয়, যেখানে প্রতি আসনের বিপরীতে অংশ নেন ৪২ জন শিক্ষার্থী।
শুক্রবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় একই ধরনের জালিয়াতির পরিকল্পনার অভিযোগে আরও দুইজনকে আটক করা হয় বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক আমজাদ আলী জানান।
এরা হলেন- জগন্নাথের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম নার্গিস এবং ঢাকা কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মানিক শেখ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে আটক দুজনের মধ্যে মানিক নামের একজন ‘জালিয়াত চক্রের সদস্য’ বলে অধ্যাপক আমজাদ আলী জানান। তিনি বলেন, জগন্নাথের ভর্তিচ্ছু নার্গিস পরীক্ষার হলে প্রশ্নের উত্তর যোগানোর জন্য মানিকের সঙ্গে চুক্তি করছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের সন্দেহ হওয়ায় বিষয়টি তিনি প্রক্টোরিয়াল বডিকে জানান। এরপর মানিককে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।