খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ২ নভেম্বর ২০১৫: শেখ হাসিনা বাংলাদেশে ‘রাজতন্ত্র’ কায়েম করেছেন দাবি করে আওয়ামী লীগকে হটাতে ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়ে তোলার কথা বলেছেন খালেদা জিয়া।
ছেলে তারেক রহমানকে পাশে রেখে রোববার লন্ডনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
দেড় মাস ধরে লন্ডনে অবস্থানের মধ্যে খালেদার প্রথম এই প্রকাশ্য সভায় পুত্রবধূ জোবাইদা রহমানও ছিলেন।
সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য দল গোছাতে শিগগিরই দেশে ফিরবেন বলেও প্রবাসী নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বক্তৃতায় বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
খালেদা বলেন, বাংলাদেশে এখন আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।
“বাংলাদেশের মানুষ আজকে মোটেও ভালো নেই, মোটেও শান্তিতে নেই। প্রতিনিয়ত জুলুম-অত্যাচার সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।”
“এক রাজতন্ত্র বাংলাদেশে কায়েম হয়েছে এখন। রাজতন্ত্রের জন্য আছেন একজন লেডি হিটলার। কারণ তিনি যা হুকুম দিচ্ছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন; তার সৈন্য-সামন্তরা যারা আছে, অর্থাৎ প্রশাসন, তারা সেভাবে কাজ করছেন। সবকিছু তার কথামতো চলে।”
দেশে এখন গণতন্ত্র নেই দাবি করে তিনি বলেন, “সেজন্য একের পর এসব ঘটনা ঘটছে। আর সবকিছুতে বিএনপিকে দোষারোপ করা হচ্ছে।”
বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থার জন্য আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে দায়ী করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বিবিসিকে দেওয়া শেখ হাসিনার এক সাক্ষাৎকার তুলে ধরে খালেদা বলেন, “তিনি বলেছিলেন, ‘আমি বাংলাদেশে যাব র্জানীতি করার জন্য নয়, প্রতিশোধ নিতে’। তিনি দেশ গড়তে আসেননি। তিনি এসেছেন দেশ ধ্বংস করতে।”
আওয়ামী লীগ ‘প্রতিশোধ প্রতিহিংসার রাজনীতি’ করে দাবি করে তিনি বলেন, এই প্রতিশোধ প্রতিহিংসার রাজনীতি বাদ দিতে হবে।
জঙ্গিবাদের উত্থানের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারকেই দায়ী করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।
“জঙ্গি জঙ্গি হাসিনাই বলেছে, কিসের জন্য? বিদেশিদের ভয় দেখানোর জন্য। বোঝাতে চাইছে আমরা যদি চলে যাই, বিএনপি এলে জঙ্গিদের উত্থান হবে। ৃকিন্তু দেখেন, জঙ্গিদের উত্থান কিন্তু আওয়ামী লীগের সময় হয়েছে। তারা একটা জঙ্গিকে ধরেনি। আমরা এসে সব জঙ্গিকে ধরেছি।”
বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিকে চাইছে দাবি করে দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার দলের প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার কথা বলেন খালেদা।
সরকারকে হটাতে ব্যর্থতার জন্য ঢাকা শহরে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারার স্বীকারোক্তি আসে বিএনপি চেয়ারপারসনের কথায়।
“আন্দোলন ঢাকায় সেভাবে করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা শহরে বের হলেই গুলি করে দেয়। তবে সারা দেশে যে কী আন্দোলন হয়েছে, স্বাধীনতার সময়, মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তা হয়নি।”
আন্দোলন দমাতে পুলিশ গাড়ি পুড়িয়ে সেই দায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপর চাপিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
শেখ হাসিনা আজীবন ক্ষমতায় থাকতে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা।
তিনি বলেন, “গত সাত বছরে বিএনপির তিন হাজার নেতাকর্মীকে খুন, এক হাজার ২০০ জনকে গুম, এক হাজার ১২ জনকে ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছে।”
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদকে নিয়ে তিনি বলেন, “কতো মানুষকে বেনজীর মেরেছে তার হিসাব নেই।”
বিএনপি ভাঙার জন্যও সরকার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা।
“বহু চেষ্টা করেছে, কিন্তু পারেনি। বিএনপিকে ভাঙা যাবে না। সত্যি কথাই বলি, এরশাদ তেমন করেনি। ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীনও কম করেনি।”
এমপি হওয়ার যোগ্যতা নেই এমন অনেককে মন্ত্রী করা হয়েছে বলে দাবি করেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
“বর্তমানে সংসদে কোনো কাজ হয় না, শুধু খালেদা, তারেক আর জিয়াউর রহমানকে গালিগালাজ করা হয়।”
বর্তমানে বাংলাদেশে বেসামরিক প্রশাসনকে পুরোপুরি দলীয়করণ করে অনেক যোগ্য, মেধাবী কর্মকর্তাকে দায়িত্বের বাইরে রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগকে হটাতে সব দল-মতের মানুষকে নিয়ে কাজ করার উপর জোর দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “জাতীয় ঐক্য গড়তে হবে।”
দেশে দল গঠনের অসামপ্ত কাজ শেষ করতে যাওয়ার গুরুত্ব প্রবাসী নেতা-কর্মীদের কাছে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমার যাওয়াটা অত্যন্ত প্রয়োজন। গিয়ে আমাকে বাকি কাজগুলো করতে হবে। এরা (পরিবার) আমাকে যেতে দিতে দেয় না। কিন্তু আমাকে যেতে হবে।”
খালেদা বলেন, স্থায়ী কমিটির নেতাদের তিনি অনেক কিছু দেখিয়ে এসেছেন।
“কিন্তু কিছু হলে ওরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সেজন্য আমার যাওয়াটা প্রয়োজন। তাই আমাকে যেতেই হবে।”
খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতায় গেলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, বিচারের বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় করবেন।
লন্ডনের রিভারব্যাংক পার্ক হোটেল প্লাজায় ওই নাগরিক সভায় মঞ্চে বিএনপি জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেকের পাশাপাশি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও ছিলেন।
দর্শক সারিতে তারেকের স্ত্রী জোবাইদা ছাড়াও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে দেখা গেছে।
খালেদা জিয়ার এই সভা চলাকালে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একদল নেতাকর্মী হোটেলের বাইরে বিক্ষোভ করেন।
বক্তব্যের শুরুর দিকেই যুক্তরাজ্যে অবস্থানের সুবাদে দেখা ইউরোপের দেশটির আইন-শৃঙ্খলার উচ্চ প্রশংসা করেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।
“দেড় মাসে অনেক কিছু দেখেছি, খুব ভালো লেগেছে। তাদের যে আইনশৃঙ্খলা এবং সুন্দর যে সব আইন আছে সেগুলো আমার মনে হয়, অনেক ভালো জিনিস শেখার আছে।”
চিকিৎসার জন্য রোজার ঈদের আগে লন্ডনে গিয়ে ছেলে তারেক ও তার স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে আছেন তিনি।