খোলা বাজার২৪ ॥ মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর ২০১৫: ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার জন্য দেশবাসীর জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে এই অভিযোগ জানান। কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, সহসভাপতি রাহুল গান্ধী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংসহ দলের শতাধিক শীর্ষ নেতা সংসদ ভবন থেকে হেঁটে রাষ্ট্রপতি ভবনে যান।
কংগ্রেস নেতারা রাষ্ট্রপতিকে একটি স্মারকলিপি দেন। তাঁরা অনুরোধ করেন, ধর্মের নামে দেশকে ভাগ করার চেষ্টা চলছে। ভয়, ভীতি ও অসহিষ্ণুতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এই অপচেষ্টা বন্ধে ও সরকারের শুভবুদ্ধির উদয়ে রাষ্ট্রপতি যেন তাঁর সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।
রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বেরিয়ে সোনিয়া বলেন, এখন দেশে যা চলছে, তা বিজেপির একটা সুচিন্তিত রণনীতি, যার উদ্দেশ্য দেশের বহুত্ববাদী চরিত্র নষ্ট করে দেওয়া। রাহুল গান্ধী বলেন, এত ঘটনা ঘটছে, এত মানুষ তাঁদের পুরস্কার ফেরত দিচ্ছেন, অথচ প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর অর্থমন্ত্রী এমন ভাব দেখাচ্ছেন যেন কোথাও কিছু হচ্ছে না!
শাসক দল বিজেপি অবশ্য কংগ্রেসের এই পদযাত্রাকে আমল দিতে চাইছে না। পদযাত্রার কয়েক ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বরং প্রশ্ন করেছেন, কোথায় অসহিষ্ণুতা? এ দেশ কোনো দিন অসহিষ্ণু হয়নি, হবেও না। তিনি বলেন, দেশে শান্তি রয়েছে। ছোটখাটো দু-একটি ঘটনা নিয়ে এমন বাড়াবাড়ি করা উচিত নয়।
অসহিষ্ণুতা নিয়ে কংগ্রেসের সক্রিয়তার মোকাবিলা বিজেপি দুভাবে করছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৯৮৪ সালের দিল্লি দাঙ্গার জন্য কংগ্রেসকে সরাসরি দায়ী করে গতকাল বলেছেন, ওদের মুখে অসহিষ্ণুতার অভিযোগ শোভা পায় না। কংগ্রেসিদের লজ্জায় ডুবে মরা উচিত। এরই রেশ ধরে এক দল শিখ আজ পদযাত্রার সময়ই সংসদ ভবনের একধারে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখায়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, রাজীব গান্ধীই ওই দাঙ্গার জন্য দায়ী। তাঁর ভারতরতœ খেতাব কেড়ে নেওয়া হোক।
বিজেপির এই আক্রমণের জবাবে কংগ্রেসের সাবেক মন্ত্রী সালমান খুরশিদ বলেন, ‘৮৪ সালের দাঙ্গার জন্য কংগ্রেস একাধিকবার দুঃখ প্রকাশ করেছে। ক্ষমা চেয়েছে। বিজেপি কি তা জানে? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশজোড়া হিংসাত্মক ঘটনার নিন্দা একবারের জন্যও এখনো করেননি।
কংগ্রেসের বিরুদ্ধে পাল্টা বিক্ষোভ যদি মোকাবিলার একটা দিক হয়, অন্যদিকটা তা হলে দুর্নীতি নিয়ে সোনিয়া-রাহুল-রবার্টকে তোপ দাগা। বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র সরাসরি এই অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ পত্রিকা এবং হরিয়ানায় জমি কেনা-বেচা নিয়ে গান্ধী পরিবার দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। অসহিষ্ণুতা নিয়ে কংগ্রেস এত সরব, কারণ তারা তদন্তে বাধা দিতে চায়।
এই বিতর্কের মধ্যেই অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন শাহরুখ খান, শর্মিলা ঠাকুর, অপর্ণা সেন, আমজাদ আলি, ইরফান হাবিব, কামাল হাসানের মতো শিল্পীরা। শাহরুখ বলেছেন, ‘আগপাছ না ভেবেই লোকে গুজব ছড়াচ্ছে। এ দেশে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়াই সবচেয়ে বড় অপরাধ। দেশে চরম অসহিষ্ণুতার আবহ সৃষ্টি হয়েছে। এমন চলতে থাকলে আমরা কিছুদিনের মধ্যেই অন্ধকার যুগে ফিরে যাব।