সোমবার, ২ নভেম্বর ২০১৫: আইএস জঙ্গিরা নয়, রুশ বিমান ভেঙে পড়াটা নিছকই দুর্ঘটনা। এমনটাই দাবি রাশিয়া ও মিসর সরকারের। গত শনিবার দুর্ঘটনার পরই মিসরের আইএস জঙ্গিদের একটি শাখা সংগঠন দাবি করে, তারাই গুলি করে নামিয়েছে বিমানটি। এই দাবি-পাল্টা দাবির মধ্যে গতকাল রবিবার ওই বিমানের ‘ব্ল্যাক বক্স’ উদ্ধার করে বিশ্লেষণের জন্য গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে।
মিসরের সিনাই উপদ্বীপের পাহাড়ি এলাকায় রাশিয়ার যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ খুঁজতে আন্তর্জাতিক তদন্তও শুরু হয়েছে। বিমানটিতে ২২৪ আরোহীর সবাই মারা গেছে। গত এক দশকের ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার মধ্যে এটি অন্যতম। রাশিয়ায় গতকাল নিহতদের স্মরণে শোক পালন করা হয়। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ দিনকে শোক দিবস ঘোষণা করেন।
নিহতদের মৃতদেহ ও ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারে মিসরের সঙ্গে যোগ দিয়েছে রাশিয়া থেকে যাওয়া দলও। রবিবার সন্ধান এলাকার পরিসর আরো বাড়ানো হয়েছে। প্রায় ১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে চালানো হচ্ছে সন্ধান। গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ১৬৩টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
মিসরের প্রধানমন্ত্রী শরিফ ইসমাইল গতকাল জঙ্গিদের বিমানটি ভূপাতিত করার দাবি নাকচ করে বলেন, কোগালিমাভিয়া এয়ারলাইনসের ভাড়া করা এয়ারবাসটি (এ-৩২১) ৩০ হাজার ফুট ওপর দিয়ে উড়ছিল। এত ওপরের কোনো বিমানকে নিচ থেকে গুলি করে ভূপাতিত করা সম্ভব নয় বলে বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে প্রযুক্তিগত ত্রুটি থাকতে পারে। কোগালিমাভিয়া এয়ারলাইনস বর্তমানে মেট্রোজেট নামে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
রাশিয়ার পরিবহনমন্ত্রী ম্যাকসিম সকলভ বলেছেন, ‘আইএসের দাবিসংক্রান্ত প্রতিবেদনটি সত্য হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। বিমানটিতে হামলা করার কোনো প্রমাণ মেলেনি। তিনি জানান, বিমানটির ‘ব্ল্যাকবক্স’ পাওয়া গেছে এবং এটি বিশ্লেষণের জন্য পাঠানো হয়েছে। মিসরের নেতৃত্বাধীন তদন্তে সহায়তা করতে একটি বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে কায়রো গেছেন সকলভ ও রাশিয়ার জরুরিবিষয়ক মন্ত্রী ভ্লাদিমির পাচকভ।
বিমান দুর্ঘটনার বিষয়ে ফ্রান্সের দুই গবেষক এবং মহাকাশ যান ও মহাশূন্য বিষয়ক ছয়জন গবেষক মিসরে এসে তদন্তে সহায়তা করবেন।
এদিকে এমিরেটাস, এয়ার ফ্রান্স ও জার্মানির লুফথানসা বিমান সংস্থা জানিয়েছে, ঘটনার বিষয়ে আরো তথ্য পাওয়ার আগ পর্যন্ত তারা সিনাইয়ের ওপর দিয়ে বিমান না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাশিয়ার বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানায়, এয়ারবাসটি সিনাইয়ের দক্ষিণের শারম আল-শেখ থেকে স্থানীয় সময় সকাল ৫টা ৫১ মিনিটে উড্ডয়ন করে। গন্তব্য ছিল রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গ। কায়রোর রাশিয়ার দূতাবাস জানায়, ‘দুর্ভাগ্যক্রমে বিমানের সব আরোহীই নিহত হয়েছে। আমরা তাদের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের প্রতি শোক জানাচ্ছি।’ বিমানটিতে ১০ মাসের কন্যাশিশু থেকে শুরু করে ৭৭ বছরের বৃদ্ধাও ছিলেন। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।