Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ১ নভেম্বর ২০১৫: যার কানেকশন (যোগাযোগ) ভালো থাকে তিনি ১ দিনেই 11লাইসেন্স পান। আর যার কানেকশন নেই তার লাইসেন্স পেতে ৯০ দিন লাগে।’ মন্তব্যটি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি হোসেন খালেদের। আর যে লাইসেন্সের কথা তিনি বলেছেন সেটি সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানের জন্য। দেশে ব্যবসা করার সঙ্গে সম্পর্কিত পদ্ধতিগুলোর কী দশা সেই বিষয়েই তিনি কথাটি বলেন।
গত বুধবার বিশ্বব্যাংক ডুইং বিজনেস ২০১৬ প্রকাশ করে। ব্যবসা করার পরিবেশের দিক থেকে এবার বাংলাদেশ দুই ধাপ পিছিয়েছে। এই প্রতিবেদন সম্পর্কে সংগঠনের বক্তব্য তুলে ধরতেই সংবাদ সম্মেলন করে ডিসিসিআই। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিভিন্ন ধরনের পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার জন্যই বাংলাদেশ ব্যবসার পরিবেশ সূচকে এতটা পিছিয়ে আছে। অনুষ্ঠানের পুরোটা সময়জুড়েই এসব সীমাবদ্ধতা দূর করার প্রস্তাব করেছে ডিসিসিআই।
রাজধানীর মতিঝিলে ডিসিসিআই ভবনে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে হোসেন খালেদ বলেন, ‘সরকার অনেকগুলো সংস্কার করেছে। কিন্তু সবগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এসবের বাস্তবায়নে সরকারের ওপরের দিকে সদিচ্ছার কোনো কমতি নেই। কিন্তু মধ্যম ও নিচের সারিতে আমলাতন্ত্রের কারণে আমরা আটকে যাচ্ছি।’
পদ্ধতিগত জটিলতার প্রসঙ্গে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘বিভিন্ন অফিসে আমাদের প্রচুর ডকুমেন্ট (কাগজপত্র) জমা দিতে হয়। যে পরিমাণ ডকুমেন্ট জমা দিই, আমার মনে হয় তা তৈরি করতে একটা গাছ কাটতে হয়। এসব ডকুমেন্টের প্রত্যেকটিতে আমাকে সাইন (সই) করতে হয়। কিন্তু আমি ৯৯ শতাংশ নিশ্চিত এসব ডকুমেন্টের বেশির ভাগই তারা উলটিয়ে দেখে না।’
অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ বোর্ডের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন হোসেন খালেদ। তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ বোর্ডের কোনো কার্যকারিতা আমি দেখি না। আগেভাগে সহায়তা করার চেয়ে পরে কিছু করার দিকেই তাদের মনোযোগ বেশি। তাদের কাছ থেকে সহায়তা বেশি পেলে স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি বিনিয়োগ করত। এফডিআইও (বিদেশি বিনিয়োগ) বেশি আসত।’
মূল প্রবন্ধে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কেবল আফগানিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। এটা উদ্বেগের বিষয়। জমির নিবন্ধনে ডিজিটালাইজেশনের কথা বলা হলেও এখনো তা বাস্তবায়িত হয়নি। যদিও বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশে অনেক উন্নতি হয়েছে, লোডশেডিং কমেছে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো শিল্পে বিদ্যুৎ-সংযোগ পাওয়া আরও কঠিন হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কর দেওয়ার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থা ভালো। আরও কর আদায়ের সুযোগ আছে। হোসেন খালেদ বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা যত টাকা আয়কর দিই, তার চেয়ে তিন গুণ জাকাত দিই। কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা প্রয়োজন।’
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানিতে বর্তমানে ১২ ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়। সেটাকে কমিয়ে সাতটিতে নামিয়ে আনা প্রয়োজন। আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র অনলাইনের মাধ্যমে জমা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব দেন তিনি, যেই সুবিধা পাচ্ছে শুধু তৈরি পোশাক খাত।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে শিল্পের জন্য বিদ্যুৎ-সংযোগ পেতে ৪০৪ দিন এবং জমি নিবন্ধনে ২৪৪ দিন লাগে। হোসেন খালেদ বলেন, এই দীর্ঘসূত্রতার জন্য ব্যবসা পরিচালনা যেমন কঠিন হয়েছে, তেমনি ব্যবসার ব্যয়ও প্রতিনিয়ত বাড়ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআইর দুই সহসভাপতি হুমায়ুন রশিদ ও শোয়েব চৌধুরী, ব্যবসায়ীদের গবেষণা সংস্থা বিল্ডের প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আরা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।