খোলা বাজার২৪ ॥ রবিবার, ১ নভেম্বর ২০১৫ : পুত্রহত্যার জন্য পাল্টাপাল্টি ‘দোষারোপ’কে দায়ী করে রাজনীতিকদের শুভবুদ্ধি উদয়ের প্রত্যাশাকারী অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুব-উল আলম হানিফ।
শনিবার শাহবাগে নিজের কার্যালয়ে ছেলে ফয়সাল আরেফিন দীপন খুন হওয়ার পর ক্ষোভ প্রকাশ করে আবুল কাসেম বলেন, ছেলে হত্যার বিচার চান না তিনি। যারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ও রাষ্ট্রধর্ম নিয়ে ‘রাজনীতি’ করছেন-উভয়পক্ষের শুভবুদ্ধি উদয়ের প্রত্যাশা তার।
এই বক্তব্যের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রবীণ অধ্যাপক-লেখককে হত্যাকারীদের আদর্শে বিশ্বাসী বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হানিফ।
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে জনসভার প্রস্তুতি দেখতে রোববার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “হত্যাকারীদের আদর্শে বিশ্বাসী বলেই পুত্র দীপন হত্যার বিচার চাননি বাবা আবুল কাসেম ফজলুল হক।”
নিজের বক্তব্যের পক্ষে একটি ব্যাখ্যাও দাঁড় করিয়েছেন হানিফ।
“আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেছেন, উনি পুত্র হত্যার বিচার চান না। হত্যাকাণ্ডটি রাজনৈতিক। আমি অবাক হয়েছি। আমার মনে হয়, যারা এই খবরটি পড়েছে সবাই অবাক হয়েছেন। একজন পুত্রহারা পিতা সন্তানের হত্যার বিচার চায় না, এটা বাংলাদেশে প্রথম। পৃথিবীতেও এমনটা আমি দেখিনি।”
বিভিন্ন আলোচনা সভায় রাজনৈতিক সমঝোতার পক্ষে কথা বলে আসা এই অধ্যাপককে নিয়ে মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “যে পুত্র হত্যা হয়েছে তার বাবা অধ্যাপক সাহেব হয়ত ওই রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী।
“এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত উনার দলের লোকজনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চান না বলেই তিনি এ ধরনের কথা বলেছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক। আমিও একজন বাবা। বাবা হিসেবে আমি নিজেও লজ্জিত তার বক্তব্যে।”
সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী আবুল কাসেম ফজলুল হক এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থি শিক্ষকদের গোলাপি দলে যুক্ত ছিলেন। পরে বিএনপি সমর্থিত শিক্ষকদের সাদা দলের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা দেখা গিয়েছিল।
শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয় থেকে ছেলে দীপনের লাশ উদ্ধারের পর আবুল কাসেমের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছিল, কারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে তিনি মনে করছেন।
জবাবে তিনি বলেন, তার ছেলের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না। গত ফেব্র“য়ারিতে টিএসসিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত লেখক অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশ করায় দীপনকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
আদর্শিক ও রাজনৈতিক সংকটের কারণে লেখক-প্রকাশ খুনের ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি।
গত সাত মাসে চারজন ব্লগার-অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট খুনের একটিরও রহস্য উন্মোচিত না হওয়ায় ছেলে হত্যার বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়ের কথা জানিয়েছেন এই অধ্যাপক।
যুদ্ধাপরাধের বিচারের বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে শনিবার এক দিনে দুটি প্রকাশনা সংস্থায় হামলা চালিয়ে একজনকে হত্যা এবং তিনজনকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে বলে মনে করেন মাহবুব-উল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, “এটা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। আমরা সব সময় বলে এসেছি। যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে একাত্তরে পরাজিত শক্তিরা এসব কাজ করছে। সরকার আর যাই করুক যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করতে পারে না।”
এ ধরনের দু/একটি ঘটনা দিয়ে সরকারকে ‘বিব্রত’ করা যাবে না বলে মন্তব্য করে তার পক্ষে যুক্তি দেন হানিফ।
“তাহলে তো বহু আগে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিব্রত হয়ে যেত। ওখানে তো বহু ঘটনা ঘটেছে।”
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এ সময় হানিফের সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সাত্তার উপস্থিত ছিলেন।