Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

tr............................

খোলা বাজার২৪ ॥ গত অর্থবছরের বাজেটে তামাক ও তামাকজাতীয় পণ্যের আমদানি এবং উৎপাদন পর্যায়ে এক শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করে সরকার। এর পর বিড়ি ও সিগারেট কোম্পানিগুলোর কাছে থেকে ২৫০ কোটি টাকা আদায় করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর); কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতায় স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জের হিসাবে এনবিআর জমা করেছে মাত্র দুই কোটি ১৭ লাখ টাকা। বাকি টাকা কোন হিসাবে জমা হয়েছে, তা এনবিআর সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না। সারচার্জের ওই টাকা তামাক ব্যবহারের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করা কথা।এনবিআরের বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ লিমিটেড (বিএটিবি) থেকে ১৪৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা এবং ঢাকা টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বাবদ ৫১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা আদায় হয়। এ ছাড়া আবুল খায়ের, নাসির টোব্যাকো, ইন্টারন্যাশনাল টোব্যাকো, বিউটি টোব্যাকোসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৫০ কোটি টাকা আদায় করে এনবিআর। সব মিলিয়ে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ খাতে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা পেয়েছে এনবিআর; কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত অর্থনৈতিক কোডে (কোড নং ২২১২) জমা পড়ে মাত্র দুই কোটি ১৭ লাখ টাকা।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি) সম্প্রতি এনবিআর এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সারচার্জের পরিমাণ জানতে চাইলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। আদায় করা টাকা কোন হিসাবে জমা হয়েছে, সে বিষয়ে এনবিআর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জিজ্ঞাসার কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। বিবিধ খাতে জমা হতে পারে বলে এনবিআর কর্মকর্তারা ধারণা করছেন। এ অবস্থায় চলতি অর্থবছরে আদায়ের পরিমাণ জানতেও এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে এনটিসিসি।সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সারচার্জের অর্থ পেতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নানা ধরনের চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। অর্থ মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে কিছু বলছে না। মূলত এনবিআরের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণে অর্থ অন্য খাতে চলে গেছে। সারচার্জের এ অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ, আদায় হওয়া এ অর্থ কোনো না কোনোভাবে খরচ হয়ে

গেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ অর্থ ফেরত দিতে হলে নতুন করে বরাদ্দ দিতে হবে। আর যে দুই কোটি টাকা ওই হিসাবে জমা হয়েছে, তা খরচ করতে হলেও একটি নীতিমালা লাগবে। এ নীতিমালা এখনও তৈরি হয়নি।
গত অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সারচার্জ থেকে অর্জিত অর্থ ‘তামাক ব্যবহারজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে’ ব্যয় করা হবে; কিন্তু সারচার্জের সেই অর্থ ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা না হওয়ায় আদায়কৃত দুই কোটি টাকাও অব্যবহৃত আছে।
এনটিসিসির সমন্বয়ক মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস সমকালকে বলেন, সারচার্জের অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে একটি নীতিমালা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ সমকালকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নজরে এনে নতুনভাবে বরাদ্দ চাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এটি যৌক্তিক হলে অর্থ মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, এটি হিসাবের ভুলের কারণে, না অন্য কোনো কারণে হলো, সেটিও খুঁজে বের করতে হবে। বিষয়টি তদন্ত করার প্রয়োজন, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল না হয়।
মতামত জানতে চাইলে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) বাংলাদেশ কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, এনবিআর অর্থ আদায় করলেও নির্দিষ্ট হিসাবে জমা করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নজরদারি করতে হবে। এ অর্থ এনটিসিসির মাধ্যমে তামাকের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে ব্যয় করা উচিত। তিনি বলেন, জনগণ যাতে উপকৃত হয়, সেজন্য একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগিয়ে যেতে হবে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থ ব্যয় করতে পারলে জনগণ সুফল পাবে।