Fri. Jun 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

40খোলা বাজার২৪ ॥ সোমবার, ২ নভেম্বর ২০১৫: তন্ত্রমন্ত্রের মতো জ্যোতিষও জুড়ে গেল বিহার ভোটের প্রচারে! একতরফা তোপ বদলে গেল চাপানউতোরে। নীতীশকুমারকে জড়িয়ে, চুমু খেয়ে তান্ত্রিক বাবাজি বলছিলেন, লালু যাদব মুর্দাবাদ, নীতীশকুমার জিন্দাবাদ। ভোটের বাজারে বিজেপির এক নেতা দু’মিনিটের এই ভিডিও প্রকাশ্যে এনেছেন সম্প্রতি। ভোট প্রচারে সেটিকে সম্বল করে প্রায় রোজই নীতীশ ও লালুপ্রসাদকে বিঁধছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগেও বলেছেন। আজও বলেছেন।
এরই মধ্যে তারিখবিহীন একটি ছবি সামনে এনে মোদিকেই অস্বস্তিতে ফেলে দিলেন বেজান দারুওয়ালা। ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী হাত বাড়িয়ে রয়েছেন, অশীতিপর এই জ্যোতিষীর দিকে। ছবিটি ঝাপসা। তবে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ভবিষ্যৎ জানতে হাত দেখাচ্ছেন মোদি। দারুওয়ালার দাবি, তিনি বলেছিলেন, মোদির হাতে লেখা আছে দেশের প্রগতি ও উন্নয়ন। মোদি কবে নিজের ভবিষ্যৎ জানতে হাত দেখিয়েছিলেন, তা অবশ্য খোলাসা করেননি দারুওয়ালা।
বিহার ভোটের পঞ্চম তথা শেষ দফার ভোট বাকি। এমন একটা সময় দারুওয়ালার এই দাবি ও ছবি প্রকাশ নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এটা কি নিছকই প্রচার পাওয়ার চেষ্টা? নাকি এই তারকা-জ্যোতিষীর কোনও রাজনৈতিক অভিসন্ধিও রয়েছে?
বিজেপি সূত্রের দাবি, দারুওয়ালার জন্ম মুম্বাইয়ে হলেও গুজরাতে কাটিয়েছেন দীর্ঘদিন। সেই সূত্রে মোদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও ছিল। ২০১২ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকার মোদি তাঁর লেখা বইও প্রকাশ করেছিলেন। সেই অনুষ্ঠানে দারুওয়ালাই তাঁর হাত টেনে নিয়ে দেখতে শুরু করেন। মোদি ভবিষ্যৎ জানতে হাত দেখিয়েছেন, বিষয়টি আদৌ এমন নয়। বিজেপি এ কথা বললেও বিহার ভোটের একেবারে শেষ লগ্নে এই ছবি প্রচার যুদ্ধে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।
তান্ত্রিকের সঙ্গে নীতীশের ভিডিও ‘ভাইরাল’ হওয়ার পর থেকেই লালু-নীতীশরা বলতে শুরু করেছিলেন, মোদি তা হলে বলুন, তিনি কোনও সাধুবাবার কাছে যাননি। বিজেপি কি ধর্মকর্ম থেকে দূরে চলে গেল নাকি? কিন্তু মোদিকে তাতে থামানো যায়নি। আজও মোদি বিহারে মধুবনিতে এক সভায় তন্ত্রমন্ত্রের প্রসঙ্গে নীতীশকে বিঁধেছেন। মোদির কটাক্ষ, ‘‘যাঁরা গণতন্ত্রে আস্থা রাখেন না, মানুষের উপরে আস্থা হারিয়েছেন, তাঁরাই এখন ‘যন্তর-মন্তর’ (কালা জাদু) করেন। আঠারোশো শতকের তন্ত্র-মন্ত্র দিয়ে কি বিহারে বিদ্যুৎ, জল, রোজগার, শিক্ষা আসবে? নীতীশবাবু বুঝতে পেরেছেন, তিনি হারছেন। তাই তন্ত্র-মন্ত্রই তাঁর শেষ ভরসা।’’ লালুকেও আক্রমণ করে মোদি বলেন, ‘‘জঙ্গলরাজের দুই ভাই এখন যন্তর-মন্তররে। তাঁরা দু’জনে মিলে বিহারকে আরও ডুবিয়ে দেবেন।’’
নীতীশের ভিডিও নিয়ে মোদি যখন এ ভাবে আক্রমণ শানাচ্ছেন, সেই সময় বিরোধী শিবিরও দারুওয়ালা-মোদির এই ছবি নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেছেন। জেডি(ইউ)-র এক নেতা আজ বলেন, ‘‘এত দিন নীতীশকে একতরফা আক্রমণ করে যাচ্ছিলেন মোদি। এ বারে প্রধানমন্ত্রী কী জবাব দেবেন? ওই নেতাটির কটাক্ষ, নীতীশ না হয় ভবিষ্যৎ জানতে ‘বাবা’র কাছে গিয়েছিলেন, কিন্তু এখন তো দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংশয়ে। তিনিও হাত দেখিয়ে নিজের ভাগ্য পরখ করে দেখতে চাইছেন। কিন্তু বিহারের মানুষ বিজেপির এই ফাঁদে পা দেবেন না। তাঁরা স্থির করে ফেলেছেন, সরকারে কাকে দেখতে চান।
মোদির ছবি নিয়ে পাল্টা কটাক্ষ করলেও এ নিয়ে তেড়েফুঁড়ে নামার আগে বিজেপি-বিরোধীদের ভাবতে হচ্ছে, এতে আদৌ কতটা লাভ হবে। কারণ, বিহারে মাত্র এক দফার ভোট বাকি। তা ছাড়া, রাজনাথ সিংহ, স্মৃতি ইরানি-সহ মোদি মন্ত্রিসভার অনেকেই অতীতে জ্যোতিষীর কাছে গিয়েছেন। তা নিয়ে হইচই হলেও, বিজেপির সমর্থন-ভিতে সে সব কতটা আঁচ ফেলেছে, তা স্পষ্ট নয়। আছে অন্য ভয়ও। যে কারণে কিছুটা সমঝে চলতে চাইছেন মহাজোটের নেতারা। তা হল, বিভিন্ন সময়ে অনেক নেতাই জ্যোতিষীর কাছে গিয়েছেন। এক বার আক্রমণ শুরু করলে ঝুলি থেকে কার কার ছবি বেরিয়ে পড়বে কে জানে