খোলা বাজার২৪ ॥ শনিবার, ৩১ অক্টোবর ২০১৫: গত বছর শান্তিতে নোবেলজয়ী ভারতীয় কৈলাশ সত্যার্থী ‘অশ্রদ্ধা ও ভীতি ভারতের সমাজে ফাটল ধরাচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন। এ সময় তিনি ‘ভারতেঅসহিষ্ণুতা দ্রুত বাড়ছে এবং জনগণ ও ভারত সরকারের সম্পর্কের ঘাটতি মেটাতে অবিলম্বে সংলাপ প্রয়োজন’ বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে যেভাবে অসহিষ্ণুতা দিন দিন প্রকট হয়ে উঠছে, তা অত্যন্ত তাৎপূর্যপূর্ণ। শুধু অসহিষ্ণুতাই নয়, ভয় এবং অশ্রদ্ধাও সমাজে এত প্রকটভাবে বাড়ছে যে আমাদের সমাজ বিভক্ত হয়ে পড়ছে।
’ ছবি ৩ টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সমাজের একটি স্তরের সাথে সরকারের সম্পর্কে ঘাটতি রয়েছে বলেই এমন হচ্ছে। এই সমস্যার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সমাজে নিম্নমুখী সহনশীলতা, যুক্তবাদী ব্যক্তি এবং গরু জবাই ও গরুর মাংস খাওয়ার গুজবে একের পর এক নিরীহ মুসলিমদের হত্যার ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে এবং দেশটির কয়েকশ’ শীর্ষ সাহিত্যিক, চলচ্চিত্র পরিচালক, ইতিহাসবিদ, বিজ্ঞানী জাতীয় পুরষ্কার ফিরিয়ে দিতে শুরু করেছেন। তাদের অনেকেই এই নৈরাজ্যের জন্য দায়ী করছেন দেশটির ক্ষমতাসীন ও হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত বিজেপি-কে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, এ ব্যাপারে কৈলাশের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘যা হচ্ছে, তা কোনো ভালো লক্ষণ নয়। অন্তত এই মানুষগুলোর সাথে বসে তাদের কথা শোনার সময়টুকু দেয়া উচিত সরকারের।’ ছবি ২ এর আগে তিনি শিশুদের ধর্মশিক্ষার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘কোনো ধর্ম বা বর্ণ আমাদের শিশুদের তৈরি করেনি। তাদের এমনভাবে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া উচিত, যেন ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের অনুসারী হলেও তারা মানুষ হিসেবে এক সুতোয় বাঁধা থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা হচ্ছে না।’
শিশুদের অধিকার নিয়ে অর্ধশতকেরও বেশি সময় নিয়ে কাজ করা এই নোবেলজয়ী বলেন, ‘আগে মানুষ হিসেবে নিজেদের নিয়ে গর্ব করতে পারা উচিত আমাদের। একজন ভারতীয় হিসেবে অবশ্যই আমরা গর্বিত, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা পাকিস্তানকে ঘৃণা করবো।’ সরলতা, সংযম, শেখার তৃষ্ণা এবং কারো ভুলকে ক্ষমা করে দেয়ার প্রবণতা থাকলেই বোঝা যায় যে একজন মানুষের হৃদয়ে একটি শিশু লুকিয়ে আছেৃ এবং নিজের ভেতরের এই শিশুটিকে কখনো মরতে দেয়া উচিত নয় বলেও মতপ্রকাশ করেন তিনি।