খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০১৫: রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের জনসভায় অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের মিছিলের কারণে যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে রাজধানী ঢাকা। এই যানজটের কারণে রাজধানীর ওয়ারী ও শ্যামলী থেকে দুই রোগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তাদের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।
মেয়ের কাঁধেই বাবার মৃত্যু
সোমবার দুপুর ২টার দিকে ওয়ারীর আরকে মিশন রোড এলাকায় হৃদরোগে আক্তান্ত হন এনামুল হক (৬০)। তাকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে বাসা থেকে দ্রুত ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে ছোটেন মেয়ে এলিনা আক্তারসহ স্বজনরা।
যানজট ঠেলে কোনোমতে গুলিস্তান পর্যন্ত পৌঁছান তারা। সোহরাওয়ার্দীগামী মিছিলের পর মিছিলের কারণে সৃষ্ট যানজটে গুলিস্তানেই কেটে যায় আড়াই ঘণ্টা। শেষমেশ নিরূপায় হয়ে ফুটপাত দিয়ে বাবাকে কাঁধে-কোলে করে ঢামেক হাসপাতালে ছোটেন মেয়ে এলিনা ও আত্মীয়রা। ফুটপাতেও ছিল মানুষের প্রচণ্ড ভিড়। কোনরকমে ভিড় ঠেলে বিকেল সোয়া ৫টায় তারা পৌঁছান হাসপাতালে। দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার জানান, কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগেই তার মৃত্যু হয়েছে এনামুল হকের।
মেয়ে এলিনা আক্তার বলেন, ‘বাসা থেকে দুপুর ২টার দিকে একটি সিএনজি নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে রওনা হই। কিন্তু বাসা থেকে কিছু দূর এসে গুলিস্তানে যানজটে পড়ি। পুরো রাস্তাজুড়ে জ্যাম। সেখানেই আড়াই ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। শেষ পর্যন্ত তাকে সিএনজি থেকে নামিয়ে আমরা কাঁধে, কখনো কোলে করে নিয়ে হাসপাতালে রওনা দিই। কারা যেনো বিশাল মিছিল বের করছে। তাদের কারণে রাস্তায় গাড়ি চলা বন্ধ হয়ে যায়। সব মানুষ ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে। সেই ভিড় ঠেলে বিকেল সোয়া ৫টায় হাসপাতালে আসলে ডাক্তাররা বাবা আর নেই বলে জানায়।’
এলিনা আক্তার বলেন, ‘জ্যামের কারণেই আমার বাবাকে বাঁচাতে পারলাম না। গাড়ি চলা বন্ধ করে যারা রাস্তায় মিছিল বের করেছে তাদের কারণেই চিকিৎসা না পেয়ে বাবাকে মরতে হল। তারা আমার বাবাকে বাঁচাতে দিল না। হাসপাতালে ঠিক সময় নিয়ে যেতে পারলে আমরা বাবাকে বাঁচাতে পারতাম।’
ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ফিরোজ আহমেদ হৃদরোগে আক্রান্ত এনামুল হককে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, হাসপাতালে নিয়ে আসার কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
মিছিলে এ্যাম্বুলেন্স যেতে বাধা, স্ট্রেচারে নিতে নিতেই মৃত্যু
এদিকে শ্যামলীর রিং রোডে লেগুনার ধাক্কায় দুপুর ১২টার দিকে আব্দুল (২৫) নামে এক যুবক আহত হন। তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যান চাচাতো ভাই মাহফুজুল আলমসহ কয়েক প্রত্যক্ষদর্শী। সেখানে অবস্থা গুরুতর দেখে প্রাথমিক ব্যান্ডেজ শেষে তাকে দ্রুত ঢামেক হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসকরা। কিন্তু যানজটের কারণে ঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারায় মৃত্যুর অভিযোগ তোলা হয়েছে।
চাচাতো ভাই মাহফুজুল আলম বলেন, পঙ্গু হাসপাতালে শুধু ব্যান্ডেজ করে দিয়ে ডাক্তাররা তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলেন। আমরা সাথে সাথে একটা এ্যাম্বুলেন্সে করে ভাইরে (আব্দুল) নিয়ে রওনা হই। কিন্তু রাস্তায় গাড়ি চলা বন্ধ করে একটার পর একটা মিছিল। যানজটের কারণে সেখান থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত আসতে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় চলে যায়। কিন্তু মিছিলের কারণে এরপর আর আমাদের এ্যাম্বুলেন্স সামনে যেতে দেয় নাই। পরে বাধ্য হয়ে আমরা রোগীকে একটা স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে রওনা হই। ফুটপাতে মানুষের ধাক্কায় কয়েকবার আমরা রোগীসহ পড়েও গেছি। বিকেল চারটার সময় তাকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছলে ডাক্তার এসে জানায়, সে মারা গেছে।’
মাহফুজুল আলম বলেন, ‘রাস্তা বন্ধ করে কিসের মিছিল? এভাবে কারা মিছিল করে, সরকার এগুলো দেখে না? মিছিলের কারণে এভাবে কেন একটা রোগী মারা গেল? এই মিছিলের কারণেই আমার ভাইটা মারা গেলো।